Friday, June 26, 2015

সামবেদ-সংহিতা - পাবমান কাণ্ড – পঞ্চম অধ্যায়

প্রথম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।। দেবতা পাবমান সোম।। ছন্দ গায়ত্রী।। ঋষি ১।৪ অহমীয়ু আঙ্গিরস, ২ মধুছন্দা বৈশ্বামিত্র, ৩ ভূণ্ড বারুণি বা জমদগ্নি ভার্গব, ৫ ত্রিত আপ্ত্য, ৬ কাশ্যপ মারীচ, ৭ জমদগ্নি ভার্গব, ৮ দৃঢ়চ্যুত আগস্ত্য, ৯।১০ কাশ্যপ আদিত বা দেবল।।

মন্ত্রঃ-
(৪৬৭)  উচ্চা তে জাতমন্ধসো দিবি সদ্‌ভুম্যা দদে। উগ্রং শর্ম মহি শ্রবঃ।।১।।
(৪৬৮)  স্বাদিষ্ঠয়া মদিষ্ঠয়া পবস্ব সোম ধারয়া। ইন্দ্রায় পাতবে সুতঃ।।২।।
(৪৬৯)  বৃষা পবস্ব ধারয়া মরুত্বতে চ মৎসরঃ। বিশ্বা দধান ওজসা।।৩।।
(৪৭০)  যস্তে মদো বরেণ্যস্তেনা পবস্বান্ধসা। দেবাবীরম্বশংসহা।।৪।।
(৪৭১)  তিস্রো বাচ উদীরতে গাবো মিমস্তি ধেনবঃ। হরিরেতি কনিক্রদৎ।।৫।।
(৪৭২)  ইন্দ্রায়েন্দো মরুত্বতে পবস্ব মধুমত্তমঃ। অর্কস্য যোনিমাদসম্‌।।৬।।
(৪৭৩)  অসাব্যংশুর্মদায়াপ্‌সু দক্ষো গিরিষ্ঠাঃ। শ্যোনো ন যোনিমাসদৎ।।৭।।
(৪৭৪)  পবস্ব দক্ষসাধনো দেবেভ্যঃ পীতয়ে হরে। মরুদ্ভ্যে বয়বে মদঃ।।৮।।
(৪৭৫)  পরি স্বানো গিরিষ্ঠাঃ পবিত্রে সোমো অক্ষরৎ। মদেষু সর্বধা অসি।।৯।।
(৪৭৬)  পরি প্রিয়া দিবঃ কবির্বয়াংসি নপ্ত্যোর্হিতঃ। স্বানৈর্যাতি কবিক্রতুঃ।।১০।।

অনুবাদঃ (৪৬৭) (হে পবমান সোম), ঊর্ধ্বলোকে অন্নরসরূপে উৎপন্ন জল ভূমিতে পতিত হয়ে প্রচুর অন্ন, বল ও সুখ দান করে।। (৪৬৮) হে সোম, তুমি ইন্দ্রের পানের জন্য অভিযুত হয়েছ; অতি সুস্বাদু ও আনন্দজনক ধারায় ক্ষরিত হও।। (৪৬৯) হে বর্ষণকারী, মরুদ্‌গণসমন্বিত ইন্দ্রের আনন্দের জন্য আনন্দধারা প্রবাহিত কর, যারা সকলকিছু বলের দ্বারা ধারণ করে আছেন।। (৪৭০) হে সোম, যে আনন্দ বরণীয়, যা দেবগণকে মত্ত করে এবং অন্ধকার নাশ করে সেই অন্নরূপ আনন্দরস ধারণ করে ক্ষরিত হও।। (৪৭১) তিনপ্রকার স্তুতিবাক্য (=ঋক, যজুঃ, সাম) ঊর্ধ্বলোকে যাচ্ছে, আকাশে অবস্থিত রশ্মিগণ ও বাকরূপী ধেনুগণ শব্দ করছে (=মেঘগর্জন); হরিৎবর্ণ সোম শব্দ করতে করতে যাচ্ছেন।। (৪৭২) হে সোম, তুমি মরুদ্‌গণের সঙ্গে যুক্ত ইন্দ্রের পাণের জন্য মধুরতম রসরূপে ক্ষরিত হও; ইন্দ্রের গৃহে তোমার বাস।। (৪৭৩) মেঘে অবস্থিত কর্মকুশল সোম আনন্দের জন্য অভিযুত হয়ে শ্যেন (=রশ্মি) যেমন দ্রুতবেগে ধায় সেই ভাবে আপনস্থানে (=আকাশে) গিয়ে বসলেন।। (৪৭৪) হে হরিৎবর্ণ সোম, তুমি আনন্দদায়ক, কুশলকর্ম নিষ্পাদক; তুমি দেবগণের (রশ্মিগণের) মরুদ্‌গণের (=প্রাণবায়ুগণের) ও বায়ুর (=ইন্দ্রের) পানের জন্য ক্ষতির হও।। (৪৭৫) সুন্দররূপে পরিচালিত হয়ে মেঘস্থিত সোম রশ্মিকে আশ্রয়ে করে ক্ষরিত হলেন। হে সোম, তুম আনন্দের মধ্যে সকল কিছু ধারণ কর।। (৪৭৬) সুষ্ঠুরূপে পরিচালিত হয়ে সর্বকর্মা ক্রান্তদর্শী প্রিয় সোম দ্যুলোকে জলের মধ্যে নিহিত রশ্মিরূপ পাখীদের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য যাচ্ছেন।।

দ্বিতীয় খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।। দেবতা পাবমান সোম।। ছন্দ গায়ত্রী।। ঋষি ১ কবি মেধাবী, ২ শ্যাবাশ্ব আত্রেয়, ৩ ত্রিত আপ্তা, ৪।৮ অহমীয়ু আঙ্গিরস, ৫ ভূণ্ড বারুণি, ৬ কাশ্যপ মারীচ, ৭ নিধ্রুবি কাশ্যপ, ৯।১০ কাশ্যপ আদিত বা দেবল।। (এই খণ্ডের মন্ত্রগুলির দেবতা বিষয়ে উল্লেখ সকল পুস্তকে একরূপ নয়)।।

মন্ত্রঃ-
(৪৭৭)  প্র সোমাসো মদচ্যুতঃ শ্রবসে নো মধোনাম্‌। সূতা বিদথে অক্রমুঃ।।১।।
(৪৭৮)  প্র সোমাসো বিপশ্চিতোহপো নয়ন্ত ঊর্ময়ঃ। বনানি মহিষা ইব।।২।।
(৪৭৯)  পবস্বেন্দো বৃষা সূতঃ কৃধী তনো যশসো জনে বিশ্বা অপ দ্বিশো জহি।।৩।।
(৪৮০)  বৃষা হ্যসি ভানুনা দ্যুমন্তং ত্বা হবামহে। পবমান স্বর্দৃশম্‌।।৪।।
(৪৮১)  ইন্দুঃ পবিষ্ট চেতনঃ প্রিয়ঃ কবীনাং মতিঃ। সৃজদশ্বৎ রথীরিব।।৫।।
(৪৮২)  অসৃক্ষত প্র বাজিনো গব্যা সোমাসো অশ্বয়া। শুক্রাসো বীরয়াশবঃ।।৬।।
(৪৮৩)  প্রবস্ব দেব আয়ুষগিন্দ্রং গচ্ছতু তে মদঃ। বায়ুমা রোহ ধর্মণা।।৭।।
(৪৮৪)  পবমানো অজীজনদ্‌ দিবশ্চিত্রং ন তন্যতুম্‌। জ্যোতির্বৈশ্বানরং বৃহৎ।।৮।।
(৪৮৫)  পরি স্বানাস ইন্দবো মদায় বর্হনা গিরা। মধো অর্ষন্তি ধারয়া।।৯।।
(৪৮৬)  পরিপ্রাসিষ্যদৎ কবিঃ সিন্ধোরূর্মাবধি শ্রিতঃ। কারুং বিভ্রৎ পুরুস্পৃহম্‌।।১০।।

অনুবাদঃ (৪৭৭) মদ্রস্রাবী সোমসকল যজ্ঞে অভিষুত হয়ে আমাদের জন্য ধনসমূহের শ্রেষ্ঠ অন্নধনের জন্য (ঊর্ধ্বে) গমন করেছেন।। (৪৭৮) মহান মাধ্যমিক রশ্মিগণের মত অজ্ঞানতানাশক সোম জলতরঙ্গ সমূহকে ঊর্ধ্বে নিয়ে যাচ্ছেন।। (৪৭৯) হে বর্ষণকারী ইন্দ্র (=সোম) অভিষুত হয়ে ক্ষরিত হও, লোকমধ্যে আমাদের যশস্বী কর, সকল দ্বেষ নাশ কর।। (৪৮০) হে পবমান সোম, তুমিই বর্ষণকারী; সূর্যের দ্বারা সূর্যরশ্মির মত ঔজ্জ্বল্যযুক্ত তোমাকে আহবান করি।। (৪৮১) ইন্দু (=সোম) অতি পবিত্র, চেতনাসম্পন্ন, প্রিয়, কবিগণের বুদ্ধি; তিনি ইন্দ্রের মত (রথী=ইন্দ্র) জলমধ্যে বিদ্যুৎ (অশ্ব=রশ্মি, বিদ্যুৎ) সৃষ্টি করতে করতে ব্যাপ্ত হন।। (৪৮২) উজ্জ্বল বীরত্বব্যঞ্জক দুগ্ধমিশ্রিত সোমরস রশ্মিদ্বারা (বা বিদ্যুৎ সহযোগে) অন্নসমূহ সৃষ্টি করলেন।। (৪৮৩) হে সোম, তোমার হর্ষ, আয়ুহিতরক অন্ন-সৃষ্টিকারক ইন্দ্রের প্রতি গমন করুক; সত্যকর্মের দ্বারা বায়ুতে আরোহণ কর (=বৃষ্টিপ্রদানের জন্য বায়ুকে আশ্রয় কর); হে দেব, ক্ষরিত হও।। (৪৮৪) সোম, ক্ষরিত হতে হতে আকাশে বৈশ্বানরের মত (=সূর্যের মত) বৃহৎ জ্যোতি বিচিত্র বিদ্যুৎকে সৃষ্টি করলেন।। (৪৮৫) বহনকারী রশ্মির দ্বারা শব্দের দ্বারা সুষ্ঠুরূপে পরিচালিত বারিরাশি আনন্দের জন্য (=প্রাণীকুলের আনন্দের জন্য) মধুর ধারায় গমন করছেন (=বর্ধিত হচ্ছেন)।। (৪৮৬) বহুলোকের আরাধ্য কর্মকে ধারণ করতে করতে (=বারিরাশিকে ধারণ করতে করতে) সমুদ্রতরঙ্গের উপর নিক্ষিপ্ত হয়ে কবি সোম স্থিত হলেন।।

তৃতীয় খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতা পবমান সোম।। ছন্দ গায়ত্রী।। ঋষি ১।৮।৯ অমহীয়ু, আঙ্গিরস, ২ বৃহন্মতি আঙ্গিরস, ৩ জমদগ্নির্ভাগবঃ ৪ প্রভুবসু আঙ্গিরস, ৫ মেধ্যাতিথি কান্ব ৬।৭ নিধ্রুবি ক্যাশপ, ১০ উচথ্য আঙ্গিরস।। 


মন্ত্রঃ-
(৪৮৭)  উপো যু জাতমপ্তুরং গোভির্ভঙ্গং পরিষ্কৃতম্‌। ইন্দুওং দেবা অযাসিষুঃ।।১।।
(৪৮৮)  পুনানো অক্রমীদভি বিশ্বা মৃধো বিচর্ষণিঃ। শুম্ভন্তি বিপ্রং ধীতিভিঃ।।২।।
(৪৮৯)  আবিশন্‌ কলশং সুতো বিশ্বা অর্ষন্নভি শ্রিয়ঃ। ইন্দুরিন্দ্রায় ধীয়তে।।৩।।
(৪৯০)  অসর্জি রথ্যো যথা পবিত্রে চম্বোঃ সুতঃ। কার্ষ্মন্‌ বাজী ন্যক্রমীৎ।।৪।।
(৪৯১)  প্র যদ্‌ গাবো ন ভূর্ণয়স্তেষা অযাসো অক্রমুঃ। ঘ্নন্তঃ কৃষ্ণামপত্বচম্‌।।৫।।
(৪৯২)  অপ ঘ্নন্‌ পবসে মৃধঃ ক্রতুমিৎসোম মৎসরঃ। নুদস্বা দেবযুং জনম্‌।।৬।।
(৪৯৩)  অয়া পবস্ব ধারয়া যয়া সূর্যমরোচয়ঃ। হিন্বায়ো মানুষীরপঃ।।৭।।
(৪৯৪)  স পবস্ব য আবিথেন্দ্রং বৃত্রায় হন্তবে। বব্রিবাংসং মহীরপঃ।।৮।।
(৪৯৫)  অয়া বীতী পরি স্রব যস্ত ইন্দো মদেষ্বা। অবাহন্‌ নবতীর্নব।।৯।।
(৪৯৬)  পরি দ্যুক্ষং সনদ্‌ রয়িং ভরদ্বাজং নো অন্ধসা। স্বানো পবিত্র আ।।১০।।

অনুবাদঃ (৪৮৭) শব্দের দ্বারা বিদলিত শুদ্ধীকৃত যথাসময়ে বর্ষণকারী ইন্দু সোমের প্রতি (=উপযুক্ত সময়ে ক্ষরিত বারিরাশির প্রতি) দেবগণ (=রশ্মিগণ) নিজ আধিপত্যের জন্য গমন করেছেন (=বর্ষণের পর রশ্মিগণ পুনরায় জল থেকে বাস্প সৃষ্টির জন্য জলের প্রতি যাচ্ছেন)।। (৪৮৮) শুদ্ধীকৃত সোম সকল যুদ্ধ অতিক্রম করে এলেন (=পৃথিবীতে বারিরাশি পতিত হলো); সকলে সেই সঞ্চারিত সোমকে (=বিপ্র) জ্ঞান ও কর্মের দ্বারা শোভিত করছেন (অর্থাৎ বর্ষণকে প্রয়োজনমত কর্মে নিযুক্ত করছেন)।। (৪৮৯) ইন্দ্রের জন্যই অভিষুত সোম ক্ষিপ্ত হলেন; (কর্মের জন্য) কলশে প্রবেশ করলেন, সকল সৌন্দর্যকে প্রাপ্ত হলেন।। (৪৯০) গতিশীলা দ্যু ও পৃথিবীর রশ্মিতে যথানিয়মে সোম সৃষ্ট হয়ে বেগবান অশ্বের মত চক্রাকারে পথ অতিক্রম করলেন (=অন্তরিক্ষের পথ অতিক্রম করে পৃথিবীতে এলেন)।। (৪৯১) যখন তিনি ভ্রমণশীল রশ্মির মত উদকের সঙ্গে বিচরণ করছিলেন, তখন কালো মেঘের আবরণ ভেদ করে উদককে প্রাপ্ত হলেন।। (৪৯২) হে সোম, তুমি কর্মপ্রেরক ও তৃপ্তিদায়ক। তুমি যুদ্ধে মেঘকে তাড়িত করে দেবভক্ত মানুষের প্রতি উদক প্রেরণ কর।। (৪৯৩) হে সোম, সেই ধারায় ক্ষরিত হও যে ধারায় ক্ষরিত হলে পর বারিরাশি মনুষ্যকুলকে তৃপ্ত করবে ও সূর্যকে প্রকাশিত করবে।। (৪৯৪) হে সোম, যখন বিপুল আকৃতি মেঘের মধ্যে বিশাল জলরাশি নিরুদ্ধ ছিল, তখন ইন্দ্র বৃত্রকে (=মেঘকে) হত্যা করতে উদ্যত করলে তুমি ইন্দ্রকে রক্ষা করেছিলে; সেই তুমি এখন ক্ষরিত হও।। (৪৯৫) যে ইন্দ্র মত্ত হয়ে অসংখ্য মেঘ ধ্বংস করলেন, হে সোম, সেই মেঘনিঃসৃত বারিধারাকে প্রবাহিত কর।। (৪৯৬) হে সোম, রশ্মিতে প্রস্তুত বারিরাশির দ্বারা সুষ্ঠুরূপে পরিচালিত হয়ে আমাদের জন্য উজ্জ্বল, সকলভারবহনকারী বলকারক শাশ্বত ধন আন।।

চতুর্থ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১৪।। দেবতা পবমান সোম।। ছন্দ গায়ত্রী।। ঋষি ১ মেধাতিথি কান্ব, ২। ৭ ভৃণ্ড বারুণি বা জমদগ্নি ভার্গব, ৩ উচথ্য আঙ্গিরস, ৪ অবৎসার কাশ্যপ, ৫। ৬ নিধ্রুবি কাশ্যপ, ৮। ৯ কাশ্যপ মারীচ, ১০ আসিত কাশ্যপ বা দেবল, ১১ কবি ভার্গব, ১২ জমদগ্নি ভার্গব, ১৩ অয়াস্য আঙ্গিরস, ১৪ আমহীযু আঙ্গিরস।।


মন্ত্রঃ-
(৪৯৭)  অচিক্রদদ্‌ বৃষা বরির্মহান্মিত্রো ন দর্শতঃ। সং সূর্যেণ দিদ্যুতে।।১।।
(৪৯৮)  আ তে দক্ষং ময়োর্ভুবং বহ্নিমদ্যা বুণীমহেপুরুস্পৃহম্‌।।২।।
(৪৯৯)  অধ্বর্যো অদ্রিভিঃ সূতং সোমং পবিত্র আ নয়। পুনাহীন্দ্রায় পাতবে।।৩।।
(৫০০) তরৎ স মন্দী ধাবতি ধারা সুতস্যান্ধসঃ। তরৎ স মন্দী ধাবতি।।৪।।
(৫০১)  আ পবস্ব সহস্রিণং রয়িং সোম সুবীর্যম্‌। অস্মৈ শ্রবাংসি ধারয়।।৫।।
(৫০২)  অনু প্রত্নাস আয়বঃ পদং নবীয়ো অক্রমূঃ। রুচে জনন্ত সূর্যম্‌।।৬।।
(৫০৩) অর্যা সোম দ্যুমত্তমোহভি দ্রোণানি রোরুবৎ। সীদন্‌ যোনৌ বনেস্বা।।৭।।
(৫০৪)  বৃষা সোম দ্যুমাঁ অসি বৃষা দেব বৃষব্রতঃ। বৃষা ধর্মাণি দধ্রিষে।।৮।।
(৫০৫) ইষে পবস্ব ধারয়া মৃজ্যমানো মনীষিভিঃ। ইন্দো রুচাভি গা ইহি।।৯।।
(৫০৬)  মন্দ্রয়া সোম ধারয়া বৃষা পবস্ব দেবেযুঃ। অব্যা বারেভিরস্ময়ুঃ।।১০।।
(৫০৭) অয়া সোম সুকৃত্যয়া তমহান্‌ৎসন্নব্যবর্ধথাঃ। মন্দান ইদ্‌ বৃষায়সে।।১১।।
(৫০৮) অয়ং বিচর্ষণির্হিতঃ পবমানঃ স চেততি। হিন্বান আপ্যং বৃহৎ।।১২।।
(৫০৯)  প্র ন ইন্দো মহে তুন ঊর্মি ন বিভ্রদর্ষসি। অভি দেবাঁ অয়াস্যঃ।।১৩।।
(৫১০)  অপঘ্নন্‌ পবতে মৃধোহপ সোমো অরাবৃণঃ। গচ্ছন্নিন্দ্রস্য নিষ্কৃতম্‌।।১৪।।

অনুবাদঃ (৪৯৭) বর্ষণকারী, হরিৎবর্ণ, মহান, মিত্রের মত শোভন সোম শব্দ করে চলেছেন এবং সূর্যের দ্বারা সম্যক্‌ রূপে দীপ্ত হয়েছেন।। (৪৯৮) হে সোম, তুমি দক্ষ, সুখপ্রদ, বহনশীল, পানযোগ্য এবং বহুলোকের আকাঙ্ক্ষিত; তোমাকে আজ বরণ করি।। (৪৯৯) হে অধ্বর্যা (=যজ্ঞকর্মা=সূর্য), মেঘপুঞ্জ হতে নিঃসারিত সোমকে রশ্মিতে বহন করে আন; ইন্দ্রের পানের জন্য শোধিত কর।। [এই মন্ত্রের যাজ্ঞিক অর্থ এইরূপঃ হে অধ্বর্যু (=একজন ঋত্বিক্‌), প্রস্তরের দ্বারা অভিষুত সোমকে ইন্দ্রের পানের জন্য ছাঁকনিতে ঢেলে দাও ও শোভিত কর। অধ্বর্যু=যিনি যজ্ঞকর্মের কামনা করেন এবং যজ্ঞকে সমাপ্তির পথে নিয়ে যান = সূর্য। লৌকিক আনুষ্ঠানিক বিচারে অধ্বর্যু একজন ঋত্বিক্‌। অদ্রি = মেঘ ও প্রস্তর। পবিত্র = রশ্মি এবং ছাঁকনি] (৫০০) সেই অভিষুত সোমের আনন্দধারা তড়িৎবেগে বয়ে যাচ্ছে। সেই আনন্দধারা তড়িৎবেগে বয়ে যাচ্ছে।। (৫০১) হে সোম, সুবীর্য সহস্র ধন (=বারিসম্পদ) ক্ষরণ কর; আমাদের জন্য অন্নসকল ধারণ কর।। (৫০২) প্রাচীন সামগানের অনুসরণে নতুন এই সামগান সূর্যমণ্ডলে দীপ্তি পাবার জন্য গমন করছে। [প্রত্নাসঃ = প্রাচীন; আয়বঃ = এক ধরনের সামগান]।। (৫০৩) হে সোম, তুমি অতি গম্ভীর শব্দ করতে করতে মেঘপুঞ্জের প্রতি ধাবমান হও; অন্তরিক্ষে অবস্থিত জলমধ্যে প্রবেশ কর।। (৫০৪) হে সোম, তুমি দীপ্তিমান, তুমি বর্ষণকারী; হে দেব, বর্ষণকর্মই তোমার ব্রত, বর্ষণের দ্বারাই তুমি সকল ধর্মকে ধারণ কর।। (৫০৫) হে ইন্দ্র, (=সোম), মনীষিদের দ্বারা শোভিত হয়ে অন্নলাভের জন্য ধারারূপে ক্ষরিত হও। দীপ্তশোভা ধারণ করে জলরাশির দিকে গমন কর। (৫০৬) হে সোম, দেবকামী বর্ষণকারী তুমি আনন্দ ধারায় ক্ষরিত হও; আমাদের হিতাকামী তুমি তোমার অনুগ্রহের দ্বারা সকল জলাশয়ে অবস্থিত থাক।। [যাজ্ঞিক অর্থ এইরূপ মেঘলোমের ছাঁকনির দ্বারা শুদ্ধ হয়ে তুমি আমাদের হিতকামী]।। (৫০৭) হে সোম, তুমি এই সুকর্মের দ্বারা মহান হয়ে বৃদ্ধিলাভ কর। আনন্দভরে বর্ষণ কর। (৫০৮) এই মনুষ্যহিতকারী পবমান সোম জলের দ্বারা বৃদ্ধিকারক অন্নকে প্রচুর উৎপন্ন করে তাঁর কর্মকে জানিয়ে দিচ্ছেন।। (৫০৯) হে ইন্দু, মহান জলতরঙ্গের মত দেবনগোনকে ধারণ করে অয়াস্য ঋষির কাছে এস।। (৫১০) ইন্দ্রের সহায়তায় যুদ্ধে অনুদার মেঘকে হনন করে মেঘ থেকে নির্গত হয়ে সোম বয়ে চলেছেন।।

পঞ্চম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১২।। দেবতা পবমান সোম।। ছন্দ বৃহতী।। ঋষিঃ এই খণ্ডের মন্ত্রসমূহের সপ্ত ঋষিগণ যথাক্রমে ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, কশ্যপ মারীচ, গোতম রাহূগণ, অত্রিভৌম, বিশ্বামিত্র গাথিন, জমদগ্নিভার্গব, বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি।।


মন্ত্রঃ-
(৫১১)  পুনানঃ সোম ধারয়াপো বসানো অর্ষসি।
আ রত্নধা যোনিমৃতস্য সীদস্যুৎসো দেবো হিরণ্যয়ঃ।।১।।
(৫১২)  পরীতো ষিঞ্চতা সুতং সোমো য উত্তমং হবিঃ।
দধন্ধাঁ যো নর্যো অপৃস্বন্তরা সুষাব সোমমদ্রিভিঃ।।২।।
(৫১৩)  আ সোম স্বানো অদ্রিভিস্তিরো বারাণ্যব্যয়া।
জন্যে ন পুরি, চম্বোর্বিশদ্ধরিঃ সদো বনেষু দধ্রিষে।।৩।।
(৫১৪)  প্র সোম দেববীতয়ে সিন্ধুর্ন পিপ্যে অর্ণসা।
অংশোঃ পয়সা মদিরো ন জাগৃবিরচ্ছা কোশং মধুশ্চুতম্‌।।৪।।
(৫১৫)  সোম উ স্বাণঃ সোতৃভিরধি ষ্ণুভিরবীনাম্‌।
অশ্বয়েব হরিয়া যাতি ধারয়া মন্দ্রয়া যাতি ধারয়া।।৫।।
(৫১৬)  তবাহং সোম রারণ সখ্য ইন্দো দিবেদিবে।
পুরুণি বভ্রো নি চরন্তি মামব পরিধী রতি তাঁ ইহি।।৬।।
(৫১৭)  মৃজ্যমানঃ সুহস্ত্যা সমুদ্রে বাচমিন্বসি।
রহিং পিশঙ্গং বহুলং পুরুস্পৃহং পবমানাভ্যর্ষসি।।৭।।
(৫১৮)  অভি সোমাস আয়বঃ পবন্তে মদ্যং মদম্‌।
সমুদ্রেস্যাধি বিষ্টপে মনীষিণো মৎসরাসো মদচ্যুতঃ।।৮।।
(৫১৯)  পুনানঃ সোম জাগৃবিরব্যা বারেঃ পরিপ্রিয়ঃ।
ত্বং বিপ্রো অভরোহনজ্ঞিরস্তম মধ্বা যজ্ঞং মিমিক্ষ ণঃ।।৯।।
(৫২০)  ইন্দ্রায় পবতে মদঃ সোমো মরুত্বতে সুতঃ।
সহস্রধারো অত্যব্যমর্ষতি তমীং মৃজন্ত্যায়বঃ।।১০।।
(৫২১)  পবস্ব বাজসাতমোহভি বিশ্বানি বার্যা।
ত্বং সমুদ্রঃ প্রথমে বিধর্মন্‌ দেবেভ্যাঃ সোম মৎসরঃ।।১১।।
(৫২২)  পবমানা অসৃক্ষত পবিত্রমতি ধারয়া।
মরুত্বান্তো মৎসরা ইন্দ্রিয়া হয়া মেধামভিপ্রয়াংসি চ।।১২।।

অনুবাদঃ (৫১১) হে সোম, তুমি পবিত্র, তুমি জলের বসন পরিধান করে (=পবিত্র জলে আচ্ছাদিত হয়ে) ধারারূপে বর্ষিত হও। তুমি দেব, হিরন্ময় সকল রমণীয় ধন ধারণ করে জলের উৎস অন্তরিক্ষে বাস কর। [যাজ্ঞিক অর্থ = যজ্ঞস্থানে এসে উপবেশন কর]।। (৫১২) এই সোমদেবকে সকল দিকে সেচন কর, যিনি উত্তম হবি (=অন্ন), যিনি মানুষের হিতকারী, যিনি মেঘপুঞ্জে অবস্থিত থেকে অভিষুত হয়ে সোমের (= শস্য উৎপাদন দ্বারা মানুষের হিতরক উদকের) ধারাকে প্রবাহিত করেন।। (৫১৩) হে সোম, তোমার অনুগ্রহে মেঘ নিঃসারিত বারিরাশি সুষ্ঠুরূপে পরিচালিত হয়ে জলাশয় সমূহকে প্রাপ্ত হোল। দ্যু ও পৃথিবীর মধ্যে অবস্থিত উজ্জ্বল সোম আকাশ থেকে জলমধ্যে প্রবেশ করলেন, যেন কোন মানুষ নগরে প্রবেশ করছে।। (৫১৪) হে সোম, দেবতার আনন্দপানের জন্য যেমন জলের দ্বারা নদীকে পরিপূর্ণ কর, তেমনি জলের মধুর ক্ষরিত ধারার মত সোমের মদির ধারায় তোমার প্রতি জাগরুক যে তাকে পূর্ণ কর। (৫১৫) ঊর্ধ্বাকাশে হরিৎ অশ্বরশ্মির দ্বারা নিপীড়িত হয়ে সোম পরিচালিত হয়ে ধারারূপে বয়ে চলেছেন; আনন্দ সহকারে সোম ধারারূপে বয়ে চলেছেন।। (৫১৬) হে ইন্দু, প্রতিদিন আমি তোমার সখ্যতায় প্রীতিলাভ করি। বহু জলভরা মেঘ আকাশে বিচরণ করছে; আমাকে রক্ষা করবে বলে সেই নিরুদ্ধ জলকে আমার কাছে আন।। (৫১৭) হে ক্ষরণশীল সোম, তুমি সুকৌশলে পরিস্কৃত হয়ে আকাশে শব্দ করে বিচরণ কর, তুমি উজ্জ্বল বর্ণ, বহু লোকের আকাঙ্ক্ষিত প্রচুর জলসম্পদ এনে দিয়ে থাক।। (৫১৮) সূর্যের জন্য (=রশ্মির সহায়ে) ঊর্ধ্বাকাশে অবস্থিত মনের অভিলাষ পূর্ণকারী; আনন্দদায়ক, মধুক্ষরণকারী, আয়ুস্কারক সোম রাশি আনন্দধারা ক্ষরণ করছেন।। [বিষ্টপ্‌ = আদিত্য; যিনি রসগ্রহণের জন্য রশ্মির দ্বারা প্রবিষ্ট হন]।। (৫১৯) হে সোম, তুমি শুদ্ধ ও অপ্রমত্তরূপে অবস্থিত থেকে অনুগ্রহের দ্বারা জলাশয় পূর্ণ করে সকলের প্রিয় হলে। তুমি চেতনাসম্পন্ন ও অঙ্গিরশ্রেষ্ঠ; তুমি মধুপূর্ণ রসের দ্বারা আমাদের যজ্ঞকে (=কর্মকে; প্রার্থনাকে) অভিষিক্ত কর।। [অঙ্গিরা = Carbon: অঙ্গার হতে অঙ্গিরা উৎপন্ন। Carbon is the essential element of living tissues. Carbons have pure and impure forms. All forms of carbon burn in air or oxygen.]।। (৫২০) আনন্দদায়ক সোম ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত মরুদ্‌গণের জন্য অভিষুত হন। সহস্রধারায় বায়ুস্তর ভেদ করে তিনি আসেন; তাঁকেই মানুষেরা শুদ্ধ করে অলঙ্কৃত করেন।। (৫২১) হে শ্রেষ্ঠধন, সকল ধনকে লক্ষ্য করে ক্ষরিত হও। হে সোম, আনন্দদায়ক আকাশ তোমাকে প্রথমে দেবগণের জন্য (=রশ্মিগণের জন্য) ধারণ করেছেন।। (৫২২) অন্তরিক্ষে প্রবাহমান জলসমূহ প্রাণবায়ুসমন্বিত, আনন্দদায়ক, ধনসম্পন্ন, গতিযুক্ত ও ক্লান্তিহরণকারী; এই বারিরাশি মেধা ও শুদ্ধিকে লক্ষ্য করে অতি ধারার বর্ষিত হচ্ছেন। (অথবা এই বারিরাশি ধন উৎপন্নের জন্য জলকে অতিধারায় বর্ষণ করেন)।।

ষষ্ঠ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতা পবমান সোম।। ছন্দ ত্রিষ্টুপ্‌।। ঋষিঃ ১।৯ উশনা কাব্য, ২ বৃষগণ বাসিষ্ঠ, ৩।৭ পরাশর শাক্ত্য, ৪।৬ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণ, ৫।১০ প্রতর্দন দৈবদাসি, ৮ প্রষ্কন্ব কান্ব।।

মন্ত্রঃ-
(৫২৩)  প্র তু দ্রব পরি কোশং নি ষীদ নৃভিঃ পুনানো অভিবাজমর্ষ।
অশ্বং ন ত্বা বাজিনং মর্জয়ন্তোহচ্ছা বর্হীরশনাভির্নয়ন্তি।।১।।
(৫২৪)  প্র কাব্যমুশনের বুরাণো দেবো দেবানাং জনিমা বিবক্তি।
মহিব্রতঃ শুচিবন্ধুঃ পাবকঃ পদা বয়াহো অভ্যেতি রেবন্‌।।২।।
(৫২৫)  তিস্রো বাচ ঈরয়তি প্র বহ্নিঋর্তস্য ধীতিং ব্রহ্মণো মনীষাম্‌।
গাবো যন্তি গোপতিং পৃচ্ছমানাঃ সোমং যন্তি মতয়ো বাবশানাঃ।।
(৫২৬)  অস্য প্রেষা হেমনা পুয়মা ণ দেবো দেবেভিঃ সম্পৃক্ত রসম্‌।
সুতঃ পবিত্রং পর্ষেতি রেভন্‌ মিতেব সন্ধ পশুমন্তি হোতা।।৪।।
(৫২৭)  সোমঃ পবতে জনিতা মতীনাং জনিতা দিবো জনিতা পৃথিব্যাঃ।
জনিতাগ্নের্জনিতা সূর্যসা জনিতেন্দ্রস্য জনিতোত বিষ্ণো।।৫।।
(৫২৮)  অভি ত্রিপৃষ্ঠং বৃষণং বয়োধামঙ্গোষিণমবাবশন্ত বাণী।
বনা বসানো বরুণো ন সিন্ধুর্বি রত্নধা দয়তে বার্যাণি।।৬।।
(৫২৯)  অক্রান্‌ৎসমুদ্রঃ প্রথমে বিধর্মন্‌ জনয়ন্‌ প্রজা ভুবনস্য গোপাঃ।
বৃষা পবিত্রে অধি সানো অব্যে বৃহৎসোমো বাবৃধে স্বানো অদ্রিঃ।।৭।।
(৫৩০) কনিক্রান্তি হরিরা সৃজ্যনানঃ সীদন্বনস্য জঠরে পুনানঃ।
নৃভির্যতঃ কৃণুতে নির্ণিজং গোমতো মতিং জনয়ত স্বধাভিঃ।।৮।।
(৫৩১)  এষ স্য তে মধুমাঁ ইন্দ্র সোমো বৃষা বৃষ্ণঃ পরি পবিত্রে অক্ষাঃ।
সহস্রদাঃ শতদা ভূরিদাবা শশ্বত্তমং বর্হিরা বাজ্যস্থাৎ।।৯।।
(৫৩২)  পবস্ব সোম মধুমাঁ ঋতাবাপো বসানো অধি সানো অব্যে।
অব দ্রোণানি ঘৃতবন্তি রোহ মদিন্তমো বৎসর ইন্দ্রপানঃ।।১০।।

অনুবাদঃ (৫২৩) হে সোমদেব, তুমি দ্রুত গমত কর; মেধকে ঘিরে উপবেশন কর; অশ্বরশ্মিসমূহের দ্বারা পরিস্রুত হয়ে অন্নকে লক্ষ্য করে (=অন্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্য) গমন কর। পরিশোধনকারী রশ্মিগণ অশ্বের মত বলবান তোমাকে মেঘের (বা বিদ্যুতের) দ্বারা ব্যাপ্ত করে জলবর্ষণের উদ্দেশে নিয়ে যাচ্ছেন। (৫২৪) সোমদেব কবির মত উৎসাহিত হয়ে মেঘধ্বনি রূপ রসাত্মক বাক্য (বা ধ্বনি) সৃষ্টি করে দেবগণের অবস্থান (বা উৎপত্তিস্থান) জানিয়ে দিচ্ছেন। মহান ব্রতধারী, শুচি বন্ধু, পবিত্রতাকারক সোম শব্দ করতে করতে গমনসাধনের দ্বারা মেঘকে সর্বদা প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। (৫২৫) বহনকারী সোম ঋতদেবের (=সূর্যদেবের=) বৃষ্টিপ্রদান বিষয়ক বৃদ্ধি এবং অন্নদানরূপ প্রজ্ঞাকে ধারণ করে তিন প্রকার বাক্য প্রেরণ করেন (তিন প্রকার বাক্য = ঋক্‌, যজু, সাম)। গাভীগণ যেমন গোপতিকে লক্ষ্য করে শব্দ করতে করতে যায় তেমনি কামনাভিলাষী বুদ্ধিসকল অভিমুখে যাচ্ছে। (৫২৬) (ইন্দ্র হিরন্ময় বিদ্যুতের সহায়তায় মেঘ থেকে যে উদক সৃষ্টি করলেন) সেই উজ্জ্বলকান্তি উদকের দ্বারা প্রেরিত হয়ে ক্ষরণশীল সোমদেব দেবগণের (=রশ্মিগণের) সহায়তায় সেই উদককে মধুর রসযুক্ত করলেন। সেই অভিষুত সোম জলকে ঘিরে শব্দ করতে করতে সর্বধনযুক্ত হোতা অগ্নির গৃহে (=পৃথিবীতে) পরিচিত ব্যক্তির মত প্রবেশ করলেন। (৫২৭) সোম ক্ষরিত হচ্ছেন; তিনি বুদ্ধির জন্মদাতা, দ্যুলোকের জন্মদাতা; পৃথিবীর জন্মদাতা, অগ্নির জন্মদাতা, সূর্যের জন্মদাতা, ইন্দ্রের জন্মদাতা, এবং বিষ্ণুরও জন্মদাতা। (৫২৮) তিন লোকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, বর্ষণশীল, বলশালী, স্তুতিযুক্ত সোমকে লক্ষ্য করে কামনাযুক্ত বাক্য সকল যাচ্ছে। উদকের বসন পরা বরুণ যেমন নদীকে জল দান করেন, তেমনি রত্নধারক সোম বরণীয় ধন দান করেন। (৫২৯) আকাশের মত অনতিক্রমণীয় ভুবনের রক্ষক সোম প্রথমে জগৎধারণের উদ্দেশ্যে প্রজা সৃষ্টি করলেন। সেই বর্ষণশীল মহান সোম নিজ অনুগ্রহে পর্বতশিখরে রশ্মিকে আশ্রয় করে শব্দযুক্ত মেঘরূপে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হলেন। (৫৩০) সর্বদিকে সৃষ্ঠ ক্ষরণশীল শব্দকারী হরিৎবর্ণ সোম বনের জঠরে গিয়ে বসলেন (=বনমধ্যে বৃক্ষাদিতে প্রবেশ করলেন), যেখানে তিনি রশ্মিগণের দ্বারা পরিশুদ্ধ হলেন, (তারপর উদ্ভিদ হতে উৎপন্ন) অন্নসমূহের দ্বারা বাক্‌যুক্ত বৃদ্ধি উৎপন্ন হোল। (৫৩১) হে ইন্দ্র, এই তোমার বর্ষণশীল কাম্য মধুমান সোম যা আকাশে সর্বত্র ক্ষরিত হয়; ইনি সহস্রদাতা, শতদাতা, ভূরিদাতা, নিত্যশ্রেষ্ঠ ও অন্নকে আশ্রয় করে সদা বৃদ্ধিশীল। (৫৩২) হে মধুমান সোম, উপযুক্ত কালে জলের বসন পরে তুমি পর্বত শিখরে বসেছ; তুমি ক্ষরিত হও। ঘৃতরূপ মেঘরাশিকে থেকে অবতরণ কর। তুমি অতি সুখকর, আনন্দায়ক ইন্দ্রের পানীয়।

সপ্তম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১২।। দেবতা পবমান সোম।। ছন্দ ত্রিষ্টুপ্‌।। ঋষিঃ ১. প্রতর্দন দৈবদাসি, ২।১০; পরাশর শাক্ত্য ৩ ইন্দ্রপ্রমতি বাসিষ্ঠ, ৪ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণ, ৫ কর্ণশ্রু মুড়ীক বা বাসিষ্ঠ, ৬ নোধা গৌতম, ৭ কণ্ব ঘৌর, ৮ মন্যু বাসিষ্ঠ, ৯ কুৎস আঙ্গিরস, ১১ কশ্যপ মারীচ, ১২ প্রঙ্কন্ব কাণ্ব।

মন্ত্রঃ-
(৫৩৩) প্র সেনানীঃ শূরো অগ্রে রথানাং গব্যন্নেতি হর্ষতে অস্য সেনা।
ভদ্রান্‌ কৃন্বন্নিন্দ্রহবান্‌ৎসখিভ্য আ সোম বস্ত্রা রভসানি দত্তে।।১।।
(৫৩৪)  প্র তে ধারা মধুমতীরসূগ্রন্‌ বারং যৎ পতো অত্যেষ্যবাম্‌।
পবমান পবসে ধাম গোনাং জনয়ন্‌ৎসূর্যমপিন্বো অর্কৈঃ।।২।।
(৫৩৫) প্র গায়তাভ্যর্চাম দেবান্‌ৎসোমং হিনোত মহতে ধনায়।
স্বাদুঃ পবতামতিবারমহ্যমা সীদতু কলশং দেব ইন্দুঃ।।৩।।
(৫৩৬)  প্র হিস্বানো জনিতা রোদস্যো রথো ন বাজং সনিষন্নয়াসীৎ।
ইন্দ্রং গচ্ছন্নায়ুধা সংশিশানো বিশ্বা বসু হস্তয়োরাদধানঃ।।৪।।
(৫৩৭) তক্ষদ্যদী মনসো বেনতো বাগ্‌ জ্যেষ্ঠস্য ধর্মং দ্যুকশোরনীকে।
আদীমায়ান্বরমা বাবশনা জুষ্টং পতিং কলশে গাব ইন্দুম্‌।।৫।।
(৫৩৮) সাকমুক্ষ্যে মর্জয়ন্ত স্বসারো দশ ধীরস্য ধীতয়ো ধনুত্রীঃ।
হরি পর্যদ্রবজ্জাঃ সূর্যস্য দ্রোণং ননক্ষে অত্যো ন বাজী।।৬।।
(৫৩৯) অধি যদস্মিন্বাজিনীব শুভঃ স্পর্ধন্তে ধিয়ঃ সুরে ন বিশঃ।
অপো বৃণানঃ পবতে কবীয়ান্‌ ব্রজং ন পশুবর্ধনায় মন্ম।।৭।।
(৫৪০)  ইন্দুর্বাজী পবতে গোন্যোঘা ইন্দ্রে সোমঃ সহ ইন্বন্মদায়।
হন্তি রক্ষো বাধতে পর্যরাতিং বরিবস্কৃন্বন্‌ বৃজনস্য রাজা।।৮।।
(৫৪১) অয়া পবা পবস্বৈনা বসূনি মাংশ্চত্ব ইন্দো সরসি প্রধন্ব।
ব্রধ্রশ্চিদ্যস্য বাতো ন জুতিং পুরুমেধাশ্চিত্তকবে নরং ধাৎ।।৯।।
(৫৪২) মহত্তত্তসোমো মহিষশ্চকারাপাং যদ্‌গ্ররভোহবৃণীত দেবান্‌।
অধাদিন্দ্রে পবমান ওজোহজনয়ৎ সূর্যে জ্যোতীরিন্দুঃ।।১০।।
(৫৪৩) অসর্জি বক্বা রথ্যে যথাজৌ ধিয়া মণতা প্রথমা মনীষা।
দশ স্বসারো অধি সানো অব্যে মৃজন্তি বহিং সদনেস্বচ্ছ।।১১।।
(৫৫৪) অপামিবেদূর্ময়স্তর্তুরাণাঃ প্র মনীষা ঈরতে সোমমচ্ছ।
       নমস্যন্তীরূপ চ যন্তি সং চা চ বিশন্ত্যুশতীরুশন্তম্‌।।১২।। 

অনুবাদঃ (৫৩৩) সেনাপতি বীর সোম (=সমানগতিসম্পন্ন শক্তির রক্ষক উদকের আত্মা) জলসমন্বিত মেঘকে পাবেন বলে সকল রথের (=গমনপথের) আগে যাচ্ছেন; এঁর সেনা আনন্দ প্রকাশ করছেন। সকলের কল্যাণ করবেন বলে ইন্দ্রকে আহবান করে সখাদের জন্য (=ইন্দ্রের সখা মরুৎবায়ুগণের জন্য) সোমদেব আচ্ছাদক তেজোরাশি আহরণ করছেন।। (৫৩৪) মেঘ ভেদ করে যে পবিত্র জল প্রাপ্ত হলে তা থেকে তোমার মধুময় রসের ধারা সৃষ্ট হোল। হে ক্ষরণশীল সোম, সূর্য রশ্মির দ্বারা সৃষ্ট হয়ে যে জলরাশি স্ফীত হোল সেই জলের আধার থেকে জল ক্ষরিত কর।। (৫৩৫) তোমরা সোমদেবের উদ্দেশ্যে গান কর; এস ঐ দেবগণকে অর্চনা করি; বিপুল ধন প্রাপ্তির জন্য সোমকে উন্নত কর। মেঘ থেকে স্বাদু জল বর্ষণ কর; হে দেব ইন্দু, কলশে প্রবেশ কর।। (৫৩৬) দ্যুলোক ও ভূলোকের রচয়িতা উত্তমরূপে বৃদ্ধিলাভ করে অন্নলাভের উদ্দেশে রথের মত বেগে গমন করলেন; ইন্দ্রের কাছে গিয়ে অস্ত্র শানাতে লাগলেন; তিনি সকল ধন দুই হাতে ধারণ করে আছেন।। (৫৩৭) যদি বাক্‌দেবী (=মাধ্যমিক মেঘগর্জন, যা থেকে অন্ন উৎপন্ন হয়) মনের ইচ্ছায় ইজ্জ্বল অন্নসমূহ সৃষ্টি করে বৃহতের ধর্মকে পালন করেন, তবে কাময়মান শব্দকারী এবং শ্রেষ্ঠ বস্তু প্রদানকারী রশ্মিগণ সমাগত হয়ে প্রীতিজনক ইন্দুকে (=সোমকে বা জলকে কলশে স্থাপিত করেন।। (৫৩৮) ধনুর মত আকৃতি ধারণ করে দশটি ভগিনী (=দশ দিকে অবস্থিত অগ্নিশিখা) ধীমান সোমকে শোধন করে (ঊর্ধ্বে) প্রেরণ করছে। হরিৎবর্ণ সোম বেগবান ধোড়ার মত সূর্য হতে জাত ইতস্তত ভ্রমণকারী মেঘপানে ধাবিত হলেন।। (৫৩৯) ঊষার আলোক যেমন অন্ধকারকে পরাভূত করে, সূর্যোদয়ে যেমন মানুষের কর্ম পরস্পরকে স্পর্ধা করে, বুদ্ধি যেমন পশুবর্ধনের জন্য গ্যেষ্ঠ সৃষ্টি করে (=পশুদের পরাভূত করে) জ্ঞানী সোমও সেইরূপ জলকে ঘিরে (=পরাভূত করে) ক্ষরিত হচ্ছেন।। (৫৪০) ইন্দু অশ্বের মত ব্যাপ্ত। তিনি প্রচুর বারিরাশি ক্ষরণ করেন। সোম ইন্দ্রের সহযোগে মত্ত হয়েছেন। যাদের হাত থেকে জীবন রক্ষা করা কর্তব্য সেই শত্রুদের পরাভূত করছেন। তিনি বলশালী রাজার মত কাম্যবস্তু উৎপাদন করেন।। (৫৪১) হে অশ্বযুক্ত ইন্দু (=গতিযুক্ত সোম দেবতা) এই ভাবেই আকাশ হতে ক্ষরিত হয়ে জলাশয়ে ধন ক্ষরণ কর। বায়ুর মত যাঁর গতি সেই মহান বহুমেধা সোম গতির জন্যই যেন মানুষকে ধারণ করেন। (৫৪২) সেই মহান সোম বিপুল জলরাশি সৃষ্টি করলেন যার গর্ভ সমস্ত দেবরশ্মিদের আচ্ছাদিত করলো (=মেঘে ঢাকা সূর্যরশ্মি)। সোম ক্ষরিত হয়ে ইন্দ্র বলাধান করলেন। সূর্যে জ্যোতি সৃষ্টি করলেন।। (৫৪৩) যুদ্ধে যেমন রথের চাকায় প্রচুর ধুলো উৎপন্ন হয় তেমনি শব্দের প্রথম আবিস্কারক (বা সৃষ্টিকর্তা) সোমদেব মনন ও কর্মের দ্বারা জল বুদ্‌বুদ্‌ সৃষ্টি করলেন। দশটি ভগিনী (=দশদিকের অগ্নিশিখা) গিরিশিখরে জলরাশির মধ্যে অবস্থিত জলবহনকারী সোমকে অগ্নিশুদ্ধ করে শব্দ করেছেন। (৫৪৪) জলরাশিই তরঙ্গমালা যা মননের দ্বারা সৃষ্ট, তা সোমকে উদ্দেশ করে প্রবল বেগে যাচ্ছে, নত হয়ে যাচ্ছে, তাতে কাময়মানা ও কাময়মান এক হয়ে গেছে।।

অষ্টম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ৯।। দেবতা পবমান সোম।। ছন্দ ত্রিষ্টুপ্‌।। ৭ বৃহতী।। ঋষি ১ অন্ধীণ্ডঃ শ্যাবাশ্বি, ২ নহুষ মানব, ৩ যযাতি নাহূষ, ৪ মনু সাংবরণ, ৫।৮ অন্বরীষ বার্ষাগির ও ঋজিশ্বা ভারদ্বাজ, ৬।৭ রেড ও সূনূ কাশ্যপ, ৮ বাক্‌ বা বিশ্বামিত্র পুত্র প্রজাপতি।।  

মন্ত্রঃ-
(৫৪৫) পুরোজিতী বো অন্ধসঃ সূতায় মাদয়িত্নবে।
অপ শ্বানং সখায়ো দীর্ঘজিহব্যম্‌।।১।।
(৫৪৬) অয়ং পূষা রয়ির্ভগঃ সোমঃ পুনানো অর্ষতি।
পতির্বিশ্বস্য ভূমনো ব্যখাদ্‌রোদসী উভে।।২।।
(৫৪৭) সুতাসো মধুমত্তমাঃ সোমা ইন্দ্রায়া মন্দিনঃ।
পবিত্রবন্তো অক্ষরন্‌ দেবান্‌ গচ্ছন্তু বো মদাঃ।।৩।।
(৫৪৮) সোমাঃ পবন্ত ইন্দবোহস্মভ্যং গাতুবিত্তমাঃ।
মিত্রাঃ স্বানা অরেপসঃ স্বাধ্যঃ স্বর্বিদঃ।।৪।।
(৫৪৯) অভী নো বাজসাতমং রয়িমর্ষ শতস্পৃহম্‌।
ইন্দো সহস্রভর্ণসং তুমিদ্যুম্নং বিভাসহম্‌।।৫।।
(৫৫০) অভী নবন্তে অদ্রুহঃ প্রিয়মিন্দ্রস্য কাম্যম্‌।
বৎসং ন পূর্ব আয়ুনি জাতং রিহন্তি মাতরঃ।।৬।।
(৫৫১) আ হর্ষতায় ধৃষ্ণবে ধনুষ্টন্বন্তি পৌংস্যম্‌।
শুক্রা বিযন্ত্যসুরায় নির্ণিজে বিপামগ্রে মহীযুবঃ।।৭।।
(৫৫২) পরি ত্যং হর্ষতং হরিং বভ্রুং পুনন্তি বারেণ।
যো দেবান্‌ বিশ্বাঁ ইৎ পরি মদেন সহ গচ্ছতি।।৮।।
(৫৫৩) প্র সুন্বানায়ান্ধসো মর্তো ন বষ্ট তদ্‌বচঃ।
অপ শ্বানমরাধসং হতা মখং ন ভূগবঃ।।৯।।

অনুবাদঃ (৫৪৫) হে সখাগণ (মরুৎগণ = প্রাণবায়ু) তোমাদের আনন্দের জন্য মেঘ হতে প্রস্তুত আহ্লাদজনক সোমরস পূর্বেই সংগ্রহ করা হয়েছে; দীর্ঘ শব্দকারী প্রবল বাতাসকে দূর কর (শ্বান = ঝড় বাতাস)।। (৫৪৬) ইনিই পোষণকারী, ইনিই ভজনীয় সম্পদ, ইনি শোধিত হয়ে যাচ্ছেন; ইনি বিশ্বভুবনের পতি; ইনি দ্যুলোক ও পৃথিবীকে পরস্পর থেকে পৃথক করেছেন।। (৫৪৭) ইন্দ্রের হর্ষর জন্য এই উত্তম মধুময় সোম প্রস্তুত হয়েছে। যে রশ্মিযুক্ত সোমরস সকল, তোমাদের আনন্দ দেবগণকে (=রশ্মিগণকে) লক্ষ্য করে ক্ষরিত হতে হতে গমন করুক।। (৫৪৮) উত্তমরূপে পথের সকল বাধা অতিক্রমকারীর সুন্দরভাবে প্রস্তুত জলধারা আমাদের জন্য ক্ষরিত হচ্ছেন। এই সোমধারা বন্ধু, বাক্‌যুক্ত, পাপশূন্য, সুপ্রজ্ঞ এবং সূর্যকে জানেন।। (৫৪৯) হে ইন্দু, আমাদের জন্য সর্বজনকাম্য সহস্রপ্রকার বল ও ধনযুক্ত বহু অন্নসম্পদ আন।। (৫৫০) অন্তরিক্ষে জলের নির্মাত্রী রশ্মিগণ ইন্দ্রের প্রিয় কাম্য অনিষ্টরহিত সোমকে প্রাপ্ত হলেন (=সৃষ্টি করলেন), প্রথম জাত সন্তানকে মাতা যেরূপ আদর করেন সেইভাবে রশ্মিগণ নবজাত জলকে লেহন করছেন। (৫৫১) রশ্মিগণ সর্বত্র প্রগল্‌ভ গতিযুক্ত সোমের জন্য তীক্ষ্ণবল শস্ত্র বিস্তার করেছেন। (রশ্মির তীক্ষ্ণ অগ্রভাগের দ্বারা জল বৃদ্ধি করছেন)। উত্তম মিশ্রণকারী উজ্জ্বল রশ্মিগণ জলের অগ্রভাগে অবস্থিত থেকে প্রাণবান জলের জন্য মেঘরূপ বস্ত্রকে বিস্তার করছেন। (৫৫২) রশ্মিগণ সেই গমনশীল সর্বস্তুধারক হরিৎবর্ণ সোমকে জলযুক্ত করে সর্বত্র প্রেরণ করছেন, যে সোমদেব সকল দেবগণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সর্বত্র আনন্দসহকার যাচ্ছেন।। (৫৫৩) মানুষের কামনাসুলভ স্তুতি যেমন জলকে ঘিরে হয়, তেমনি সোমদেব মেঘ হতে জল নিস্কাশনের জন্য মেঘকে ঘিরে থাকেন। তিনি ক্রুর আদানকারী বায়ুকে বিনাশ করেন যেমন মাধ্যমিক ভৃণ্ড নামক রশ্মিগণ যজ্ঞকর্মকে শুস্ক করেন। [ভৃগবঃ = ভৃণ্ডগণ = মধ্যকাশে অবস্থিত রশ্মিগণ, যাঁরা জলরাশি প্রদান না করে মেঘকে শুস্ক করেন। মখ= যজ্ঞ। শ্বান = ঝড় বা প্রবল বায়ু যা বৃষ্টিকে তাড়িত করে নিয়ে যায়, বর্ষণ করে না]।।

নবম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১২।। দেবতা পবমান সোম।। ছন্দ জগতী।। ঋষি ১।২ ৩।৫ কবি ভার্গব, ৪।৬ সিকতা নিবাবরী, ৭ রেণু বৈস্বামিত্র, ৮ বেন ভার্গব, ৯ বসু ভারদ্বাজ, ১০ বৎসপ্রি ভালন্দন, ১১ অত্রি ভৌম, ১২ পবিত্র আঙ্গিরস।।

মন্ত্রঃ-
(৫৫৪) অভি প্রিয়াণি পবতে চনোহিতো নামানি যহ্বো অধি বর্ধতে।
আ সূর্যস্য বৃহতো বৃহন্নধি রথ বিম্বঞ্চমরুহদ্‌ বিচক্ষণ।।১।।
(৫৫৫) অচোদসো নো ধন্বস্ত্বিন্দবঃপ্র স্বানাসো বৃহদ্দেবেষু হরয়ঃ।
বি চিদশ্মানা ইষয়ো অরাতয়োহর্যো নঃ সন্তু সনিষন্তু নো ধিয়ঃ।।২।।
(৫৫৬) এষ প্র কোশে মধুমাঁ অচিক্রদদিন্দ্রস্য বজ্রো বপুষো বপুষ্টমঃ।
অভ্যততস্য সুদুঘা ঘৃতশ্চুতো বাশ্রা অর্ষন্তি পয়সা চ ধেনবঃ
(৫৫৭) প্রো অযাসীদিন্দুরিন্দ্রস্য নিশকৃতং সখা সখ্যুর্ন প্র মিনাতি সঙ্গিরম্‌।
মর্য ইব যুবতিভিঃ সমর্ষতি সোমঃ কলশে শতযামনা পথা।।৪।।
(৫৫৮) ধর্তা দিবঃ পবতে কৃত্ব্যো রসো দক্ষ্যে দেবানামনুমাদ্যো নৃভিঃ।
হরিঃ সৃজানো অত্যো ন সত্বভির্বৃথা পাজাংসি কৃণুসে নদীম্বা।।৫।।
(৫৫৯) বৃষা মতীনাং পবতে বিচক্ষণঃ সোমো অহ্নাং প্রতরীতোষসাং দিবঃ।
প্রাণা সিন্ধুনাং কলশাঁ অচিক্রদদিন্দ্রস্য হ্যার্দ্যাবিশন্‌ মনীষিভিঃ।।৬।।
(৫৬০) ত্রিরস্মৈ সপ্ত ধেনবো দুদুহ্রিরে সত্যামাশিরং পরমে ব্যোমনি।
চত্বার্যন্যা ভুবনানি নির্ণিজে চারুণি চক্রে যদ্‌তৈরবর্ধত।।৭।।
(৫৬১) ইন্দ্রায় সোম সুষুতঃ পরিস্রবাপামীবা ভবতু রক্ষসা সহ।
মা তে রসস্য মৎসত দ্বয়াবিনো দ্রবিণস্বন্ত ইহ সনিত্বন্দবঃ।।৮।।
(৫৬২) অসাবি সোম অরুষো বৃষা হরী রাজেব দস্মো অভি গো অচিক্রদৎ।
পুনানো বারমত্যে ষ্যব্যয়ং শ্যেনো ন যোনিং ঘৃতবন্তমাসদৎ ।।৯।।
(৫৬৩) প্র দেবমচ্ছা মধুমন্ত ইন্দবোহসিষ্যদন্ত গাব আ ন ধেনবঃ।
বর্হিষদো বচনাবন্ত ঊধভিঃ পরিস্ত্রতমুস্রিয়া নির্ণিজং ধিরে।।১০।।
(৫৬৪) অঞ্জতে ব্যঞ্জতে সমঞ্জতে ক্রতুং রিহন্তি মদ্বাহভ্যঞ্জতে।
সিন্ধোরুহচ্ছ্বাসে পতয়ন্তমুক্ষণং হিরণ্যপাবাঃ পশুমস্নু গৃভ্‌ণতে।।১১।।
(৫৬৫) পবিত্রং তে বিততং ব্রহ্মণস্পতে প্রভুর্গাত্রাণি পর্ষেষি বিশ্বতঃ।
অতপ্ততনূর্ন তদামো অশ্লুতে শৃতাস ইদ্‌ বহন্তঃ সং তদাশত।।১২।।  

অনুবাদঃ (৫৫৪) যিনি অন্নের হিতকারী সেই বিচক্ষণ সোম মহান সূর্যের অতি ব্যাপ্ত রথের উপর আরোহণ করলেন, মহান হয়ে জলের মধ্যে বর্ধিত হলেন, সকলের প্রীতিকর জলরাশি ক্ষরিত করলেন (৫৫৫) বাণরুপ তীক্ষ্ণ আলোক ক্ষেপণকারী সর্বরস-হরণকারী, বর্ষণবিমুখ, অদানকারী মেঘসমূহকে বিদীর্ণ করে আমাদের প্রতি অনুগ্রহকারক সোমদেব মহান দেবগণের মধ্যে অবস্থিত উত্তমরূপে পরিচালিত উজ্জ্বলবর্ণ জলরাশিকে অন্তরিক্ষ হতে প্রেরণ করুন। তিনি আমাদেরই, তিনি আমাদের ধর্ম ও প্রজ্ঞায় প্রবেশ করেন।। (৫৫৬) ইন্দ্রের উদ্যত বজ্র মেঘে অবস্থিত জলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জল মধুমান রসকে প্রস্তুত করল। সুন্দররূপে, দোহনযোগ্য, উদক্ষরণকারী বাক্‌ ও রশ্মিগণ সেই জলকে নিয়ে আসছেন।। (৫৫৭) ইন্দ্রের সখা ইন্দু উত্তমরূপে শোধিত হয়ে গমন করলেন; সখার মত রসহরণকারী মেঘকে হনন করলেন; মানুষেরা যেমন যুবতী সমভিব্যহারে গমন করে তেমনি সোম রশ্মিগণসহযোগে শতপথে কলশে (=পৃথিবীরূপ কলশে) প্রবেশ করলেন।। (৫৫৮) দ্যুলোকের ধারক, দেবগণের সৃষ্ট, দক্ষ, রসরূপ সোম রশ্মিসহায়ে মত্ত হয়ে দ্যুলোক হতে ক্ষরিত হচ্ছেন। অশ্বের মত বেগবান, বর্ষণশীল উজ্জ্বল সোম উদকের দ্বারা অনায়াসে নদীসমূহের বলবৃদ্ধি করলেন।। (৫৫৯) সোমদেব সকলকে অনুগ্রহ বুদ্ধিতে দর্শন করেন; তিনি বর্ষণক্রিয়ার দ্বারা বুদ্ধিসমূহের বর্ষণকারী; তিনি দ্যুলকের ঊষার আলোকে বিস্তৃত করে দিন করেন (=মেঘ হতে বারিবর্ষণের দ্বারা আলোকের বিস্তার সাধন করেন); তিনি নদীসমূহের প্রাণ জলরাশিকে সৃষ্ট করেন; ইন্দ্রের প্রিয় সোম প্রজ্ঞাযোগে সব কিছুতে প্রবিষ্ট হন।। (৫৬০) পরম আকাশে অবস্থিত তিন ভুবনের সাত প্রকার বাক্‌ (বা রস্মি) উদকের শ্রেষ্ঠ অংশকে এঁর জন্য (=সোমদেবের জন্য) পুনঃ পুনঃ দোহন করেন। অন্য যে কোন মনোরম চার ভুবন উজ্জ্বল আকাশে চক্রাকারে আবর্তিত হয় তা সত্যের নিয়মে বির্ধিত হয়। [নিখিল বিশ্ব সাতভাগে বিভক্ত। সূর্য, অন্তরিক্ষ ও পৃথিবী এই তিন লোক আমাদের ভুবন]।। (৫৬১) হে সোম তুমি সুন্দর প্রক্রিয়ার জাত হয়েছ, তুমি ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও। যাদের হাত থেকে জীবন রক্ষা করে কর্তব্য সেই অপশক্তি ও রোগসমূহ দূর হোক। যারা অসৎ, তারা যেন তোমার রস আস্বাদন করতে না পারে। ক্ষরণশীল জলরাশি আমাদের জন্য হোক।। (৫৬২) মনের অভিলাষ পূর্ণকারী উজ্জ্বল সোম প্রস্তুত হয়েছেন। রাজার মত শত্রুপরাভবকারী সোমদেব মেঘকে পরাভূত করে জলরাশি সৃষ্টি করেন এবং ইন্দ্র যেমন অন্তরিক্ষে অবস্থান করেন তেমনি বর্ষণোন্মুখ হতে জলযুক্ত জলাশয়ে গিয়ে অবস্থান করছেন।। (৫৬৩) অন্তরিক্ষে অবস্থিত গাভীর মত শব্দকারী, মেঘের মধ্যে অবস্থিত মধুময় জলরাশি ইন্দ্রকে লক্ষ্য করে প্রবাহিত হলে আকাশ উজ্জ্বলবর্ণ ধারণ করলো।। (৫৬৪) সুবর্ণরশ্মিগণ বর্ষণ কর্মকে রাঙিয়ে তুলছে, সুপ্রকাশিত করছে, সম্যক্‌ মিশিয়ে দিচ্ছে, লেহন করছে, ক্ষরণ করছে। নদীর উচ্ছ্বাসে পতনোন্মুখ বারিকণাকে (=জলকে) সুবর্ণরশ্মিগণ পশুর মত ধরে নিয়ে জলে প্রবেশ করাচ্ছে।। (৫৬৫) হে ব্রহ্মের রক্ষক সোম, পবিত্র তোমার বিস্তার; তোমার বিপুল অঙ্গ সর্বদিকে বিস্তৃত। অতপ্ত দেহের মত অপক্ক জল (=যা রশ্মির দ্বারা সম্যক্‌ পরিশোধিত হয় নি এমন যে জল) রোগ বিস্তার করে; সম্যক্‌ পরিপক্ক জলরাশির দ্বারাই সকল ভোগ সাধিত হয়।।

দশম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১২।। দেবতা পবমান সোম।। ছন্দ উষ্ণিক্‌। ঋষি ১।৭।১১ দাক্ষুষ অগ্নি, ২ মানব চক্ষু, ৩।১০ পর্বত ও নারদ কান্ব, শিখন্ডিনী ও অপ্সরা কাশ্যপা, ৪।৯ পর্বত ও নারদ কান্ব, ৫ ত্রিত আপ্ত্য, ৬ আপ্সব মনু, ৮।১১ দ্বিত আপ্ত্য।।

মন্ত্রঃ-
(৫৬৬)  ইন্দ্রমচ্ছ সূতা ইম বৃষণং যন্তু হরয়ঃ। শ্রুষ্টে জাতাস ইন্দবঃ স্বর্বিদঃ।।১।।
(৫৬৭)  প্র ধন্বা সোম জাগৃবিরিন্দ্রায়েন্দো পরি স্রব। দ্যুমন্তং শুস্মমা ভর স্ববির্দম্‌।।২।।
(৪৬৮)  সখায় আ নিশীদত পুনানায় প্র গায়ত। শিশুং ন যজ্ঞৈ পরি ভূষত শ্রিয়ে।।৩।।
(৪৬৯)  তং বঃ সখায়ো মদায় পুনানমভি গায়ত। শিশং ন হব্যৈঃ স্বদয়ন্ত গূর্তিভিঃ।।৪।।
(৪৭০)  প্রাণা শিশুর্মহীনাং হিন্বন্নৃতস্য দীধিতিম্‌। বিশ্বা পরি প্রিয়া ভুবদধ দ্বিতা।।৫।।
(৪৭১)  পবস্ব দেববীতয় ইন্দো ধারাভিরোজসা। আ কলশং মধুমান্‌ৎসোম নঃ সদঃ।।৬।।
(৪৭২)  সোমঃ পুনান ঊর্মিণাব্যং বারং বি ধাবতি। অগ্রে বাচঃ পবমানঃ কনিক্রদৎ।।৭।।
(৪৭৩)  প্র পুনানায় বেধসে সোমায় বচ উদ্যতে। ভৃতিং ন ভরা মতিভির্জুজোষতে।।৮।।
(৪৭৪)  গোমন্ন ইন্দো অশ্ববৎসুতঃ সুদক্ষ ধনিব। শুচিং চ বর্ণমধি গোষু ধারয়।।৯।।
(৫৭৫) অস্মভ্যং ত্বা বসুদিবমভি বাণিরণূষত। গোভিষ্টে বর্ণমভি বাসয়ামসি।।১০।।
(৫৭৬)  পবতে হর্যতো হরিরতি হ্বরাংসি রংহ্যা। অভ্যর্ষ স্তোতৃভ্যো বীরবদ্‌ যশঃ।।১১।।
(৫৭৭) পরি কোশং মধুশ্চুতং সোমঃ পুনানো অর্ষতি। অভি বানীঋর্ষীণাং সপ্তানূষত।।১২।।

অনুবাদঃ (৫৬৬) এই অভিষুত উজ্জ্বল সোমসকল, যারা এইমাত্র জাত হলেন, যাঁরা সূর্যকে জানেন, তাঁরা বর্ষণশীল ইন্দ্রের কাছে গমন করুন। (৫৬৭) হে সোম, অন্তরিক্ষ হতে সদাজাগ্রতরূপে এস; হে ইন্দু, ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও, অতি গম্ভীর শব্দকারী, বলদীপ্ত, সূর্যবেত্তা ইন্দ্রকে পরিস্রবণে ভরে দাও।। ইন্দু, ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও, অতি গম্ভীর শব্দকারী, বলদীপ্ত, সূর্যবেত্তা ইন্দ্রকে পরিস্রবণে ভরে দাও।। (৫৬৮) সে সখাগণ, এস, বস; ক্ষরণশীল সোমকে ঘিরে গান কর। শিশুর মত নবজাত এই সোমের শ্রীবৃদ্ধির জন্য যজ্ঞের দ্বারা একে পরিভূষিত কর।। (৫৬৯) হে সখাগণ, তোমাদের আনন্দের জন্য সেই ক্ষরণশীল সোমের উদ্দেশে গান গাও। শিশুর মত নবজাতক এই সোমকে গানের দ্বারা এবং হব্যদানের দ্বারা আহ্লাদিত কর। (৫৭০) জলরাশির প্রাণ এই শিশু জলের উজ্জ্বল সৌন্দর্যকে ধারণ করেন। তারপর দুভাগে বিভক্ত হয়ে সকলের প্রিয় এই জল পৃথিবীর সকল কিছু হলেন।। (দুইভাগ = পৃথিবীর উত্তর ভাগ ও দক্ষিণভাগ)।। (৫৭১) হে ইন্দু, সকল ঔজ্জ্বল্য ধারণ করে দেবগণের আনন্দের জন্য ধারারূপে ক্ষরিত হও। হে মধুমান সোম, অন্তরিক্ষ হতে কলশে (=পৃথিবীতে) আগমন কর। [কলশ = পৃথিবীরূপ কলশ যেখানে সর্বদাই জল থাকে যেমন কলশে জলের তলানি অবশিষ্ট থাকা]।। (৫৭২) ক্ষরণের জন্য প্রস্তুত শোধিত সোম মেঘ থেকে তরঙ্গায়িত হয়ে জলাশয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। সম্মুখে শব্দকে রেখে ক্ষরণশীল সোম শব্দ করতে করতে আসছেন।। (৫৭৩) জগৎধারক ক্ষরণশীল সোমের উদ্দেশে স্তুতি উচ্চারিত হচ্ছে। ভৃতির মত পরিপূর্ণ স্তুতিবাক্যের দ্বারা তাকে প্রীত করা হচ্ছে।। (৫৭৪) হে ইন্দু, তুমি জলপূর্ণ, রশ্মিযুক্ত, অভিষুত, সদক্ষ ধনযুক্ত; তোমার দীপ্তি ও বর্ণলীলা জলরাশির উপরে ধারণ কর। (৫৭৫) ধনবিদ তোমাকে লক্ষ্য করে আমাদের স্তুতিবাক্য স্তব করেছে; জলমধ্যে তোমার বর্ণলীলা আমরা উপভোগ করি। (৫৭৬) আনন্দময় হরি (=সোম) দ্রুতগমনের দ্বারা কুটিল পথ সকল অতিক্রম করে ক্ষরিত হলেন। স্তোতাদের জন্য বীরযুক্ত যশ (=অন্ন) দান করলেন। (৫৭৭) মেঘের সকল দিক থেকে মধুক্ষরা শুদ্ধ সোম বর্ষণ করছেন। ঋষিদের সপ্ত ছন্দে রচিত বাণী তাঁকে লক্ষ্য করে স্তব করেছিল।।

একাদশ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ৮।। দেবতা পবমান সোম।। ছন্দ ককুপ্‌, ৫ যবমধ্যা গায়ত্রী।। ঋষি ১ গৌরিবীত শাক্ত্য, ২ ঊর্ধ্বসদ্মা আঙ্গিরস, ৩। ৮ ঋজিশ্বা ভারদ্বাজ, ৪ কৃতযশা আঙ্গিরস, ৫ ঋণঞ্জয় রাজর্ষি আঙ্গিরস, ৬ শক্তি বাসিষ্ঠ, ৭ ঊরু আঙ্গিরস।।

মন্ত্রঃ-
(৫৭৮) পবস্ব মধুমত্তম ইন্দ্রায় সোম ক্রতুবিত্তমো মদঃ।
মহি দ্যুক্ষতমো মদঃ।।১।।
(৫৭৯)  অভি দ্যুম্নং বৃহদ্‌ যশ ইষস্পতে দীদিহি দেব দেবযুম।
বি কোশং মধ্যমং যুব।।২।।
(৫৮০) আ সোতা পরি ষিষ্ণতাশ্বং ন স্তোমমপ্তৃরং রজস্তুরম্‌।
বনপ্রক্ষমুদপ্রুতম্‌।।৩।।
(৫৮১)  এতমু ত্যং মদচ্যুতং সহস্রধারং বৃষভং দিবোদুহম্‌।
বিশ্বা বসূনি বিভ্রতম্‌।।৪।।
(৫৮২)  স সুন্বে যো বসুনাং যো রায়াময়ানেতা যা ইড়ানাম্‌।
সামো যঃ সুক্ষিতীনাম্‌।।৫।।
(৫৮৩) ত্বং হ্যাতঙ্গ দৈব্যং পবমান জনিমানি দ্যুমত্তমঃ।
অমৃতত্বায় ঘোষয়ন্‌।।৬।।
(৫৮৪)  এষ স্য ধারয়া সুতোহব্যা বারেভিঃ পবতে মদিন্তমঃ।
ক্রীড়ন্নুর্মিরপামিব।।৭।।
(৫৮৫) য উস্রিয়া অপি যা অন্তরশ্মনি নির্গা অকৃন্তদোজসা।
অভি ব্রজং তত্নিষে গব্যমশ্ব্যং বর্মীব ধৃষ্ণবা রুজ।।৮।।

অনুবাদঃ (৫৭৮) হে সোম, তুমি উত্তম মধুময় রসযুক্ত ও উত্তম কর্মযুক্ত। তুমি মত্ত হয়ে ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিত হও। তুমি অতি দীপ্তিমান, মত্ত, মহান।। (৫৭৯) হে অন্নের অধিপতি দেব, আকাশস্থ মেঘকে উত্তমরূপে মিশ্রিত কর; দেবকাম উজ্জ্বল প্রভূত অন্নকে আমাদের উদ্দেশে দান কর।। (৫৮০) যিনি অশ্বের মত গতিসম্পন্ন ও স্তবযুক্ত, যিনি বৃষ্টি প্রদানকারী ও অন্তরিক্ষচারী, যিনি উদকের দ্বারা পরিপ্লুত হয়ে বনে বনে শব্দ সহকারে প্রবেশ করেন, সেই সোমকে সর্বদিকে সেচন কর।। (৫৮১) এই সেই সোম যাঁকে দ্যুলোক থেকে দোহন করে আনা হয়েছে; ইনি সহস্রধারায় মধুক্ষরা; বিশ্বের সকল ধন ধারণ করে আছেন।। (৫৮২) সেই সোমকেই অভিষুত করা হয়েছে, যিনি সম্পদের, অন্নের ও কর্ষণযোগ্য সুন্দর ভূমির মধ্যে অবস্থান করে আমাদের সকল ধন দান করেন।। (৫৮৩) হে অতি উজ্জ্বলকান্তি পবমান সোম, তুমি ক্ষিপ্ত ও দ্যুলোকসন্বন্ধযুক্ত; তুমি অমৃতত্ব ঘোষণা করতে করতে ক্ষরিত হয়ে থাক (=মৃত্যু নাই, ভয় নাই, একথা বলতে বলতে তুমি ক্ষরিত হও)।। (৫৮৪) দেখ, মদশ্রেষ্ঠ সোম-ধারা মেঘ থেকে উত্তমরূপে নিঃসৃত হয়ে তরঙ্গায়িত ছন্দে খেলা করতে করতে জলাশয়ের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য ক্ষরিত হচ্ছেন।। (৫৮৫) হে সোম, মেঘের মধ্যে যা কিছু জল ও রশ্মি ছিল তা তুমি বলের দ্বারা নির্গত করেছ; তুমি বর্মধারী দুর্ধর্ষ বীরের মত মেঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে বিদীর্ণ করে অন্ন ও গতির বিস্তার সাধন করেছ।।