Thursday, July 9, 2015

সামবেদ-সংহিতা – মহানাম্নী আর্চিক

ঋষি প্রজাপতি।। দেবতা ত্রৈলোক্য-আত্মা ইন্দ্র।। মন্ত্রসংখ্যা ১০।।

মন্ত্রঃ-
(৬৪১)  বিদা মঘবন্‌ বিদা গাতুমনুশংসিষো দিশঃ।
        শিক্ষা শচীনাং পতে পূর্বাণাং পুরুবসো।।১।।
(৬৪২)  আভিষ্ট্রমভিষ্টিভিঃ স্বাহতর্ন্নাংশুঃ।
        প্রচেতন প্রচেতয়েন্দ্র দ্যুম্নায় ন ইষে।।২।।
(৬৪৩)  এবা হি শক্রো রায়ে বাজায় বজ্রিবঃ।
        শবিষ্ঠ বজ্রিন্নুঞ্জস মংহিষ্ঠঃ বজ্রিন্নুঞ্জস।
আ যাহি পিব মৎস্ব।।৩।।
(৬৪৪)  বিদা রায়ে সুবীর্যং ভুবো বাজানাং পাতবশাঁ অনু।
        মঙ্ঘিষ্ঠ বজ্রিন্নুঞ্জসে যঃ শবিষ্ঠঃ শূরানাম্‌।।৪।।
(৬৪৫)  যো মংহিষ্ঠো মধোনামংজুর্ন্ন শোচিঃ।
        চিকিত্বো অভি নো নযেন্দ্রো বিদে তমু স্তুহি।।৫।।
(৬৪৬)  ঈশে হি শক্রোস্তমূতয়ে হবামহে জেতারমপরাজিতম্‌।
        স নঃ স্বর্ষদতি দ্বিযঃ ক্রতুশ্ছন্দ ঋতং বৃহৎ।।৬।।
(৬৪৭)  ইন্দ্রং ধনস্য সাতয়ে হবামহে জেতারমপরাজিতন্‌।
        স নঃ স্বর্ষদতি দ্বিষঃ স নপ স্বর্ষদতি দ্বিষঃ।।৭।।
(৬৪৮)  পূর্বস্য যত্তে অদ্রিবোংশুর্মদায়।
        সুম্ন আ ধেহি নো বসো পূর্তিঃ শবিষ্ঠ শস্যতে।
        বশী হি শক্রো নূনং তন্নব্যং সন্যসে।।৮।।
(৬৪৯)  প্রভো জনস্য বৃত্রতন্‌ৎসমর্যেষু ব্রবাবহৈ।
        শূরো যো গোষু গচ্ছতি সখা সুশেবো অদ্বযুঃ।।৯।। (পঞ্চ পুরীষদপদ)
(৬৫০)  এবাহ্যেহতহতহতব। এবা হ্যগ্নে। এবাহীন্দ্র।
        এবা হি পূষন্‌। এবা হি দেবাঃ ওঁ এবাহি দেনাঃ।।১০।।

অনুবাদঃ (৬৪১) হে মহাধন, তুমি সর্বজ্ঞ; তুমি আমাদের স্তুতি জান; আমাদের সৎমার্গ প্রদর্শন কর। হে বহুধন, হে হবু কর্মের অধিপতি, আমাদের ধন দান কর।। (৬৪২) হে ইন্দ্র, হে প্রশস্ত জ্ঞানযুক্ত, তুমি আমাদের ভক্তিভাব জান। তুমি অন্ন ও ধনলাভের নিমিত্ত হও; আমাদের প্রার্থনা শোন। (৬৪৩) হে বজ্রধারী ইন্দ্র, ধন ও অন্নদানে তোমার প্রসাদ আমাদের ওপর নেমে আসুক। হে দেব, হে বলিষ্ঠ, হে বজ্রী, সম্পদ লাভের দ্বারা আমাদের সমৃদ্ধ কর। হে মহান দাতা, সোমপানের জন্য এস; সোমপানে হৃষ্ট হও।। (৬৪৪) হে বজ্রী, ধন রক্ষার জন্য সুবীর্য দান কর। তুমি অন্নবলের অধিপতি, আমাদের কামনা জেনে, হে মহান দাতা, হে বজ্রী, হে বলীয়ানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলশালী, আমাদের অতিদানে সমৃদ্ধ কর।। (৬৪৫) যিনি ধনসমূহের শ্রেষ্ঠদাতা, যিনি আদিত্যের ন্যায় দীপ্তি, সেই সর্বজ্ঞ ইন্দ্রকে আরাধনা কর। হে জ্ঞানবান ইন্দ্র, আমাদের লক্ষ্য করে ধন আন।। (৬৪৬) সেই জাতা, অপরাজিত, দেব ঈশ্বরকেই আমাদের রক্ষার জন্য আহ্বান করি। তিনি আমাদের রিপু বিনাশ করে আমাদের কর্ম, ছন্দ, প্রভূত বারি সম্পদ দান করুন।। (৬৪৭) জেতা ও অপরাজিত ইন্দ্রকে ধনলাভের জন্য আহ্বান করি। তিনি আমাদের দ্বেষ নাশ করুন, আমাদের রিপু নাশ করুন।। (৬৪৮-৬৪৯) হে মেঘবিদারক ইন্দ্র, তোমার যে চিরায়ত ধন, তোমার মত্ততার জন্য যে সোমরস আছে, তা আমাদের দাও। হে নিবাসপিদ, আমাদের সুখ দাও। হে বলিষ্ঠ, তোমার পূর্ণ দান সকলেই চায়, কারণ তুমি সর্বনিয়ন্তা, শক্তিমান। হে প্রভু, হে বৃত্রহন্তা, হে চিরনূতন, তুমি ও আমি অবশ্যই সৎকর্মে ও সদালাপে নিযুক্ত থাকবো। যে ইন্দ্র অন্ন-বাক্‌-জল দানে সমর্থ, তিনিই সখা, শোভন সুখকর, কেবল সত্যস্বরূপ (=মনে ও মুখে এক)।। (৬৫০) হে অগ্নি, তুমি এইরূপই (=তোমার প্রশংসা বা গুণ এইরূপ)। হে ইন্দ্র, তুমিও এইরূপ; হে পূষন্‌, তুমিও এইরূপ; হে দেবগণ, তোমরাও এইরূপ; হে দেবগণ, তোমরাও এইরূপ।।

।।মহানাম্নী আর্চিক সমাপ্ত।। 

সামবেদ-সংহিতা – আরণ্যক কাণ্ড – ষষ্ঠ অধ্যায়

প্রথম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ৯।। দেবতা ১-৩ ইন্দ্র, ৪ বরুণ, ৫।৭।৮ পবমান সোম, ৬ বিশ্বদেবগণ, ৯ অন্ন।। ছন্দ ১ বৃহতী, ২।৯ ত্রিষ্টুপ, ৩।৭।৮ গায়ত্রী, ত্রিষ্টুপ অথবা চতুস্পদা গায়ত্রী, ৬ একপাৎ জগতী বা গায়ত্রী।।

মন্ত্রঃ-
(৫৮৬)  ইন্দ্র জ্যেষ্ঠং ন আ ভর অজিষ্ঠং পুপুরি শ্রবঃ।
যদ্‌ দিধূক্ষেম বজ্রহস্ত রোদসী উভে সুশ্রিপ্র পপ্রাঃ।।১।।
(৫৮৭) ইন্দ্রো রাজা জগতশ্চর্ষণীনাম-ধিক্ষমা বিশ্বরূপং যদস্য।
ততো দদাতি দাশুষে বসুনি চোদদ্রাধ উপস্তুতং চিদর্বাক্‌।।২।।
(৫৮৮) যস্যেদমা রজোষুজস্তুজে জনে বং স্বঃ। ইন্দ্রস্য রন্ত্যং বৃহৎ।।৩।।
(৫৮৯)  উদুত্তমং বরুণ পাশমস্মদবাধমং বি মধ্যমং শ্রথায়।
অথাদিতা ব্রতে বয়ং তবানাগসো অদিতয়ে স্যাম।।৪।।
(৫৯০)  ত্বয়া বয়ং পবমানেন সোম ভরে কৃতং বি চিনুয়াম শশ্বৎ।
তন্নো মিত্রো বরুণো মামহন্তামদিতিঃ সিন্ধুঃ পৃথিবী উত দ্যৌঃ।।৫।।
(৫৯১)  ইমং বৃষণং কৃণুতৈকমিন্‌ মাম্‌।।৬।।
(৫৯২)  স ন ইন্দ্রায় যজ্যবে বরুণায়ঃ মরুদ্‌ভ্যঃ। বারিবোবিৎ পরি স্রব।।৭।।
(৫৯৩)  এনা বিশ্বান্যর্য আ দ্যুম্নানি মানুষ্যণাম্‌। সিষাসন্তো বনামহে।।৮।।
(৫৯৪)  অহমস্মি প্রথমজা ঋতস্য পূর্বং দেবেভ্যো অমৃতস্য নাম।
যো মা দদাতি স ইদেবমাবদমন্নমদন্তমস্মি।।৯।।

অনুবাদঃ (৫৮৬) হে উদকবান বজ্রহস্ত ইন্দ্র, তুমি যে অন্নের দ্বারা দ্যু ও পৃথিবী উভয়কে ধারণ করে রেখেছ আমাদের কাছে সেই উত্তম বলকর পুষ্টিকর অন্ন আন।। (৫৮৭) ইন্দ্র জগতের রাজা, মানুষের রাজা; পৃথিবীতে যে বিশ্বরূপ প্রকটিত তাও তাঁর। তাঁকে যিনি দান উৎসর্গ করেন; ইন্দ্র তাঁকে ধন প্রদান করেন; তিনি স্তুত হলে ধন প্রেরণ করেন।। (৫৮৮) যে ইন্দ্রের বিপুল আনন্দদায়ক জল ও তেজ এই সমস্ত যা কিছু হয়েছে তা ইন্দ্রের জ্যোতিযুক্ত বজ্রের দ্বারা জাত হয়েছে।। (৫৮৯) হে বরুণ, আমাদের উপরের পাশ খুলে দাও, নীচের পাশ খুলে দাও, কটিদেশে বন্ধ হয়ে খুলে দাও। তারপর হে আদিত্য, অমৃতরসাস্বাদের জন্য আমরা প্রমাদ রহিত হয়ে তোমার কর্মে নিযুক্ত থাকবো।। (৫৯০) হে সোম, তোমার ক্ষরণের দ্বারা কৃত যে জল তা আমরা সংগ্রহ করি; আমরা যেন চিরকালই তা সংগ্রহ করতে পারি। সুতরাং মিত্র, বরুণ, আদিতি, সিন্ধু, পৃথিবী এবং দ্যুলোক আমাদের পূজা গ্রহণ করুন।। (৫৯১) হে সোমধারা, তোমরা আমাকেও তোমাদের মতই বর্ষণশীল কর।। (৫৯২) হে ঈশ্বর, তোমার এই সকল বিশ্বধন মানুষদের। আমরা তোমার সেবা করতে ইচ্ছুক, আমরা এই বিশ্বধন কামনা করি।। (৫৯৪) আমি জলরূপে জাত হবার পূর্বে সর্বপ্রথমে দেবগণের জন্য অমৃতবারিরূপে জাত হয়েছিলাম। যিনি আমাকে দান করেন তিনিই এরূপ বলছেন আমিই অন্ন, আমিই অন্ন, আমিই অদন্ত অন্ন।।

দ্বিতীয় খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ৭।। দেবতা, ১। ৩। ৪। ৭ ইন্দ্র, ২ পাবমান সোম, ৫ বিশ্বদেবগণ, ৬ বায়ু।। ছন্দ ১। ৩। ৪। ৬ গায়ত্রী, ২ জগতী, ৫ ত্রিষ্টুপ, ৭ অনুষ্টুপ।। ঋষি ১ শ্রুতকক্ষ আঙ্গিরস, ২ পবিত্র আঙ্গিরস, ৩। ৪ মধুছন্দা বৈশ্বামিত্র, ৫ প্রথ বাসিষ্ঠ, ৬ গৎসমদ শৌনক, ৭ নৃমেধ ও পুরুমেশ আঙ্গিরস।।

মন্ত্রঃ-
(৫৯৫) ত্বমেরদধারয়ঃ। কৃজ্ঞাসু রোহিণীষু চ।। পরষ্ণীষু রুষৎ পয়ঃ।।১।।
(৫৯৬)  অরুরুচসুষসঃ পৃশ্নিরগ্রিয় উক্ষা মিমেতি ভুবনেষু বাজযুঃ।
মায়াবিনো মমিরে অস্য মায়য়া নৃচক্ষসঃ পিতরো গর্ভমাদধুঃ।।২।।
(৫৯৭)  ইন্দ্র ইদ্ধর্যোঃ সচা সস্মিশ্র আ বচোষুজা। ইন্দ্রো বজ্রী হিরণ্যয়ঃ।।৩।।
(৫৯৮)  ইন্দ্র রাজেষু নোহব সহস্রপ্রধনেষু চ। উগ্র উগ্রাভিরুতিভিঃ।।৪।।
(৫৯৯)  প্রথশ্চ যস্য সপ্রথশ্চ নামানুষ্টুভস্য হবিষো হবির্ষৎ।
ধাতুর্দ্যুতানাৎসবিতুশ্চ বিষ্ণো রথস্তরমাজভারা বসিষ্ঠঃ।।৫।।
(৬০০)  নিযুত্বান্‌ বায়বা গহ্যয়ং শুক্রো অয়াভি তে। অন্তাসি সুন্বতো গৃহম্‌।।৬।।
(৬০১)  যজ্জায়তা অপূর্ব্য মঘবন্‌ বৃত্রহত্যায়। তৎ পৃথিবীমপ্রথয়স্তদস্তভ্‌না উতো দিবম্‌।।৭।।

অনুবাদঃ (৫৯৫) হে ইন্দ্র, এই উজ্জ্বলবর্ণবিশিষ্ট জলকে তুমি কৃষ্ণবর্ণা, লোহিতবর্ণা ও কুটিলাগামিনী নদীসমূহে স্থাপন করেছ।। (৫৯৬) সূর্যোদয়ের পূর্বে ঊষার আলোক প্রকাশিত হলে (=অতি প্রত্যুষে) হিমকণারূপ উদক ক্ষরিত হয়; অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন দর্শনকারী মাধ্যমিক দেবগণ (=আকাশের মধ্যে অবস্থিত পিতৃগণ নামে অভিহিত রশ্মিগণ) সর্বতোভাবে অন্নের গর্ভ স্থাপন করেন।। (৫৯৭) ইন্দ্রই উদক ও বিদ্যুতের সম্যক্‌ মিশ্রণকর্তা (=উদক ও বিদ্যুতের মিশ্রণক্রিয়া থেকে বৃষ্টি হয়); তাঁর ইচ্ছামাত্রই রশ্মিগণ যুক্ত হয়। ইন্দ্র বজ্রধারী ও হিরণ্ময়।। (৫৯৮) হে ইন্দ্র, তুমি উগ্র (=উগ্রকার্যের দ্বারা কর্মকে মিলিত করে থাক); তোমার উগ্রতারূপ সকলপ্রকার রক্ষণ শক্তির দ্বারা অন্নে ও সহস্র ধনে আমাদের রক্ষা কর।। (৫৯৯) যার নাম প্রথ ও সপ্রথ (=যা অতিবিস্তৃত বলে পরিচিত) যা অনুষ্টুভের হবির হবি সেই রথন্তর সামগানকে ধাতা, সবিতা ও বিষ্ণুর তেজ হতে বসিষ্ঠ আহরণ করলেন।। (৬০০) হে বায়ু, তুমি নিষুতগণকে নিয়ে এস; এই উজ্জ্বল সোমরস তোমার জন্য। তুমি সোম অভিষবকারীর গৃহে যাও।। (৬০১) হে অপূর্ব মঘবান ইন্দ্র, তুমি মেঘহননের জন্য যখন জন্মেছ তখন পৃথিবীকে প্রথিত করেছ আর দ্যুলোককে স্তব্ধ করেছ।।

তৃতীয় খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১৩।। দেবতা ১ প্রজাপতি, ২। ৩ সোম, ৪। ৫। ৮। ১৩ অগ্নি, ৬ অপাংনপাৎ, ৭ রাত্রি, ৯ বিশ্বদেবগণ; ১০ লিঙ্গোক্ত, ১১ ইন্দ্র ১২ আত্মা বা অগ্নি।। ছন্দ ত্রিষ্টুপ, ১। ৭ অনুষতুপ, ৪ গায়ত্রী, ৮। ৯ জগতী, ১০ মহাপঙক্তি।। ঋষি ১। ৫। ৭। ১০ বামদেব গৌতম, ২। ৩ গৌতম রাহুগণ, ৫ মধুচ্ছন্দা বৈশ্বামিত্র, ৬ গৃৎসমদ্‌ শৌনক, ৮ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, ৯ ঋজিশ্বা ভারদ্বাজ, ১১ হিরণ্যস্তুপ আঙ্গিরস, ১২। ১৩ বিশ্বামিত্র গাথিন।।

মন্ত্রঃ-
(৬০২)  মহি বর্চো অথৌ যশহথো যজ্ঞস্য যৎ পয়ঃ। পরমেষ্ঠী প্রজাপতি র্দিবি দ্যামিব দৃংহতু।।১।।
(৬০৩)  সং তে পয়াংসি সমু যন্তু বাজাঃ সং বৃষ্ণয়ান্যভিমাতিষাহঃ।
আপ্যায়মাণ অমৃতায় সোম দিবি শ্রবাংস্যুত্তমানি ধিষ্ব।।২।।
(৬০৪)  ত্বমিমা ওষধী; সোম বিশ্বাস্তমপো অজনয়স্তৎ গাঃ।
ত্বমাত্নোরুর্বাহন্তরিক্ষং ত্বং জ্যোতিষা বি তমো ববর্থ।।৩।।
(৬০৫)  অগ্নিমীলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্‌। হোতারং রত্নধাতম।।৪।।
(৬০৬)  তে মন্বত প্রথমং গোনাং ত্রিঃ সপ্ত পরমং নাম জানন্‌।
তা জানতীরভানুষত ক্ষা আবির্ভূবন্নরুনীর্যশস্য গাবঃ।।৫।।
(৬০৭)  সমন্যা যন্ত্যুপয়ন্তান্যাঃ সমানমূর্বং নদ্যস্পৃণন্তি।
তমু শূচিং শুচয়ো দীদিবাংসমপান্নপাতমুপ যন্ত্যাপঃ।।৬।।
(৬০৮)  আ প্রাগাদ ভদ্রা যুবতিরহ্বঃ কেতুন্‌ৎসমীৎর্সতি।
অভূদ্‌ ভদ্রা নিবেশনী বিশ্বস্য জগতো রাত্রী।।৭।।
(৬০৯)  প্রক্ষস্য বৃষ্ণো অরুষস্য নূ মহঃ প্র নো বগচো বিদথা জাতবেদসে।
বৈশ্বানরায় মলির্নব্যসে শুচিঃ সোম ইব পবতে চারুরগ্নয়ে।।৮।।
(৬১০)  বিশ্বে দেবা মম শৃন্বন্তু যজ্ঞমুভে রোদসী অপাং নপাচ্চ মম্ন।
মা বো বচাংসি পরিচক্ষ্যণি বোচং সুম্নেষ্বিদ্‌ বো অন্তমা মদেম্‌।।৯।।
(৬১১)  যশো মা দ্যাবাপৃথিবী যশ্যে মেন্দ্রবৃহস্পতী।
যশো ভগস্য বিন্দতু যশো মা প্রতিমুচ্যত্যম্‌ যশসাত স্যাঃ সংসদোহহম্‌ প্রবদিতা স্যাম্‌।।১০।।
(৬১২)  ইন্দ্রস্য নু বীর্যাণি প্রবোচং যানি চকার প্রথমানি বজ্রী।
        অহন্নহিমন্বপস্ততর্দ প্র বক্ষণা অভিনৎ পর্বতানাম্‌।।১১।।
(৬১৩)  অগ্নিরশ্মি জন্মনা জাতবেদা ঘৃতং মে চক্ষুরমতৃং ম আসন্‌।
        ত্রিধাতুরর্কো রজসো বিমানোহজস্রং জ্যোতির্হাবরশ্মি সর্বম্‌।।১২।।
(৬১৪)  পাত্যাগ্নির্বিপো অগ্রং পদং বেঃ পাতি যহ্বশ্চরং সূর্যস্য।
        পাতি নাভা সপ্তশীর্ষানমগ্নিঃ পাতি দেবানামুপমাদমৃম্বঃ।।১৩।।

অনুবাদঃ (৬০২) যজ্ঞসাধনভূত যে অন্ন, বল ও জল আমাতে আছে তা পরমেষ্ঠী প্রজাপতি দ্যুলোক আকাশের মত ধারণ করুন। (৬০৩) হে সোম, তোমার জলরাশি অন্ন বীর্য বর্ধন করুক ও অপশক্তি নাশ করুক; তুমি অমরত্বের জন্য বৃদ্ধিলাভ করে দ্যুলোকে উত্তম অন্ন ধারণ কর। (৬০৪) হে সোম, তুমি সকল ওষধী, জলরাশি ও পশুদের সৃষ্টি করেছ; তুমি জ্যোতির দ্বারা তমোনাশ করে বিশাল আকাশকে আরও বিস্তৃত করেছ। (৬০৫) অগ্নিকে আমি পূজা করি, তিনি যজ্ঞের পুরোহিত, ঋত্বিক্‌, হোতা এবং অতি উৎকৃষ্ট ধনদাতা। (৬০৬) তাঁরা (সপ্ত ঋষিগণ বা রশ্মিগণ) প্রথমে তিনলোকে গোরশ্মিসমূহের নমন অনুমোদন করলেন এবং সপ্তলোকে রশ্মিগণের উৎকৃষ্ট নমন বিষয়ে জানলেন। ঊষাকালে সেই দীপ্ত অরুণবর্ণা রশ্মিগণ উদকের সঙ্গে আবির্ভূত হয়ে পৃথিবীকে স্তব করেছিলেন। (৬০৭) সমানভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জল একে অন্যের সঙ্গে মেশে; সমান ভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সমুদ্রকে নদীসমূহ প্রীত করে। সেই নির্মল জলরাশি শুচি ও দীপ্যমান অপাং নপাৎ (=অগ্নি) দেবতা অভিমুখে গমন করে। (৭০৮) কল্যাণময়ী ঊষা সর্বপ্রথমে উচ্চাকাশে দিনের আলো প্রেরণ করে প্রজ্ঞা সৃষ্টি করেন; কল্যাণী রাত্রি দেবী জগতের সকলপ্রাণীর সুখের আশ্রয় স্বরূপা। (৬০৯) সর্বব্যাপী, বর্ষণকারক, দীপ্তিমান, মহান জাতবেদা অগ্নির উদ্দেশে এই জ্ঞানময় স্তুতি করছি। বিশ্বের প্রিয় বৈস্বানর অগ্নির উদ্দেশে এই নবীন শূচি স্তোত্র সোমের (=জলের মত) নির্গত হচ্ছে। (৬১০) বিশ্বদেবগণ (=সকল রশ্মিগণ), দ্যুলোক ও পৃথিবী উভয়ে এবং অপাং নপাৎ অগ্নি (=জলের রক্ষক বা জলের পৌত্র অগ্নি) আমার এই বুদ্ধিপূর্বক রচিত স্তোত্র শ্রবণ কর। তোমরা আমার এই স্তোত্র বর্জন কোরো না; তোমাদের আনন্দের মধ্যে বাস করে আমরাও হৃষ্ট হবো। (৬১১) দ্যুলোক ও পৃথিবী আমাকে যশ (=অন্ন, জল ও সম্পদ) দান করুন, ইন্দ্র ও বৃহস্পতি যশ দান করেন; ভগদেবতার (=সূর্যের) যশ আমি যেন প্রাপ্ত হই; যশ আমাকে সুপ্রকাশিত করুক। যশের সহায়ে আমি সভাতে যেন সুবক্তা হই। (৬১২) ইন্দ্রর বিরত্বব্যঞ্জক কর্মসমূহ এখনই বলছি। যে কর্মসমূহ বজ্রধারী ইন্দ্র প্রথম থেকেই করে আসছেন। তিনি মেঘকে হনন করেন; পরে বারিরাশিকে ভূমিতে পাতিত করেন; এবং পর্বত ভেদ করে নদীসমূহকে প্রবাহিত করেন। (৬১৩) আমি অগ্নি, আমি জন্ম থেকেই জ্ঞানযুক্ত, ঘৃত (বা জল) আমার চক্ষু, অমৃত আমার মুখে। আমিই তিন লোক ধারণ করে আছি; আমিই ঋক্‌, আমি অন্তরিক্ষের পরিমাপকারী, আমিই অজস্র জ্যোতি; আমিই সকল হবি (=অন্ন বা জল)। (৬১৪) বিপ্র অগ্নি রক্ষাকর্তা; তিনি প্রথমে গমনশীল সূর্যের বিচরণস্থল আকাশকে রক্ষা করেন এবং প্রাণবায়ু মরুদ্‌গণকে রক্ষা করেন। মহান অগ্নি দেবগণের হর্ষকেও রক্ষা করেন।

চতুর্থ খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১২।। দেবতা ১।২ অগ্নি, ৩-৭ পুরুষ, ৮ দ্যাবাপৃথিবী, ৯-১১ ইন্দ্র, ১২ গোগণ (=রশ্মিগণ)।। ছন্দ অনুষ্টুপ, ১-২ পঙ্‌ ক্তি, ৮।১১।১২ ত্রিষ্টুপ।।

মন্ত্রঃ-
(৬১৫)  ভ্রাজন্ত্যগ্নে সমিধান দীদিবো জিহ্বা চরত্যন্তরাসনি।
স ত্বং নো অগ্নে পয়সা বসুবিদ্‌ রয়িং বর্চো দৃশেহদাঃ।।১।।
(৬১৬)  বসন্ত ইন্নু রন্ত্যো গ্রীষ্ম ইন্নু রন্তাঃ।
        বর্ষাণ্যনু শরদো হেমন্তঃ শিশির ইন্নু রন্ত্যঃ।।২।।
(৬১৭)  সহস্রশীর্ষাঃ পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ।
        স ভূমিং সর্বতো বৃত্বাত্যতিষ্ঠদ্‌ দশাঙ্গুলম্‌।।৩।।
(৬১৮)  ত্রিপাদূর্ধ্ব উদৈৎ পুরুষ পাদহস্যেহাভবৎ পুনঃ।
        তথা বিম্বঙ্‌ ব্যক্রামদশনানশনে অভি।।৪।।
(৬১৯)  পুরুষ এবেদং সর্বং যদ্‌ ভূতং যচ্চ ভাব্যম্‌।
        পাদোহস্য সর্বা ভূতানি ত্রিপাদস্যামৃতং দিবি।।৫।।
(৬২০)  তাবানস্য মহিমা ততো জ্যয়াংশ্চ পুরুষঃ।
        উতামৃতত্বস্যেশানো যদন্নেনাতিরোহতি।।৬।।
(৬২১)  ততো বিরাডজায়ত বিরাজো অধি পুরুষঃ।
        স জাতো অত্যরিচ্যত পশ্চাদ্‌ ভূমিমথো পুরঃ।।৭।।
(৬২২)  মন্যে বাং দ্যাবাপৃথিবী সুভোজসৌ যে অপ্রথেথামমিতমভি যোজনম্‌।
        দ্যাবাপৃথিবী ভবতং স্যেনো তে নো মুঞ্চতমংহসঃ।।৮।।
(৬২৩)  হরী তে ইন্দ্র শ্মশ্রুণ্যুতো তে হরিতৌ হরী।
        তং ত্বা স্তুবন্তি কবয়ঃ পুরুষাসো বনর্গবঃ।।৯।।
(৬২৪)  যদ্‌ বর্চো হিরণ্যস্য ষদ্‌ বা বর্চো গবামৃত।
        সত্যস্য ব্রহ্মণো বর্চস্তেন মা সংসৃজামসি।।১০।।
(৬২৫)  সহস্তন্ন ইন্দ্র দগ্ধযোজ ঈশে হ্যস্য মহতো বিরপ্‌শিন্‌।
        ক্রতুং ন নৃমণং স্থবিরং চ বাজং বৃত্রেষু শত্রুন্‌ৎসহনা কৃধী নঃ।।১১।।
(৬২৬)  সহর্শভাঃ সহবৎসা উদেত বিশ্বা রূপাণি বিভ্রতীর্দব্যুধ্নীঃ।
        উরুঃ পৃথুরয়ং বো অন্তু লোক ইমা আপঃ সুপ্রপাণা ইহ স্ত।।১২।।

অনুবাদঃ (৬১৫) হে প্রজ্জ্বলিত জ্যোতির্ময় অগ্নি, তোমার মুখ মধ্যে জিহ্বা বিচরণ করে (=তোমার মধ্যে বাক্‌ অবস্থিত)। হে অগ্নি, হে পরমধন, তুমি আমাদের অন্ন সহ রমণীয় ধন ও তেজ জ্ঞানদৃষ্টির জন্য দান কর।। (৬১৬) বসন্ত কালই রমণীয়, গ্রীষ্মও রমণীয়, বর্ষাকালের পরে শরৎ হেমন্ত ও শীতকালও রমণীয়।। (৬১৭) পুরুষের (=এই আত্মার) সহস্র মস্তক, সহস্র চক্ষু, সহস্র পদ। তিনি পৃথিবীর সকল দিক ব্যাপ্ত করে দশ আঙ্গুল পরিমাণ অতিরিক্ত থেকে অবস্থান করেন।। (৬১৮) পুরুষের তিন পদ ঊর্ধ্বমুখী, আর এক পদ (=এক অংশ) এই বিশ্বকে বার বার প্রকটিত করে। তারপর তিনি ভোজনকারী (=প্রাণ বা চৈতন্যযুক্ত) এবং ভোজন রহিত (=অচেতন) তাবৎ বস্তুতে ব্যাপ্ত হন।। (৬১৯) এই পুরুষই এই সব যা কিছু, যা হয়েছে এবং যা হবে। তাঁর এক পদ-ই এই সকল বস্তু, আর দ্যুলোকে অমরণধর্মা তিন পদ অবস্থান করে।। (৬২০) সেই পুরুষের মহিমা এরূপ হলেও তিনি তাঁর সৃষ্টির চেয়ে মহৎ। এর এই সর্বেশ্বরের অমৃতত্বের কারণ তিনি অন্নভোগের দ্বারা অতিরোহণ করেন (ভোগকে অতিক্রম করে ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন)।। (৬২১) তাঁহা হতে বিরাট্‌ (=ব্রহ্মান্ড) জাত হয়েছে এবং তিনি সেই বিরাটে অধিষ্ঠিত পুরুষরূপে বিরাজমান। তারপর তিনি সেই ভাবে পৃথিবী এবং জীবদেহে অবস্থান করেও অতিরিক্ত রূপে (পৃথকভাবে) অবস্থান করেন।। (৬২২) হে দ্যুলোক ও পৃথিবী, আপনারা শোভন পালয়িত্রী তা আমি জানি; আপনারা অপরিমিত ধন ও সুখ দান করুন; হে দ্যাবাপৃথিবী, আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করুন।। (৬২৩) হে ইন্দ্র, তোমার রশ্মিসকল হরিৎবর্ণ, আর তোমার অশ্বদ্বয় (=দেশ ও কাল) সকল কিছু হরণকারী। কবিগণ, পুরুষগণ, জ্ঞানভক্তিযুক্ত সেবকগণ তোমাকে স্তব করেন।। (৬২৪) হিতরমনীয় যে জ্যোতি অথবা স্নিগ্ধ যে জ্যোতি, এবং সত্যস্বরূপ ব্রহ্মের যে জ্যোতি, তার সঙ্গে আমি যেন নিজেকে যুক্ত করতে পারি।। (৬২৫) হে শব্দকারী (বা সত্য বাক্যযুক্ত) ইন্দ্র, তোমার পরাভবকারী তেজ ও বল আমাদের দাও। তুমিই মহৎ বলের ঈশ্বর। সৎকর্মের দ্বারা যে ধন লাভ হয় সেই পরম ধন ও অমিত শক্ত আমাদের দাও। আমাদের পাপনাশক শক্তির উপায় বলে দাও।। (৬২৬) মনবাঞ্ছা পূর্ণকারী, সৎকর্মের সৃষ্টিকারী ও ধারক, হে অমৃতধারা, তোমরা আমাদের প্রাপ্ত হও; বিপুল এই বিশ্ব তোমাদের কৃপার অধীন হোক; তোমাদের অমৃতধারা আমাদের অনায়াসলভ্য হোক।

পঞ্চম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১৪।। দেবতা ১ পবমান অগ্নি, ২-১৪ সূর্য (৪-৬ সূর্য বা আত্মা)।। ছন্দ ১, ৪-১৪ গায়ত্রী, ২ জগতী, ত্রিষ্টুপ।। ঋষি ১ শতং বৈখানস, ২ বিভ্রাট্‌ সৌর্য, ৩ কুৎস আঙ্গিরস, ৪-৬ সর্পরাজ্ঞী, ৭-১৪ প্রস্কণ্ব কান্ব।।

মন্ত্রঃ-
(৬২৭)  অগ্ন আয়ুংসি পবস আসুবোর্জভিষং চ নঃ।
আরে বাধস্ব দুচ্চুনাম্‌।।১।।
(৬২৮)  বিভ্রাড্‌ বৃহৎপিবতু সোম্যং মধ্বায়ুর্দধদ্যজ্ঞপতাববিহূতম্‌।
বাতজূতো যো অভিরক্ষতি ত্মনা প্রজাঃ পিপর্তি বহূধা বি রাজতি।।২।।
(৬২৯)  চিত্রং দেবানামুদ্‌গাদনীকং চক্ষুর্মিত্রস্য বরুণস্যাগ্নেঃ।
        আপ্রা দ্যাবাপৃথিবী অন্তরিক্ষং সূর্য আত্মা জগতস্তথুষশ্চ।।৩।।
(৬৩০)  আয়ং গৌঃ পৃশ্নিরক্রমীদসদন্মতরং পুরঃ।
        পিতরং চ প্রযন্‌ৎস্ব।।৪।।
(৬৩১)  অশতশ্চরতি রোচনাস্য প্রাণাদপানতী।
        ব্যখ্যন্মহিষো দিবম্‌।।৫।।
(৬৩২)  ত্রিংশদ্ধাম বি রাজতি বাক্‌ পতঙ্গায় ধীয়তে।
        প্রতি বস্তোরহ দ্যুভিঃ।।৬।।
(৬৩৩)  অপ ত্যে তায়বো যথা নক্ষত্রা যন্ত্যক্তুভিঃ সুরায় বিশ্বচক্ষসে।।৭।।
(৬৩৪)  অদৃশ্রন্নস্য কেতবো বি রশ্ময়ো জনাঁ অনু।
        ভ্রাজন্তো অগ্নয়ো যথা।।৮।।
(৬৩৫)  তরণির্বিশ্বদর্শতো জ্যোতিস্কৃদসি সূর্য।
        বিশ্বমাভাসি রোচনম্‌।।৯।।
(৬৩৬)  প্রত্যঙ্‌ দেবানাং বিশঃ প্রত্যঙ্‌ ঙুদেষি মানষান্‌।
        প্রত্যঙ্‌ বিশ্বং স্বর্দৃশে।।১০।।
(৬৩৭)  যেনা পাবক চক্ষসা ভুরণ্যন্তং জনাঁ বরুণ পশ্যসি।।১১।।
(৬৩৮)  উদ্‌ দ্যামেষি রজঃ পৃথ্বহা মিমানো অক্তুভিঃ।
        পশ্যঞ্জন্মানি সূর্য।।১২।।
(৬৩৯)  অযুক্ত সপ্ত শন্ধ্যুবঃ সূরো রথস্য নপত্র্যঃ।
        তাভির্মাতি স্বযুক্তিভিঃ।।১৩।।
(৬৪০)  সপ্ত ত্বা হরিতো রথে বহন্তি দেব সূর্য।
শোচিস্কেশং বিচক্ষণ।।১৪।।

অনুবাদঃ (৬২৭) হে অগ্নি, তুমি আমাদের আয়ু দাও; বল ও অন্ন দাও; দুষ্ট প্রকৃতির দূরে রাখ।। (৬২৮) অতি দীপ্ত সূর্যদেব মধুর সোম পান করুন, যজ্ঞকারীর (-সৎকর্মকারীর) আয়ু বৃদ্ধি করুন। তিনি বায়ু দ্বারা প্রেরিত হয়ে প্রজাদের স্বয়ং রক্ষা করেন, পালন করেন ও বহুরূপে বিরাজ করেন।। (৬২৯) বিচিত্র রশ্মিসমূহের সমষ্টিরূপ সূর্য উদিত হয়েছেন; তিনিই মিত্র, বরুণ ও অগ্নির চক্ষুস্বরূপ; দ্যুলোক, ভূলোক ও অন্তরিক্ষ স্বীয় মহত্ত্বে পূর্ণ করেছেন। সূর্য স্থাবর ও জঙ্গমের আত্মা।। (৬৩০) এই নানারূপ বিচিত্র বর্ণ গমনশীল অগ্নি (=সূর্য) পূর্বদিকে উদিত হয়ে মাতা পৃথিবীকে প্রাপ্ত হন, পরে দ্যুলোকে আকাশপথে গমন করেন। (৬৩১) এঁর দীপ্ত এঁর দেহের মধ্যে (বা দ্যু ও পৃথিবীমধ্যে) বিচরণ করে, এবং এঁর প্রাণ হতে নিঃশ্বাসরূপে প্রাণবায়ু নির্গত হয় (=এঁর প্রাণই বাহিরে নির্গত হয় প্রাণবায়ু রূপে); ইনিই দ্যুলোকে বিপুলাকৃতি ধারণ করে ব্যাপ্ত হন।। (৬৩২) তিরিশ স্থানে ইনি বিরাজ করেন (=সৌর মাস তিরিশ দিনের কথা বলা হয়েছে); পতঙ্গের মত গমশীল এই সূর্যের উদ্দেশে স্তব উচ্চারিত হয়। তিনি দিবারাত্র নিজ করণে উদ্‌ভাসিত।। (৬৩৩) সর্বজগতের প্রকাশক সূর্যের উদয়ে নক্ষত্রগণ রাত্রির সঙ্গে চোরের মত পালিয়ে গেল।। (৬৩৪) দীপামান অগ্নির মত সূর্যের প্রজ্ঞানরূপ, রশ্মিসকল মানুষদের লক্ষ্য করতে করতে চলেছে।। (৬৩৫) হে সূর্য, তুমি ক্ষিপ্রগামী, বিশ্বদ্রষ্টা ও জ্যোতির কারক। তুমি সমস্ত দীপ্ত বস্তুকে প্রকাশিত কর। (৬৩৬) হে সূর্য দেবগণের প্রজাবৃন্দকে (=রশ্মি দ্বারা সৃষ্ট জীবদের) দেখবার জন্য পশ্চিম দিকে মুখ করে উদিত হও (=পূর্বদিকে উদিত হও পশ্চিমমুখী হতে), মানুষদের দেখবার জন্য (পূর্বদিকে) পশ্চিম মুখ হয়ে উদিত হও, সর্ব জগতকে দেখবার জন্য (পূর্বদিকে) পশ্চিম মুখ হয়ে উদিত হও। (৬৩৭-৬৩৮) হে বরুণ (=সূর্য) হে পবিত্রতাকারক, তুমি যে অনুগ্রহ দৃষ্টিতে জনগণমধ্যে অবস্থিত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সৎকর্মানুষ্ঠানকারীকে দর্শন করে থাক, সেই অনুগ্রহ দৃষ্ঠিতে, হে সূর্য, তুমি রাত্রির সঙ্গে দিনকে সৃষ্টি করে, জাত প্রাণিসমূহকে অবলোকন করে দ্যুলোক এবং মহান অন্তরিক্ষলোক নানাভাবে পরিভ্রমণ কর।। (৬৩৯) রথবাহক সাতটি অশ্বকে (=সপ্ত রশ্মিকে) সূর্য তাঁর রথে যুক্ত করলেন, স্বয়ংযুক্ত সেই অশ্বের সহায়তায় তিনি গমন করছেন।। (৬৪০) হে সূর্যদেব, সাতটি অশ্ব তোমাকে রথে বহন করে; হে সর্বদ্রষ্টা, জ্যোতিই তোমার কেশ।

।।আরণ্যক কাণ্ড সমাপ্ত।। 

সামবেদ-সংহিতা – আরণ্যক কাণ্ড – ষষ্ঠ অধ্যায়

প্রথম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ৯।। দেবতা ১-৩ ইন্দ্র, ৪ বরুণ, ৫।৭।৮ পবমান সোম, ৬ বিশ্বদেবগণ, ৯ অন্ন।। ছন্দ ১ বৃহতী, ২।৯ ত্রিষ্টুপ, ৩।৭।৮ গায়ত্রী, ত্রিষ্টুপ অথবা চতুস্পদা গায়ত্রী, ৬ একপাৎ জগতী বা গায়ত্রী।।

মন্ত্রঃ-
(৫৮৬)  ইন্দ্র জ্যেষ্ঠং ন আ ভর অজিষ্ঠং পুপুরি শ্রবঃ।
যদ্‌ দিধূক্ষেম বজ্রহস্ত রোদসী উভে সুশ্রিপ্র পপ্রাঃ।।১।।
(৫৮৭) ইন্দ্রো রাজা জগতশ্চর্ষণীনাম-ধিক্ষমা বিশ্বরূপং যদস্য।
ততো দদাতি দাশুষে বসুনি চোদদ্রাধ উপস্তুতং চিদর্বাক্‌।।২।।
(৫৮৮) যস্যেদমা রজোষুজস্তুজে জনে বং স্বঃ। ইন্দ্রস্য রন্ত্যং বৃহৎ।।৩।।
(৫৮৯)  উদুত্তমং বরুণ পাশমস্মদবাধমং বি মধ্যমং শ্রথায়।
অথাদিতা ব্রতে বয়ং তবানাগসো অদিতয়ে স্যাম।।৪।।
(৫৯০)  ত্বয়া বয়ং পবমানেন সোম ভরে কৃতং বি চিনুয়াম শশ্বৎ।
তন্নো মিত্রো বরুণো মামহন্তামদিতিঃ সিন্ধুঃ পৃথিবী উত দ্যৌঃ।।৫।।
(৫৯১)  ইমং বৃষণং কৃণুতৈকমিন্‌ মাম্‌।।৬।।
(৫৯২)  স ন ইন্দ্রায় যজ্যবে বরুণায়ঃ মরুদ্‌ভ্যঃ। বারিবোবিৎ পরি স্রব।।৭।।
(৫৯৩)  এনা বিশ্বান্যর্য আ দ্যুম্নানি মানুষ্যণাম্‌। সিষাসন্তো বনামহে।।৮।।
(৫৯৪)  অহমস্মি প্রথমজা ঋতস্য পূর্বং দেবেভ্যো অমৃতস্য নাম।
যো মা দদাতি স ইদেবমাবদমন্নমদন্তমস্মি।।৯।।

অনুবাদঃ (৫৮৬) হে উদকবান বজ্রহস্ত ইন্দ্র, তুমি যে অন্নের দ্বারা দ্যু ও পৃথিবী উভয়কে ধারণ করে রেখেছ আমাদের কাছে সেই উত্তম বলকর পুষ্টিকর অন্ন আন।। (৫৮৭) ইন্দ্র জগতের রাজা, মানুষের রাজা; পৃথিবীতে যে বিশ্বরূপ প্রকটিত তাও তাঁর। তাঁকে যিনি দান উৎসর্গ করেন; ইন্দ্র তাঁকে ধন প্রদান করেন; তিনি স্তুত হলে ধন প্রেরণ করেন।। (৫৮৮) যে ইন্দ্রের বিপুল আনন্দদায়ক জল ও তেজ এই সমস্ত যা কিছু হয়েছে তা ইন্দ্রের জ্যোতিযুক্ত বজ্রের দ্বারা জাত হয়েছে।। (৫৮৯) হে বরুণ, আমাদের উপরের পাশ খুলে দাও, নীচের পাশ খুলে দাও, কটিদেশে বন্ধ হয়ে খুলে দাও। তারপর হে আদিত্য, অমৃতরসাস্বাদের জন্য আমরা প্রমাদ রহিত হয়ে তোমার কর্মে নিযুক্ত থাকবো।। (৫৯০) হে সোম, তোমার ক্ষরণের দ্বারা কৃত যে জল তা আমরা সংগ্রহ করি; আমরা যেন চিরকালই তা সংগ্রহ করতে পারি। সুতরাং মিত্র, বরুণ, আদিতি, সিন্ধু, পৃথিবী এবং দ্যুলোক আমাদের পূজা গ্রহণ করুন।। (৫৯১) হে সোমধারা, তোমরা আমাকেও তোমাদের মতই বর্ষণশীল কর।। (৫৯২) হে ঈশ্বর, তোমার এই সকল বিশ্বধন মানুষদের। আমরা তোমার সেবা করতে ইচ্ছুক, আমরা এই বিশ্বধন কামনা করি।। (৫৯৪) আমি জলরূপে জাত হবার পূর্বে সর্বপ্রথমে দেবগণের জন্য অমৃতবারিরূপে জাত হয়েছিলাম। যিনি আমাকে দান করেন তিনিই এরূপ বলছেন আমিই অন্ন, আমিই অন্ন, আমিই অদন্ত অন্ন।।

দ্বিতীয় খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ৭।। দেবতা, ১। ৩। ৪। ৭ ইন্দ্র, ২ পাবমান সোম, ৫ বিশ্বদেবগণ, ৬ বায়ু।। ছন্দ ১। ৩। ৪। ৬ গায়ত্রী, ২ জগতী, ৫ ত্রিষ্টুপ, ৭ অনুষ্টুপ।। ঋষি ১ শ্রুতকক্ষ আঙ্গিরস, ২ পবিত্র আঙ্গিরস, ৩। ৪ মধুছন্দা বৈশ্বামিত্র, ৫ প্রথ বাসিষ্ঠ, ৬ গৎসমদ শৌনক, ৭ নৃমেধ ও পুরুমেশ আঙ্গিরস।।

মন্ত্রঃ-
(৫৯৫) ত্বমেরদধারয়ঃ। কৃজ্ঞাসু রোহিণীষু চ।। পরষ্ণীষু রুষৎ পয়ঃ।।১।।
(৫৯৬)  অরুরুচসুষসঃ পৃশ্নিরগ্রিয় উক্ষা মিমেতি ভুবনেষু বাজযুঃ।
মায়াবিনো মমিরে অস্য মায়য়া নৃচক্ষসঃ পিতরো গর্ভমাদধুঃ।।২।।
(৫৯৭)  ইন্দ্র ইদ্ধর্যোঃ সচা সস্মিশ্র আ বচোষুজা। ইন্দ্রো বজ্রী হিরণ্যয়ঃ।।৩।।
(৫৯৮)  ইন্দ্র রাজেষু নোহব সহস্রপ্রধনেষু চ। উগ্র উগ্রাভিরুতিভিঃ।।৪।।
(৫৯৯)  প্রথশ্চ যস্য সপ্রথশ্চ নামানুষ্টুভস্য হবিষো হবির্ষৎ।
ধাতুর্দ্যুতানাৎসবিতুশ্চ বিষ্ণো রথস্তরমাজভারা বসিষ্ঠঃ।।৫।।
(৬০০)  নিযুত্বান্‌ বায়বা গহ্যয়ং শুক্রো অয়াভি তে। অন্তাসি সুন্বতো গৃহম্‌।।৬।।
(৬০১)  যজ্জায়তা অপূর্ব্য মঘবন্‌ বৃত্রহত্যায়। তৎ পৃথিবীমপ্রথয়স্তদস্তভ্‌না উতো দিবম্‌।।৭।।

অনুবাদঃ (৫৯৫) হে ইন্দ্র, এই উজ্জ্বলবর্ণবিশিষ্ট জলকে তুমি কৃষ্ণবর্ণা, লোহিতবর্ণা ও কুটিলাগামিনী নদীসমূহে স্থাপন করেছ।। (৫৯৬) সূর্যোদয়ের পূর্বে ঊষার আলোক প্রকাশিত হলে (=অতি প্রত্যুষে) হিমকণারূপ উদক ক্ষরিত হয়; অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন দর্শনকারী মাধ্যমিক দেবগণ (=আকাশের মধ্যে অবস্থিত পিতৃগণ নামে অভিহিত রশ্মিগণ) সর্বতোভাবে অন্নের গর্ভ স্থাপন করেন।। (৫৯৭) ইন্দ্রই উদক ও বিদ্যুতের সম্যক্‌ মিশ্রণকর্তা (=উদক ও বিদ্যুতের মিশ্রণক্রিয়া থেকে বৃষ্টি হয়); তাঁর ইচ্ছামাত্রই রশ্মিগণ যুক্ত হয়। ইন্দ্র বজ্রধারী ও হিরণ্ময়।। (৫৯৮) হে ইন্দ্র, তুমি উগ্র (=উগ্রকার্যের দ্বারা কর্মকে মিলিত করে থাক); তোমার উগ্রতারূপ সকলপ্রকার রক্ষণ শক্তির দ্বারা অন্নে ও সহস্র ধনে আমাদের রক্ষা কর।। (৫৯৯) যার নাম প্রথ ও সপ্রথ (=যা অতিবিস্তৃত বলে পরিচিত) যা অনুষ্টুভের হবির হবি সেই রথন্তর সামগানকে ধাতা, সবিতা ও বিষ্ণুর তেজ হতে বসিষ্ঠ আহরণ করলেন।। (৬০০) হে বায়ু, তুমি নিষুতগণকে নিয়ে এস; এই উজ্জ্বল সোমরস তোমার জন্য। তুমি সোম অভিষবকারীর গৃহে যাও।। (৬০১) হে অপূর্ব মঘবান ইন্দ্র, তুমি মেঘহননের জন্য যখন জন্মেছ তখন পৃথিবীকে প্রথিত করেছ আর দ্যুলোককে স্তব্ধ করেছ।।

তৃতীয় খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১৩।। দেবতা ১ প্রজাপতি, ২। ৩ সোম, ৪। ৫। ৮। ১৩ অগ্নি, ৬ অপাংনপাৎ, ৭ রাত্রি, ৯ বিশ্বদেবগণ; ১০ লিঙ্গোক্ত, ১১ ইন্দ্র ১২ আত্মা বা অগ্নি।। ছন্দ ত্রিষ্টুপ, ১। ৭ অনুষতুপ, ৪ গায়ত্রী, ৮। ৯ জগতী, ১০ মহাপঙক্তি।। ঋষি ১। ৫। ৭। ১০ বামদেব গৌতম, ২। ৩ গৌতম রাহুগণ, ৫ মধুচ্ছন্দা বৈশ্বামিত্র, ৬ গৃৎসমদ্‌ শৌনক, ৮ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, ৯ ঋজিশ্বা ভারদ্বাজ, ১১ হিরণ্যস্তুপ আঙ্গিরস, ১২। ১৩ বিশ্বামিত্র গাথিন।।

মন্ত্রঃ-
(৬০২)  মহি বর্চো অথৌ যশহথো যজ্ঞস্য যৎ পয়ঃ। পরমেষ্ঠী প্রজাপতি র্দিবি দ্যামিব দৃংহতু।।১।।
(৬০৩)  সং তে পয়াংসি সমু যন্তু বাজাঃ সং বৃষ্ণয়ান্যভিমাতিষাহঃ।
আপ্যায়মাণ অমৃতায় সোম দিবি শ্রবাংস্যুত্তমানি ধিষ্ব।।২।।
(৬০৪)  ত্বমিমা ওষধী; সোম বিশ্বাস্তমপো অজনয়স্তৎ গাঃ।
ত্বমাত্নোরুর্বাহন্তরিক্ষং ত্বং জ্যোতিষা বি তমো ববর্থ।।৩।।
(৬০৫)  অগ্নিমীলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্‌। হোতারং রত্নধাতম।।৪।।
(৬০৬)  তে মন্বত প্রথমং গোনাং ত্রিঃ সপ্ত পরমং নাম জানন্‌।
তা জানতীরভানুষত ক্ষা আবির্ভূবন্নরুনীর্যশস্য গাবঃ।।৫।।
(৬০৭)  সমন্যা যন্ত্যুপয়ন্তান্যাঃ সমানমূর্বং নদ্যস্পৃণন্তি।
তমু শূচিং শুচয়ো দীদিবাংসমপান্নপাতমুপ যন্ত্যাপঃ।।৬।।
(৬০৮)  আ প্রাগাদ ভদ্রা যুবতিরহ্বঃ কেতুন্‌ৎসমীৎর্সতি।
অভূদ্‌ ভদ্রা নিবেশনী বিশ্বস্য জগতো রাত্রী।।৭।।
(৬০৯)  প্রক্ষস্য বৃষ্ণো অরুষস্য নূ মহঃ প্র নো বগচো বিদথা জাতবেদসে।
বৈশ্বানরায় মলির্নব্যসে শুচিঃ সোম ইব পবতে চারুরগ্নয়ে।।৮।।
(৬১০)  বিশ্বে দেবা মম শৃন্বন্তু যজ্ঞমুভে রোদসী অপাং নপাচ্চ মম্ন।
মা বো বচাংসি পরিচক্ষ্যণি বোচং সুম্নেষ্বিদ্‌ বো অন্তমা মদেম্‌।।৯।।
(৬১১)  যশো মা দ্যাবাপৃথিবী যশ্যে মেন্দ্রবৃহস্পতী।
যশো ভগস্য বিন্দতু যশো মা প্রতিমুচ্যত্যম্‌ যশসাত স্যাঃ সংসদোহহম্‌ প্রবদিতা স্যাম্‌।।১০।।
(৬১২)  ইন্দ্রস্য নু বীর্যাণি প্রবোচং যানি চকার প্রথমানি বজ্রী।
        অহন্নহিমন্বপস্ততর্দ প্র বক্ষণা অভিনৎ পর্বতানাম্‌।।১১।।
(৬১৩)  অগ্নিরশ্মি জন্মনা জাতবেদা ঘৃতং মে চক্ষুরমতৃং ম আসন্‌।
        ত্রিধাতুরর্কো রজসো বিমানোহজস্রং জ্যোতির্হাবরশ্মি সর্বম্‌।।১২।।
(৬১৪)  পাত্যাগ্নির্বিপো অগ্রং পদং বেঃ পাতি যহ্বশ্চরং সূর্যস্য।
        পাতি নাভা সপ্তশীর্ষানমগ্নিঃ পাতি দেবানামুপমাদমৃম্বঃ।।১৩।।

অনুবাদঃ (৬০২) যজ্ঞসাধনভূত যে অন্ন, বল ও জল আমাতে আছে তা পরমেষ্ঠী প্রজাপতি দ্যুলোক আকাশের মত ধারণ করুন। (৬০৩) হে সোম, তোমার জলরাশি অন্ন বীর্য বর্ধন করুক ও অপশক্তি নাশ করুক; তুমি অমরত্বের জন্য বৃদ্ধিলাভ করে দ্যুলোকে উত্তম অন্ন ধারণ কর। (৬০৪) হে সোম, তুমি সকল ওষধী, জলরাশি ও পশুদের সৃষ্টি করেছ; তুমি জ্যোতির দ্বারা তমোনাশ করে বিশাল আকাশকে আরও বিস্তৃত করেছ। (৬০৫) অগ্নিকে আমি পূজা করি, তিনি যজ্ঞের পুরোহিত, ঋত্বিক্‌, হোতা এবং অতি উৎকৃষ্ট ধনদাতা। (৬০৬) তাঁরা (সপ্ত ঋষিগণ বা রশ্মিগণ) প্রথমে তিনলোকে গোরশ্মিসমূহের নমন অনুমোদন করলেন এবং সপ্তলোকে রশ্মিগণের উৎকৃষ্ট নমন বিষয়ে জানলেন। ঊষাকালে সেই দীপ্ত অরুণবর্ণা রশ্মিগণ উদকের সঙ্গে আবির্ভূত হয়ে পৃথিবীকে স্তব করেছিলেন। (৬০৭) সমানভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জল একে অন্যের সঙ্গে মেশে; সমান ভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সমুদ্রকে নদীসমূহ প্রীত করে। সেই নির্মল জলরাশি শুচি ও দীপ্যমান অপাং নপাৎ (=অগ্নি) দেবতা অভিমুখে গমন করে। (৭০৮) কল্যাণময়ী ঊষা সর্বপ্রথমে উচ্চাকাশে দিনের আলো প্রেরণ করে প্রজ্ঞা সৃষ্টি করেন; কল্যাণী রাত্রি দেবী জগতের সকলপ্রাণীর সুখের আশ্রয় স্বরূপা। (৬০৯) সর্বব্যাপী, বর্ষণকারক, দীপ্তিমান, মহান জাতবেদা অগ্নির উদ্দেশে এই জ্ঞানময় স্তুতি করছি। বিশ্বের প্রিয় বৈস্বানর অগ্নির উদ্দেশে এই নবীন শূচি স্তোত্র সোমের (=জলের মত) নির্গত হচ্ছে। (৬১০) বিশ্বদেবগণ (=সকল রশ্মিগণ), দ্যুলোক ও পৃথিবী উভয়ে এবং অপাং নপাৎ অগ্নি (=জলের রক্ষক বা জলের পৌত্র অগ্নি) আমার এই বুদ্ধিপূর্বক রচিত স্তোত্র শ্রবণ কর। তোমরা আমার এই স্তোত্র বর্জন কোরো না; তোমাদের আনন্দের মধ্যে বাস করে আমরাও হৃষ্ট হবো। (৬১১) দ্যুলোক ও পৃথিবী আমাকে যশ (=অন্ন, জল ও সম্পদ) দান করুন, ইন্দ্র ও বৃহস্পতি যশ দান করেন; ভগদেবতার (=সূর্যের) যশ আমি যেন প্রাপ্ত হই; যশ আমাকে সুপ্রকাশিত করুক। যশের সহায়ে আমি সভাতে যেন সুবক্তা হই। (৬১২) ইন্দ্রর বিরত্বব্যঞ্জক কর্মসমূহ এখনই বলছি। যে কর্মসমূহ বজ্রধারী ইন্দ্র প্রথম থেকেই করে আসছেন। তিনি মেঘকে হনন করেন; পরে বারিরাশিকে ভূমিতে পাতিত করেন; এবং পর্বত ভেদ করে নদীসমূহকে প্রবাহিত করেন। (৬১৩) আমি অগ্নি, আমি জন্ম থেকেই জ্ঞানযুক্ত, ঘৃত (বা জল) আমার চক্ষু, অমৃত আমার মুখে। আমিই তিন লোক ধারণ করে আছি; আমিই ঋক্‌, আমি অন্তরিক্ষের পরিমাপকারী, আমিই অজস্র জ্যোতি; আমিই সকল হবি (=অন্ন বা জল)। (৬১৪) বিপ্র অগ্নি রক্ষাকর্তা; তিনি প্রথমে গমনশীল সূর্যের বিচরণস্থল আকাশকে রক্ষা করেন এবং প্রাণবায়ু মরুদ্‌গণকে রক্ষা করেন। মহান অগ্নি দেবগণের হর্ষকেও রক্ষা করেন।

চতুর্থ খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১২।। দেবতা ১।২ অগ্নি, ৩-৭ পুরুষ, ৮ দ্যাবাপৃথিবী, ৯-১১ ইন্দ্র, ১২ গোগণ (=রশ্মিগণ)।। ছন্দ অনুষ্টুপ, ১-২ পঙ্‌ ক্তি, ৮।১১।১২ ত্রিষ্টুপ।।

মন্ত্রঃ-
(৬১৫)  ভ্রাজন্ত্যগ্নে সমিধান দীদিবো জিহ্বা চরত্যন্তরাসনি।
স ত্বং নো অগ্নে পয়সা বসুবিদ্‌ রয়িং বর্চো দৃশেহদাঃ।।১।।
(৬১৬)  বসন্ত ইন্নু রন্ত্যো গ্রীষ্ম ইন্নু রন্তাঃ।
        বর্ষাণ্যনু শরদো হেমন্তঃ শিশির ইন্নু রন্ত্যঃ।।২।।
(৬১৭)  সহস্রশীর্ষাঃ পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ।
        স ভূমিং সর্বতো বৃত্বাত্যতিষ্ঠদ্‌ দশাঙ্গুলম্‌।।৩।।
(৬১৮)  ত্রিপাদূর্ধ্ব উদৈৎ পুরুষ পাদহস্যেহাভবৎ পুনঃ।
        তথা বিম্বঙ্‌ ব্যক্রামদশনানশনে অভি।।৪।।
(৬১৯)  পুরুষ এবেদং সর্বং যদ্‌ ভূতং যচ্চ ভাব্যম্‌।
        পাদোহস্য সর্বা ভূতানি ত্রিপাদস্যামৃতং দিবি।।৫।।
(৬২০)  তাবানস্য মহিমা ততো জ্যয়াংশ্চ পুরুষঃ।
        উতামৃতত্বস্যেশানো যদন্নেনাতিরোহতি।।৬।।
(৬২১)  ততো বিরাডজায়ত বিরাজো অধি পুরুষঃ।
        স জাতো অত্যরিচ্যত পশ্চাদ্‌ ভূমিমথো পুরঃ।।৭।।
(৬২২)  মন্যে বাং দ্যাবাপৃথিবী সুভোজসৌ যে অপ্রথেথামমিতমভি যোজনম্‌।
        দ্যাবাপৃথিবী ভবতং স্যেনো তে নো মুঞ্চতমংহসঃ।।৮।।
(৬২৩)  হরী তে ইন্দ্র শ্মশ্রুণ্যুতো তে হরিতৌ হরী।
        তং ত্বা স্তুবন্তি কবয়ঃ পুরুষাসো বনর্গবঃ।।৯।।
(৬২৪)  যদ্‌ বর্চো হিরণ্যস্য ষদ্‌ বা বর্চো গবামৃত।
        সত্যস্য ব্রহ্মণো বর্চস্তেন মা সংসৃজামসি।।১০।।
(৬২৫)  সহস্তন্ন ইন্দ্র দগ্ধযোজ ঈশে হ্যস্য মহতো বিরপ্‌শিন্‌।
        ক্রতুং ন নৃমণং স্থবিরং চ বাজং বৃত্রেষু শত্রুন্‌ৎসহনা কৃধী নঃ।।১১।।
(৬২৬)  সহর্শভাঃ সহবৎসা উদেত বিশ্বা রূপাণি বিভ্রতীর্দব্যুধ্নীঃ।
        উরুঃ পৃথুরয়ং বো অন্তু লোক ইমা আপঃ সুপ্রপাণা ইহ স্ত।।১২।।

অনুবাদঃ (৬১৫) হে প্রজ্জ্বলিত জ্যোতির্ময় অগ্নি, তোমার মুখ মধ্যে জিহ্বা বিচরণ করে (=তোমার মধ্যে বাক্‌ অবস্থিত)। হে অগ্নি, হে পরমধন, তুমি আমাদের অন্ন সহ রমণীয় ধন ও তেজ জ্ঞানদৃষ্টির জন্য দান কর।। (৬১৬) বসন্ত কালই রমণীয়, গ্রীষ্মও রমণীয়, বর্ষাকালের পরে শরৎ হেমন্ত ও শীতকালও রমণীয়।। (৬১৭) পুরুষের (=এই আত্মার) সহস্র মস্তক, সহস্র চক্ষু, সহস্র পদ। তিনি পৃথিবীর সকল দিক ব্যাপ্ত করে দশ আঙ্গুল পরিমাণ অতিরিক্ত থেকে অবস্থান করেন।। (৬১৮) পুরুষের তিন পদ ঊর্ধ্বমুখী, আর এক পদ (=এক অংশ) এই বিশ্বকে বার বার প্রকটিত করে। তারপর তিনি ভোজনকারী (=প্রাণ বা চৈতন্যযুক্ত) এবং ভোজন রহিত (=অচেতন) তাবৎ বস্তুতে ব্যাপ্ত হন।। (৬১৯) এই পুরুষই এই সব যা কিছু, যা হয়েছে এবং যা হবে। তাঁর এক পদ-ই এই সকল বস্তু, আর দ্যুলোকে অমরণধর্মা তিন পদ অবস্থান করে।। (৬২০) সেই পুরুষের মহিমা এরূপ হলেও তিনি তাঁর সৃষ্টির চেয়ে মহৎ। এর এই সর্বেশ্বরের অমৃতত্বের কারণ তিনি অন্নভোগের দ্বারা অতিরোহণ করেন (ভোগকে অতিক্রম করে ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন)।। (৬২১) তাঁহা হতে বিরাট্‌ (=ব্রহ্মান্ড) জাত হয়েছে এবং তিনি সেই বিরাটে অধিষ্ঠিত পুরুষরূপে বিরাজমান। তারপর তিনি সেই ভাবে পৃথিবী এবং জীবদেহে অবস্থান করেও অতিরিক্ত রূপে (পৃথকভাবে) অবস্থান করেন।। (৬২২) হে দ্যুলোক ও পৃথিবী, আপনারা শোভন পালয়িত্রী তা আমি জানি; আপনারা অপরিমিত ধন ও সুখ দান করুন; হে দ্যাবাপৃথিবী, আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করুন।। (৬২৩) হে ইন্দ্র, তোমার রশ্মিসকল হরিৎবর্ণ, আর তোমার অশ্বদ্বয় (=দেশ ও কাল) সকল কিছু হরণকারী। কবিগণ, পুরুষগণ, জ্ঞানভক্তিযুক্ত সেবকগণ তোমাকে স্তব করেন।। (৬২৪) হিতরমনীয় যে জ্যোতি অথবা স্নিগ্ধ যে জ্যোতি, এবং সত্যস্বরূপ ব্রহ্মের যে জ্যোতি, তার সঙ্গে আমি যেন নিজেকে যুক্ত করতে পারি।। (৬২৫) হে শব্দকারী (বা সত্য বাক্যযুক্ত) ইন্দ্র, তোমার পরাভবকারী তেজ ও বল আমাদের দাও। তুমিই মহৎ বলের ঈশ্বর। সৎকর্মের দ্বারা যে ধন লাভ হয় সেই পরম ধন ও অমিত শক্ত আমাদের দাও। আমাদের পাপনাশক শক্তির উপায় বলে দাও।। (৬২৬) মনবাঞ্ছা পূর্ণকারী, সৎকর্মের সৃষ্টিকারী ও ধারক, হে অমৃতধারা, তোমরা আমাদের প্রাপ্ত হও; বিপুল এই বিশ্ব তোমাদের কৃপার অধীন হোক; তোমাদের অমৃতধারা আমাদের অনায়াসলভ্য হোক।

পঞ্চম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১৪।। দেবতা ১ পবমান অগ্নি, ২-১৪ সূর্য (৪-৬ সূর্য বা আত্মা)।। ছন্দ ১, ৪-১৪ গায়ত্রী, ২ জগতী, ত্রিষ্টুপ।। ঋষি ১ শতং বৈখানস, ২ বিভ্রাট্‌ সৌর্য, ৩ কুৎস আঙ্গিরস, ৪-৬ সর্পরাজ্ঞী, ৭-১৪ প্রস্কণ্ব কান্ব।।

মন্ত্রঃ-
(৬২৭)  অগ্ন আয়ুংসি পবস আসুবোর্জভিষং চ নঃ।
আরে বাধস্ব দুচ্চুনাম্‌।।১।।
(৬২৮)  বিভ্রাড্‌ বৃহৎপিবতু সোম্যং মধ্বায়ুর্দধদ্যজ্ঞপতাববিহূতম্‌।
বাতজূতো যো অভিরক্ষতি ত্মনা প্রজাঃ পিপর্তি বহূধা বি রাজতি।।২।।
(৬২৯)  চিত্রং দেবানামুদ্‌গাদনীকং চক্ষুর্মিত্রস্য বরুণস্যাগ্নেঃ।
        আপ্রা দ্যাবাপৃথিবী অন্তরিক্ষং সূর্য আত্মা জগতস্তথুষশ্চ।।৩।।
(৬৩০)  আয়ং গৌঃ পৃশ্নিরক্রমীদসদন্মতরং পুরঃ।
        পিতরং চ প্রযন্‌ৎস্ব।।৪।।
(৬৩১)  অশতশ্চরতি রোচনাস্য প্রাণাদপানতী।
        ব্যখ্যন্মহিষো দিবম্‌।।৫।।
(৬৩২)  ত্রিংশদ্ধাম বি রাজতি বাক্‌ পতঙ্গায় ধীয়তে।
        প্রতি বস্তোরহ দ্যুভিঃ।।৬।।
(৬৩৩)  অপ ত্যে তায়বো যথা নক্ষত্রা যন্ত্যক্তুভিঃ সুরায় বিশ্বচক্ষসে।।৭।।
(৬৩৪)  অদৃশ্রন্নস্য কেতবো বি রশ্ময়ো জনাঁ অনু।
        ভ্রাজন্তো অগ্নয়ো যথা।।৮।।
(৬৩৫)  তরণির্বিশ্বদর্শতো জ্যোতিস্কৃদসি সূর্য।
        বিশ্বমাভাসি রোচনম্‌।।৯।।
(৬৩৬)  প্রত্যঙ্‌ দেবানাং বিশঃ প্রত্যঙ্‌ ঙুদেষি মানষান্‌।
        প্রত্যঙ্‌ বিশ্বং স্বর্দৃশে।।১০।।
(৬৩৭)  যেনা পাবক চক্ষসা ভুরণ্যন্তং জনাঁ বরুণ পশ্যসি।।১১।।
(৬৩৮)  উদ্‌ দ্যামেষি রজঃ পৃথ্বহা মিমানো অক্তুভিঃ।
        পশ্যঞ্জন্মানি সূর্য।।১২।।
(৬৩৯)  অযুক্ত সপ্ত শন্ধ্যুবঃ সূরো রথস্য নপত্র্যঃ।
        তাভির্মাতি স্বযুক্তিভিঃ।।১৩।।
(৬৪০)  সপ্ত ত্বা হরিতো রথে বহন্তি দেব সূর্য।
শোচিস্কেশং বিচক্ষণ।।১৪।।

অনুবাদঃ (৬২৭) হে অগ্নি, তুমি আমাদের আয়ু দাও; বল ও অন্ন দাও; দুষ্ট প্রকৃতির দূরে রাখ।। (৬২৮) অতি দীপ্ত সূর্যদেব মধুর সোম পান করুন, যজ্ঞকারীর (-সৎকর্মকারীর) আয়ু বৃদ্ধি করুন। তিনি বায়ু দ্বারা প্রেরিত হয়ে প্রজাদের স্বয়ং রক্ষা করেন, পালন করেন ও বহুরূপে বিরাজ করেন।। (৬২৯) বিচিত্র রশ্মিসমূহের সমষ্টিরূপ সূর্য উদিত হয়েছেন; তিনিই মিত্র, বরুণ ও অগ্নির চক্ষুস্বরূপ; দ্যুলোক, ভূলোক ও অন্তরিক্ষ স্বীয় মহত্ত্বে পূর্ণ করেছেন। সূর্য স্থাবর ও জঙ্গমের আত্মা।। (৬৩০) এই নানারূপ বিচিত্র বর্ণ গমনশীল অগ্নি (=সূর্য) পূর্বদিকে উদিত হয়ে মাতা পৃথিবীকে প্রাপ্ত হন, পরে দ্যুলোকে আকাশপথে গমন করেন। (৬৩১) এঁর দীপ্ত এঁর দেহের মধ্যে (বা দ্যু ও পৃথিবীমধ্যে) বিচরণ করে, এবং এঁর প্রাণ হতে নিঃশ্বাসরূপে প্রাণবায়ু নির্গত হয় (=এঁর প্রাণই বাহিরে নির্গত হয় প্রাণবায়ু রূপে); ইনিই দ্যুলোকে বিপুলাকৃতি ধারণ করে ব্যাপ্ত হন।। (৬৩২) তিরিশ স্থানে ইনি বিরাজ করেন (=সৌর মাস তিরিশ দিনের কথা বলা হয়েছে); পতঙ্গের মত গমশীল এই সূর্যের উদ্দেশে স্তব উচ্চারিত হয়। তিনি দিবারাত্র নিজ করণে উদ্‌ভাসিত।। (৬৩৩) সর্বজগতের প্রকাশক সূর্যের উদয়ে নক্ষত্রগণ রাত্রির সঙ্গে চোরের মত পালিয়ে গেল।। (৬৩৪) দীপামান অগ্নির মত সূর্যের প্রজ্ঞানরূপ, রশ্মিসকল মানুষদের লক্ষ্য করতে করতে চলেছে।। (৬৩৫) হে সূর্য, তুমি ক্ষিপ্রগামী, বিশ্বদ্রষ্টা ও জ্যোতির কারক। তুমি সমস্ত দীপ্ত বস্তুকে প্রকাশিত কর। (৬৩৬) হে সূর্য দেবগণের প্রজাবৃন্দকে (=রশ্মি দ্বারা সৃষ্ট জীবদের) দেখবার জন্য পশ্চিম দিকে মুখ করে উদিত হও (=পূর্বদিকে উদিত হও পশ্চিমমুখী হতে), মানুষদের দেখবার জন্য (পূর্বদিকে) পশ্চিম মুখ হয়ে উদিত হও, সর্ব জগতকে দেখবার জন্য (পূর্বদিকে) পশ্চিম মুখ হয়ে উদিত হও। (৬৩৭-৬৩৮) হে বরুণ (=সূর্য) হে পবিত্রতাকারক, তুমি যে অনুগ্রহ দৃষ্টিতে জনগণমধ্যে অবস্থিত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সৎকর্মানুষ্ঠানকারীকে দর্শন করে থাক, সেই অনুগ্রহ দৃষ্ঠিতে, হে সূর্য, তুমি রাত্রির সঙ্গে দিনকে সৃষ্টি করে, জাত প্রাণিসমূহকে অবলোকন করে দ্যুলোক এবং মহান অন্তরিক্ষলোক নানাভাবে পরিভ্রমণ কর।। (৬৩৯) রথবাহক সাতটি অশ্বকে (=সপ্ত রশ্মিকে) সূর্য তাঁর রথে যুক্ত করলেন, স্বয়ংযুক্ত সেই অশ্বের সহায়তায় তিনি গমন করছেন।। (৬৪০) হে সূর্যদেব, সাতটি অশ্ব তোমাকে রথে বহন করে; হে সর্বদ্রষ্টা, জ্যোতিই তোমার কেশ।

।।আরণ্যক কাণ্ড সমাপ্ত।। 

সামবেদ-সংহিতা – আরণ্যক কাণ্ড – ষষ্ঠ অধ্যায়

প্রথম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ৯।। দেবতা ১-৩ ইন্দ্র, ৪ বরুণ, ৫।৭।৮ পবমান সোম, ৬ বিশ্বদেবগণ, ৯ অন্ন।। ছন্দ ১ বৃহতী, ২।৯ ত্রিষ্টুপ, ৩।৭।৮ গায়ত্রী, ত্রিষ্টুপ অথবা চতুস্পদা গায়ত্রী, ৬ একপাৎ জগতী বা গায়ত্রী।।

মন্ত্রঃ-
(৫৮৬)  ইন্দ্র জ্যেষ্ঠং ন আ ভর অজিষ্ঠং পুপুরি শ্রবঃ।
যদ্‌ দিধূক্ষেম বজ্রহস্ত রোদসী উভে সুশ্রিপ্র পপ্রাঃ।।১।।
(৫৮৭) ইন্দ্রো রাজা জগতশ্চর্ষণীনাম-ধিক্ষমা বিশ্বরূপং যদস্য।
ততো দদাতি দাশুষে বসুনি চোদদ্রাধ উপস্তুতং চিদর্বাক্‌।।২।।
(৫৮৮) যস্যেদমা রজোষুজস্তুজে জনে বং স্বঃ। ইন্দ্রস্য রন্ত্যং বৃহৎ।।৩।।
(৫৮৯)  উদুত্তমং বরুণ পাশমস্মদবাধমং বি মধ্যমং শ্রথায়।
অথাদিতা ব্রতে বয়ং তবানাগসো অদিতয়ে স্যাম।।৪।।
(৫৯০)  ত্বয়া বয়ং পবমানেন সোম ভরে কৃতং বি চিনুয়াম শশ্বৎ।
তন্নো মিত্রো বরুণো মামহন্তামদিতিঃ সিন্ধুঃ পৃথিবী উত দ্যৌঃ।।৫।।
(৫৯১)  ইমং বৃষণং কৃণুতৈকমিন্‌ মাম্‌।।৬।।
(৫৯২)  স ন ইন্দ্রায় যজ্যবে বরুণায়ঃ মরুদ্‌ভ্যঃ। বারিবোবিৎ পরি স্রব।।৭।।
(৫৯৩)  এনা বিশ্বান্যর্য আ দ্যুম্নানি মানুষ্যণাম্‌। সিষাসন্তো বনামহে।।৮।।
(৫৯৪)  অহমস্মি প্রথমজা ঋতস্য পূর্বং দেবেভ্যো অমৃতস্য নাম।
যো মা দদাতি স ইদেবমাবদমন্নমদন্তমস্মি।।৯।।

অনুবাদঃ (৫৮৬) হে উদকবান বজ্রহস্ত ইন্দ্র, তুমি যে অন্নের দ্বারা দ্যু ও পৃথিবী উভয়কে ধারণ করে রেখেছ আমাদের কাছে স্যার উত্তম বলকর পুষ্টিকর অন্ন আন।। (৫৮৭) ইন্দ্র জগতের রাজা, মানুষের রাজা; পৃথিবীতে যে বিশ্বরূপ প্রকটিত তাও তাঁর। তাঁকে যিনি দান উৎসর্গ করেন; ইন্দ্র তাঁকে ধন প্রদান করেন; তিনি স্তুত হলে ধন প্রেরণ করেন।। (৫৮৮) যে ইন্দ্রের বিপুল আনন্দদায়ক জল ও তেজ এই সমস্ত যা কিছু হয়েছে তা ইন্দ্রের জ্যোতিযুক্ত বজ্রের দ্বারা জাত হয়েছে।। (৫৮৯) হে বরুণ, আমাদের উপরের পাশ খুলে দাও, নীচের পাশ খুলে দাও, কটিদেশে বন্ধ হয়ে খুলে দাও। তারপর হে আদিত্য, অমৃতরসাস্বাদের জন্য আমরা প্রমাদ রহিত হয়ে তোমার কর্মে নিযুক্ত থাকবো।। (৫৯০) হে সোম, তোমার ক্ষরণের দ্বারা কৃত যে জল তা আমরা সংগ্রহ করি; আমরা যেন চিরকালই তা সংগ্রহ করতে পারি। সুতরাং মিত্র, বরুণ, আদিতি, সিন্ধু, পৃথিবী এবং দ্যুলোক আমাদের পূজা গ্রহণ করুন।। (৫৯১) হে সোমধারা, তোমরা আমাকেও তোমাদের মতই বর্ষণশীল কর।। (৫৯২) হে ঈশ্বর, তোমার এই সকল বিশ্বধন মানুষদের। আমরা তোমার সেবা করতে ইচ্ছুক, আমরা এই বিশ্বধন কামনা করি।। (৫৯৪) আমি জলরূপে জাত হবার পূর্বে সর্বপ্রথমে দেবগণের জন্য অমৃতবারিরূপে জাত হয়েছিলাম। যিনি আমাকে দান করেন তিনিই এরূপ বলছেন আমিই অন্ন, আমিই অন্ন, আমিই অদন্ত অন্ন।।

দ্বিতীয় খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ৭।। দেবতা, ১। ৩। ৪। ৭ ইন্দ্র, ২ পাবমান সোম, ৫ বিশ্বদেবগণ, ৬ বায়ু।। ছন্দ ১। ৩। ৪। ৬ গায়ত্রী, ২ জগতী, ৫ ত্রিষ্টুপ, ৭ অনুষ্টুপ।। ঋষি ১ শ্রুতকক্ষ আঙ্গিরস, ২ পবিত্র আঙ্গিরস, ৩। ৪ মধুছন্দা বৈশ্বামিত্র, ৫ প্রথ বাসিষ্ঠ, ৬ গৎসমদ শৌনক, ৭ নৃমেধ ও পুরুমেশ আঙ্গিরস।।

মন্ত্রঃ-
(৫৯৫) ত্বমেরদধারয়ঃ। কৃজ্ঞাসু রোহিণীষু চ।। পরষ্ণীষু রুষৎ পয়ঃ।।১।।
(৫৯৬)  অরুরুচসুষসঃ পৃশ্নিরগ্রিয় উক্ষা মিমেতি ভুবনেষু বাজযুঃ।
মায়াবিনো মমিরে অস্য মায়য়া নৃচক্ষসঃ পিতরো গর্ভমাদধুঃ।।২।।
(৫৯৭)  ইন্দ্র ইদ্ধর্যোঃ সচা সস্মিশ্র আ বচোষুজা। ইন্দ্রো বজ্রী হিরণ্যয়ঃ।।৩।।
(৫৯৮)  ইন্দ্র রাজেষু নোহব সহস্রপ্রধনেষু চ। উগ্র উগ্রাভিরুতিভিঃ।।৪।।
(৫৯৯)  প্রথশ্চ যস্য সপ্রথশ্চ নামানুষ্টুভস্য হবিষো হবির্ষৎ।
ধাতুর্দ্যুতানাৎসবিতুশ্চ বিষ্ণো রথস্তরমাজভারা বসিষ্ঠঃ।।৫।।
(৬০০)  নিযুত্বান্‌ বায়বা গহ্যয়ং শুক্রো অয়াভি তে। অন্তাসি সুন্বতো গৃহম্‌।।৬।।
(৬০১)  যজ্জায়তা অপূর্ব্য মঘবন্‌ বৃত্রহত্যায়। তৎ পৃথিবীমপ্রথয়স্তদস্তভ্‌না উতো দিবম্‌।।৭।।

অনুবাদঃ (৫৯৫) হে ইন্দ্র, এই উজ্জ্বলবর্ণবিশিষ্ট জলকে তুমি কৃষ্ণবর্ণা, লোহিতবর্ণা ও কুটিলাগামিনী নদীসমূহে স্থাপন করেছ।। (৫৯৬) সূর্যোদয়ের পূর্বে ঊষার আলোক প্রকাশিত হলে (=অতি প্রত্যুষে) হিমকণারূপ উদক ক্ষরিত হয়; অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন দর্শনকারী মাধ্যমিক দেবগণ (=আকাশের মধ্যে অবস্থিত পিতৃগণ নামে অভিহিত রশ্মিগণ) সর্বতোভাবে অন্নের গর্ভ স্থাপন করেন।। (৫৯৭) ইন্দ্রই উদক ও বিদ্যুতের সম্যক্‌ মিশ্রণকর্তা (=উদক ও বিদ্যুতের মিশ্রণক্রিয়া থেকে বৃষ্টি হয়); তাঁর ইচ্ছামাত্রই রশ্মিগণ যুক্ত হয়। ইন্দ্র বজ্রধারী ও হিরণ্ময়।। (৫৯৮) হে ইন্দ্র, তুমি উগ্র (=উগ্রকার্যের দ্বারা কর্মকে মিলিত করে থাক); তোমার উগ্রতারূপ সকলপ্রকার রক্ষণ শক্তির দ্বারা অন্নে ও সহস্র ধনে আমাদের রক্ষা কর।। (৫৯৯) যার নাম প্রথ ও সপ্রথ (=যা অতিবিস্তৃত বলে পরিচিত) যা অনুষ্টুভের হবির হবি সেই রথন্তর সামগানকে ধাতা, সবিতা ও বিষ্ণুর তেজ হতে বসিষ্ঠ আহরণ করলেন।। (৬০০) হে বায়ু, তুমি নিষুতগণকে নিয়ে এস; এই উজ্জ্বল সোমরস তোমার জন্য। তুমি সোম অভিষবকারীর গৃহে যাও।। (৬০১) হে অপূর্ব মঘবান ইন্দ্র, তুমি মেঘহননের জন্য যখন জন্মেছ তখন পৃথিবীকে প্রথিত করেছ আর দ্যুলোককে স্তব্ধ করেছ।।

তৃতীয় খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১৩।। দেবতা ১ প্রজাপতি, ২। ৩ সোম, ৪। ৫। ৮। ১৩ অগ্নি, ৬ অপাংনপাৎ, ৭ রাত্রি, ৯ বিশ্বদেবগণ; ১০ লিঙ্গোক্ত, ১১ ইন্দ্র ১২ আত্মা বা অগ্নি।। ছন্দ ত্রিষ্টুপ, ১। ৭ অনুষতুপ, ৪ গায়ত্রী, ৮। ৯ জগতী, ১০ মহাপঙক্তি।। ঋষি ১। ৫। ৭। ১০ বামদেব গৌতম, ২। ৩ গৌতম রাহুগণ, ৫ মধুচ্ছন্দা বৈশ্বামিত্র, ৬ গৃৎসমদ্‌ শৌনক, ৮ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, ৯ ঋজিশ্বা ভারদ্বাজ, ১১ হিরণ্যস্তুপ আঙ্গিরস, ১২। ১৩ বিশ্বামিত্র গাথিন।।

মন্ত্রঃ-
(৬০২)  মহি বর্চো অথৌ যশহথো যজ্ঞস্য যৎ পয়ঃ। পরমেষ্ঠী প্রজাপতি র্দিবি দ্যামিব দৃংহতু।।১।।
(৬০৩)  সং তে পয়াংসি সমু যন্তু বাজাঃ সং বৃষ্ণয়ান্যভিমাতিষাহঃ।
আপ্যায়মাণ অমৃতায় সোম দিবি শ্রবাংস্যুত্তমানি ধিষ্ব।।২।।
(৬০৪)  ত্বমিমা ওষধী; সোম বিশ্বাস্তমপো অজনয়স্তৎ গাঃ।
ত্বমাত্নোরুর্বাহন্তরিক্ষং ত্বং জ্যোতিষা বি তমো ববর্থ।।৩।।
(৬০৫)  অগ্নিমীলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্‌। হোতারং রত্নধাতম।।৪।।
(৬০৬)  তে মন্বত প্রথমং গোনাং ত্রিঃ সপ্ত পরমং নাম জানন্‌।
তা জানতীরভানুষত ক্ষা আবির্ভূবন্নরুনীর্যশস্য গাবঃ।।৫।।
(৬০৭)  সমন্যা যন্ত্যুপয়ন্তান্যাঃ সমানমূর্বং নদ্যস্পৃণন্তি।
তমু শূচিং শুচয়ো দীদিবাংসমপান্নপাতমুপ যন্ত্যাপঃ।।৬।।
(৬০৮)  আ প্রাগাদ ভদ্রা যুবতিরহ্বঃ কেতুন্‌ৎসমীৎর্সতি।
অভূদ্‌ ভদ্রা নিবেশনী বিশ্বস্য জগতো রাত্রী।।৭।।
(৬০৯)  প্রক্ষস্য বৃষ্ণো অরুষস্য নূ মহঃ প্র নো বগচো বিদথা জাতবেদসে।
বৈশ্বানরায় মলির্নব্যসে শুচিঃ সোম ইব পবতে চারুরগ্নয়ে।।৮।।
(৬১০)  বিশ্বে দেবা মম শৃন্বন্তু যজ্ঞমুভে রোদসী অপাং নপাচ্চ মম্ন।
মা বো বচাংসি পরিচক্ষ্যণি বোচং সুম্নেষ্বিদ্‌ বো অন্তমা মদেম্‌।।৯।।
(৬১১)  যশো মা দ্যাবাপৃথিবী যশ্যে মেন্দ্রবৃহস্পতী।
যশো ভগস্য বিন্দতু যশো মা প্রতিমুচ্যত্যম্‌ যশসাত স্যাঃ সংসদোহহম্‌ প্রবদিতা স্যাম্‌।।১০।।
(৬১২)  ইন্দ্রস্য নু বীর্যাণি প্রবোচং যানি চকার প্রথমানি বজ্রী।
        অহন্নহিমন্বপস্ততর্দ প্র বক্ষণা অভিনৎ পর্বতানাম্‌।।১১।।
(৬১৩)  অগ্নিরশ্মি জন্মনা জাতবেদা ঘৃতং মে চক্ষুরমতৃং ম আসন্‌।
        ত্রিধাতুরর্কো রজসো বিমানোহজস্রং জ্যোতির্হাবরশ্মি সর্বম্‌।।১২।।
(৬১৪)  পাত্যাগ্নির্বিপো অগ্রং পদং বেঃ পাতি যহ্বশ্চরং সূর্যস্য।
        পাতি নাভা সপ্তশীর্ষানমগ্নিঃ পাতি দেবানামুপমাদমৃম্বঃ।।১৩।।

অনুবাদঃ (৬০২) যজ্ঞসাধনভূত যে অন্ন, বল ও জল আমাতে আছে তা পরমেষ্ঠী প্রজাপতি দ্যুলোক আকাশের মত ধারণ করুন। (৬০৩) হে সোম, তোমার জলরাশি অন্ন বীর্য বর্ধন করুক ও অপশক্তি নাশ করুক; তুমি অমরত্বের জন্য বৃদ্ধিলাভ করে দ্যুলোকে উত্তম অন্ন ধারণ কর। (৬০৪) হে সোম, তুমি সকল ওষধী, জলরাশি ও পশুদের সৃষ্টি করেছ; তুমি জ্যোতির দ্বারা তমোনাশ করে বিশাল আকাশকে আরও বিস্তৃত করেছ। (৬০৫) অগ্নিকে আমি পূজা করি, তিনি যজ্ঞের পুরোহিত, ঋত্বিক্‌, হোতা এবং অতি উৎকৃষ্ট ধনদাতা। (৬০৬) তাঁরা (সপ্ত ঋষিগণ বা রশ্মিগণ) প্রথমে তিনলোকে গোরশ্মিসমূহের নমন অনুমোদন করলেন এবং সপ্তলোকে রশ্মিগণের উৎকৃষ্ট নমন বিষয়ে জানলেন। ঊষাকালে সেই দীপ্ত অরুণবর্ণা রশ্মিগণ উদকের সঙ্গে আবির্ভূত হয়ে পৃথিবীকে স্তব করেছিলেন। (৬০৭) সমানভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জল একে অন্যের সঙ্গে মেশে; সমান ভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সমুদ্রকে নদীসমূহ প্রীত করে। সেই নির্মল জলরাশি শুচি ও দীপ্যমান অপাং নপাৎ (=অগ্নি) দেবতা অভিমুখে গমন করে। (৭০৮) কল্যাণময়ী ঊষা সর্বপ্রথমে উচ্চাকাশে দিনের আলো প্রেরণ করে প্রজ্ঞা সৃষ্টি করেন; কল্যাণী রাত্রি দেবী জগতের সকলপ্রাণীর সুখের আশ্রয় স্বরূপা। (৬০৯) সর্বব্যাপী, বর্ষণকারক, দীপ্তিমান, মহান জাতবেদা অগ্নির উদ্দেশে এই জ্ঞানময় স্তুতি করছি। বিশ্বের প্রিয় বৈস্বানর অগ্নির উদ্দেশে এই নবীন শূচি স্তোত্র সোমের (=জলের মত) নির্গত হচ্ছে। (৬১০) বিশ্বদেবগণ (=সকল রশ্মিগণ), দ্যুলোক ও পৃথিবী উভয়ে এবং অপাং নপাৎ অগ্নি (=জলের রক্ষক বা জলের পৌত্র অগ্নি) আমার এই বুদ্ধিপূর্বক রচিত স্তোত্র শ্রবণ কর। তোমরা আমার এই স্তোত্র বর্জন কোরো না; তোমাদের আনন্দের মধ্যে বাস করে আমরাও হৃষ্ট হবো। (৬১১) দ্যুলোক ও পৃথিবী আমাকে যশ (=অন্ন, জল ও সম্পদ) দান করুন, ইন্দ্র ও বৃহস্পতি যশ দান করেন; ভগদেবতার (=সূর্যের) যশ আমি যেন প্রাপ্ত হই; যশ আমাকে সুপ্রকাশিত করুক। যশের সহায়ে আমি সভাতে যেন সুবক্তা হই। (৬১২) ইন্দ্রর বিরত্বব্যঞ্জক কর্মসমূহ এখনই বলছি। যে কর্মসমূহ বজ্রধারী ইন্দ্র প্রথম থেকেই করে আসছেন। তিনি মেঘকে হনন করেন; পরে বারিরাশিকে ভূমিতে পাতিত করেন; এবং পর্বত ভেদ করে নদীসমূহকে প্রবাহিত করেন। (৬১৩) আমি অগ্নি, আমি জন্ম থেকেই জ্ঞানযুক্ত, ঘৃত (বা জল) আমার চক্ষু, অমৃত আমার মুখে। আমিই তিন লোক ধারণ করে আছি; আমিই ঋক্‌, আমি অন্তরিক্ষের পরিমাপকারী, আমিই অজস্র জ্যোতি; আমিই সকল হবি (=অন্ন বা জল)। (৬১৪) বিপ্র অগ্নি রক্ষাকর্তা; তিনি প্রথমে গমনশীল সূর্যের বিচরণস্থল আকাশকে রক্ষা করেন এবং প্রাণবায়ু মরুদ্‌গণকে রক্ষা করেন। মহান অগ্নি দেবগণের হর্ষকেও রক্ষা করেন।

চতুর্থ খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১২।। দেবতা ১।২ অগ্নি, ৩-৭ পুরুষ, ৮ দ্যাবাপৃথিবী, ৯-১১ ইন্দ্র, ১২ গোগণ (=রশ্মিগণ)।। ছন্দ অনুষ্টুপ, ১-২ পঙ্‌ ক্তি, ৮।১১।১২ ত্রিষ্টুপ।।

মন্ত্রঃ-
(৬১৫)  ভ্রাজন্ত্যগ্নে সমিধান দীদিবো জিহ্বা চরত্যন্তরাসনি।
স ত্বং নো অগ্নে পয়সা বসুবিদ্‌ রয়িং বর্চো দৃশেহদাঃ।।১।।
(৬১৬)  বসন্ত ইন্নু রন্ত্যো গ্রীষ্ম ইন্নু রন্তাঃ।
        বর্ষাণ্যনু শরদো হেমন্তঃ শিশির ইন্নু রন্ত্যঃ।।২।।
(৬১৭)  সহস্রশীর্ষাঃ পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ।
        স ভূমিং সর্বতো বৃত্বাত্যতিষ্ঠদ্‌ দশাঙ্গুলম্‌।।৩।।
(৬১৮)  ত্রিপাদূর্ধ্ব উদৈৎ পুরুষ পাদহস্যেহাভবৎ পুনঃ।
        তথা বিম্বঙ্‌ ব্যক্রামদশনানশনে অভি।।৪।।
(৬১৯)  পুরুষ এবেদং সর্বং যদ্‌ ভূতং যচ্চ ভাব্যম্‌।
        পাদোহস্য সর্বা ভূতানি ত্রিপাদস্যামৃতং দিবি।।৫।।
(৬২০)  তাবানস্য মহিমা ততো জ্যয়াংশ্চ পুরুষঃ।
        উতামৃতত্বস্যেশানো যদন্নেনাতিরোহতি।।৬।।
(৬২১)  ততো বিরাডজায়ত বিরাজো অধি পুরুষঃ।
        স জাতো অত্যরিচ্যত পশ্চাদ্‌ ভূমিমথো পুরঃ।।৭।।
(৬২২)  মন্যে বাং দ্যাবাপৃথিবী সুভোজসৌ যে অপ্রথেথামমিতমভি যোজনম্‌।
        দ্যাবাপৃথিবী ভবতং স্যেনো তে নো মুঞ্চতমংহসঃ।।৮।।
(৬২৩)  হরী তে ইন্দ্র শ্মশ্রুণ্যুতো তে হরিতৌ হরী।
        তং ত্বা স্তুবন্তি কবয়ঃ পুরুষাসো বনর্গবঃ।।৯।।
(৬২৪)  যদ্‌ বর্চো হিরণ্যস্য ষদ্‌ বা বর্চো গবামৃত।
        সত্যস্য ব্রহ্মণো বর্চস্তেন মা সংসৃজামসি।।১০।।
(৬২৫)  সহস্তন্ন ইন্দ্র দগ্ধযোজ ঈশে হ্যস্য মহতো বিরপ্‌শিন্‌।
        ক্রতুং ন নৃমণং স্থবিরং চ বাজং বৃত্রেষু শত্রুন্‌ৎসহনা কৃধী নঃ।।১১।।
(৬২৬)  সহর্শভাঃ সহবৎসা উদেত বিশ্বা রূপাণি বিভ্রতীর্দব্যুধ্নীঃ।
        উরুঃ পৃথুরয়ং বো অন্তু লোক ইমা আপঃ সুপ্রপাণা ইহ স্ত।।১২।।

অনুবাদঃ (৬১৫) হে প্রজ্জ্বলিত জ্যোতির্ময় অগ্নি, তোমার মুখ মধ্যে জিহ্বা বিচরণ করে (=তোমার মধ্যে বাক্‌ অবস্থিত)। হে অগ্নি, হে পরমধন, তুমি আমাদের অন্ন সহ রমণীয় ধন ও তেজ জ্ঞানদৃষ্টির জন্য দান কর।। (৬১৬) বসন্ত কালই রমণীয়, গ্রীষ্মও রমণীয়, বর্ষাকালের পরে শরৎ হেমন্ত ও শীতকালও রমণীয়।। (৬১৭) পুরুষের (=এই আত্মার) সহস্র মস্তক, সহস্র চক্ষু, সহস্র পদ। তিনি পৃথিবীর সকল দিক ব্যাপ্ত করে দশ আঙ্গুল পরিমাণ অতিরিক্ত থেকে অবস্থান করেন।। (৬১৮) পুরুষের তিন পদ ঊর্ধ্বমুখী, আর এক পদ (=এক অংশ) এই বিশ্বকে বার বার প্রকটিত করে। তারপর তিনি ভোজনকারী (=প্রাণ বা চৈতন্যযুক্ত) এবং ভোজন রহিত (=অচেতন) তাবৎ বস্তুতে ব্যাপ্ত হন।। (৬১৯) এই পুরুষই এই সব যা কিছু, যা হয়েছে এবং যা হবে। তাঁর এক পদ-ই এই সকল বস্তু, আর দ্যুলোকে অমরণধর্মা তিন পদ অবস্থান করে।। (৬২০) সেই পুরুষের মহিমা এরূপ হলেও তিনি তাঁর সৃষ্টির চেয়ে মহৎ। এর এই সর্বেশ্বরের অমৃতত্বের কারণ তিনি অন্নভোগের দ্বারা অতিরোহণ করেন (ভোগকে অতিক্রম করে ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন)।। (৬২১) তাঁহা হতে বিরাট্‌ (=ব্রহ্মান্ড) জাত হয়েছে এবং তিনি সেই বিরাটে অধিষ্ঠিত পুরুষরূপে বিরাজমান। তারপর তিনি সেই ভাবে পৃথিবী এবং জীবদেহে অবস্থান করেও অতিরিক্ত রূপে (পৃথকভাবে) অবস্থান করেন।। (৬২২) হে দ্যুলোক ও পৃথিবী, আপনারা শোভন পালয়িত্রী তা আমি জানি; আপনারা অপরিমিত ধন ও সুখ দান করুন; হে দ্যাবাপৃথিবী, আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করুন।। (৬২৩) হে ইন্দ্র, তোমার রশ্মিসকল হরিৎবর্ণ, আর তোমার অশ্বদ্বয় (=দেশ ও কাল) সকল কিছু হরণকারী। কবিগণ, পুরুষগণ, জ্ঞানভক্তিযুক্ত সেবকগণ তোমাকে স্তব করেন।। (৬২৪) হিতরমনীয় যে জ্যোতি অথবা স্নিগ্ধ যে জ্যোতি, এবং সত্যস্বরূপ ব্রহ্মের যে জ্যোতি, তার সঙ্গে আমি যেন নিজেকে যুক্ত করতে পারি।। (৬২৫) হে শব্দকারী (বা সত্য বাক্যযুক্ত) ইন্দ্র, তোমার পরাভবকারী তেজ ও বল আমাদের দাও। তুমিই মহৎ বলের ঈশ্বর। সৎকর্মের দ্বারা যে ধন লাভ হয় সেই পরম ধন ও অমিত শক্ত আমাদের দাও। আমাদের পাপনাশক শক্তির উপায় বলে দাও।। (৬২৬) মনবাঞ্ছা পূর্ণকারী, সৎকর্মের সৃষ্টিকারী ও ধারক, হে অমৃতধারা, তোমরা আমাদের প্রাপ্ত হও; বিপুল এই বিশ্ব তোমাদের কৃপার অধীন হোক; তোমাদের অমৃতধারা আমাদের অনায়াসলভ্য হোক।

পঞ্চম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১৪।। দেবতা ১ পবমান অগ্নি, ২-১৪ সূর্য (৪-৬ সূর্য বা আত্মা)।। ছন্দ ১, ৪-১৪ গায়ত্রী, ২ জগতী, ত্রিষ্টুপ।। ঋষি ১ শতং বৈখানস, ২ বিভ্রাট্‌ সৌর্য, ৩ কুৎস আঙ্গিরস, ৪-৬ সর্পরাজ্ঞী, ৭-১৪ প্রস্কণ্ব কান্ব।।

মন্ত্রঃ-
(৬২৭)  অগ্ন আয়ুংসি পবস আসুবোর্জভিষং চ নঃ।
আরে বাধস্ব দুচ্চুনাম্‌।।১।।
(৬২৮)  বিভ্রাড্‌ বৃহৎপিবতু সোম্যং মধ্বায়ুর্দধদ্যজ্ঞপতাববিহূতম্‌।
বাতজূতো যো অভিরক্ষতি ত্মনা প্রজাঃ পিপর্তি বহূধা বি রাজতি।।২।।
(৬২৯)  চিত্রং দেবানামুদ্‌গাদনীকং চক্ষুর্মিত্রস্য বরুণস্যাগ্নেঃ।
        আপ্রা দ্যাবাপৃথিবী অন্তরিক্ষং সূর্য আত্মা জগতস্তথুষশ্চ।।৩।।
(৬৩০)  আয়ং গৌঃ পৃশ্নিরক্রমীদসদন্মতরং পুরঃ।
        পিতরং চ প্রযন্‌ৎস্ব।।৪।।
(৬৩১)  অশতশ্চরতি রোচনাস্য প্রাণাদপানতী।
        ব্যখ্যন্মহিষো দিবম্‌।।৫।।
(৬৩২)  ত্রিংশদ্ধাম বি রাজতি বাক্‌ পতঙ্গায় ধীয়তে।
        প্রতি বস্তোরহ দ্যুভিঃ।।৬।।
(৬৩৩)  অপ ত্যে তায়বো যথা নক্ষত্রা যন্ত্যক্তুভিঃ সুরায় বিশ্বচক্ষসে।।৭।।
(৬৩৪)  অদৃশ্রন্নস্য কেতবো বি রশ্ময়ো জনাঁ অনু।
        ভ্রাজন্তো অগ্নয়ো যথা।।৮।।
(৬৩৫)  তরণির্বিশ্বদর্শতো জ্যোতিস্কৃদসি সূর্য।
        বিশ্বমাভাসি রোচনম্‌।।৯।।
(৬৩৬)  প্রত্যঙ্‌ দেবানাং বিশঃ প্রত্যঙ্‌ ঙুদেষি মানষান্‌।
        প্রত্যঙ্‌ বিশ্বং স্বর্দৃশে।।১০।।
(৬৩৭)  যেনা পাবক চক্ষসা ভুরণ্যন্তং জনাঁ বরুণ পশ্যসি।।১১।।
(৬৩৮)  উদ্‌ দ্যামেষি রজঃ পৃথ্বহা মিমানো অক্তুভিঃ।
        পশ্যঞ্জন্মানি সূর্য।।১২।।
(৬৩৯)  অযুক্ত সপ্ত শন্ধ্যুবঃ সূরো রথস্য নপত্র্যঃ।
        তাভির্মাতি স্বযুক্তিভিঃ।।১৩।।
(৬৪০)  সপ্ত ত্বা হরিতো রথে বহন্তি দেব সূর্য।
শোচিস্কেশং বিচক্ষণ।।১৪।।

অনুবাদঃ (৬২৭) হে অগ্নি, তুমি আমাদের আয়ু দাও; বল ও অন্ন দাও; দুষ্ট প্রকৃতির দূরে রাখ।। (৬২৮) অতি দীপ্ত সূর্যদেব মধুর সোম পান করুন, যজ্ঞকারীর (-সৎকর্মকারীর) আয়ু বৃদ্ধি করুন। তিনি বায়ু দ্বারা প্রেরিত হয়ে প্রজাদের স্বয়ং রক্ষা করেন, পালন করেন ও বহুরূপে বিরাজ করেন।। (৬২৯) বিচিত্র রশ্মিসমূহের সমষ্টিরূপ সূর্য উদিত হয়েছেন; তিনিই মিত্র, বরুণ ও অগ্নির চক্ষুস্বরূপ; দ্যুলোক, ভূলোক ও অন্তরিক্ষ স্বীয় মহত্ত্বে পূর্ণ করেছেন। সূর্য স্থাবর ও জঙ্গমের আত্মা।। (৬৩০) এই নানারূপ বিচিত্র বর্ণ গমনশীল অগ্নি (=সূর্য) পূর্বদিকে উদিত হয়ে মাতা পৃথিবীকে প্রাপ্ত হন, পরে দ্যুলোকে আকাশপথে গমন করেন। (৬৩১) এঁর দীপ্ত এঁর দেহের মধ্যে (বা দ্যু ও পৃথিবীমধ্যে) বিচরণ করে, এবং এঁর প্রাণ হতে নিঃশ্বাসরূপে প্রাণবায়ু নির্গত হয় (=এঁর প্রাণই বাহিরে নির্গত হয় প্রাণবায়ু রূপে); ইনিই দ্যুলোকে বিপুলাকৃতি ধারণ করে ব্যাপ্ত হন।। (৬৩২) তিরিশ স্থানে ইনি বিরাজ করেন (=সৌর মাস তিরিশ দিনের কথা বলা হয়েছে); পতঙ্গের মত গমশীল এই সূর্যের উদ্দেশে স্তব উচ্চারিত হয়। তিনি দিবারাত্র নিজ করণে উদ্‌ভাসিত।। (৬৩৩) সর্বজগতের প্রকাশক সূর্যের উদয়ে নক্ষত্রগণ রাত্রির সঙ্গে চোরের মত পালিয়ে গেল।। (৬৩৪) দীপামান অগ্নির মত সূর্যের প্রজ্ঞানরূপ, রশ্মিসকল মানুষদের লক্ষ্য করতে করতে চলেছে।। (৬৩৫) হে সূর্য, তুমি ক্ষিপ্রগামী, বিশ্বদ্রষ্টা ও জ্যোতির কারক। তুমি সমস্ত দীপ্ত বস্তুকে প্রকাশিত কর। (৬৩৬) হে সূর্য দেবগণের প্রজাবৃন্দকে (=রশ্মি দ্বারা সৃষ্ট জীবদের) দেখবার জন্য পশ্চিম দিকে মুখ করে উদিত হও (=পূর্বদিকে উদিত হও পশ্চিমমুখী হতে), মানুষদের দেখবার জন্য (পূর্বদিকে) পশ্চিম মুখ হয়ে উদিত হও, সর্ব জগতকে দেখবার জন্য (পূর্বদিকে) পশ্চিম মুখ হয়ে উদিত হও। (৬৩৭-৬৩৮) হে বরুণ (=সূর্য) হে পবিত্রতাকারক, তুমি যে অনুগ্রহ দৃষ্টিতে জনগণমধ্যে অবস্থিত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সৎকর্মানুষ্ঠানকারীকে দর্শন করে থাক, সেই অনুগ্রহ দৃষ্ঠিতে, হে সূর্য, তুমি রাত্রির সঙ্গে দিনকে সৃষ্টি করে, জাত প্রাণিসমূহকে অবলোকন করে দ্যুলোক এবং মহান অন্তরিক্ষলোক নানাভাবে পরিভ্রমণ কর।। (৬৩৯) রথবাহক সাতটি অশ্বকে (=সপ্ত রশ্মিকে) সূর্য তাঁর রথে যুক্ত করলেন, স্বয়ংযুক্ত সেই অশ্বের সহায়তায় তিনি গমন করছেন।। (৬৪০) হে সূর্যদেব, সাতটি অশ্ব তোমাকে রথে বহন করে; হে সর্বদ্রষ্টা, জ্যোতিই তোমার কেশ।


।।আরণ্যক কাণ্ড সমাপ্ত।।