Tuesday, July 9, 2013

সামবেদ-সংহিতা, চতুর্থ অধ্যায়, ঐন্দ্র কান্ডঃ ইন্দ্রস্তুতি

প্রথম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ৮।। দেবতা ১।৪।৬।৮ ইন্দ্র, ৫ মরুদ্‌গণ, ৭ দধিক্রাবা।। ছন্দ অনুষ্টুপ।। ঋষি ১ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, ২ বামদেবগৌতম বা শাকপূত, ৩ প্রিয়মেধ আঙ্গিরস, ৪ প্রগাথ কাণ্ব, ৫ শ্যাবাশ্ব আত্রেয়, ৬ শংযু বার্হস্পত্য, ৭ বামদেব গৌতম, ৭ জেতা মাধুচ্ছন্দস।।

মন্ত্রঃ-
(৩৫২)  প্রত্যস্মৈ পিপীষতে বিস্বানি বিদুষে ভর।
অরঙ্গমায় জগ্ময়েহ পশ্চাদধ্বনে নরঃ।।১।।
(৩৫৩) আ নো বয়ো বয়ঃশয়ং মহান্তং গহ্বরেষ্ঠাম্‌ মহান্তং পূর্বিনেষ্ঠাম্‌।
উগ্রং বচো অপাবধীঃ।।২।।
(৩৫৪)  আ ত্বা রথং যথোতয়ে সুম্নায় বর্তয়ামসি।
তুবিকূর্মিমৃতীষহমিন্দ্রং শবিষ্ঠ সৎপতিম্‌।।৩।।
(৩৫৫) স পূর্ব্যো মহোনাং বেনঃ ক্রতুভিরানজে।
যস্য দ্বারা মনুঃ পিতা দেবেষু ধিয় আনজে।।৪।।
(৩৫৬)  যদী বহন্ত্যাশবো ভ্রাজমানা রথেম্বা।
পিবন্তো মদিরং মধু তত্র শ্রবাংসি কৃন্বতে।।৫।।
(৩৫৭) ত্যমু বো অপ্রহণং গৃণীষে শবসস্পতিম্‌
ইন্দ্রং বিশ্বাসাহং নরং শবিষ্ঠং বিশ্ববেদসম্‌।।৬।।
(৩৫৮) দধিক্রাব্‌ণো অকারিষং জিষ্ণোরশ্বস্য বাজিনঃ।
সুরভি নো মুখা করৎ প্র ণ আয়ূংষি তারিষৎ।।৭।।
(৩৫৯)  পুরাং ভিন্দুর্যুবা কবিরমিতৌজা অজায়ত।
ইন্দ্রো বিশ্বস্য কর্মণো ধর্তা বজ্রী পুরুষ্টুতঃ।।৮।।

অনুবাদঃ (৩৫২) সর্ববেত্তা পিপাসিত ইন্দ্রের উদ্দেশে তোমরা সকল সোম অর্পণ কর। তিনি সর্বগামী, সকল যজ্ঞের নায়ক, অগ্রণী।। (৩৫৩) গর্ভে থাকাকালীন অবস্থাতেই আমাদের জন্য মহান্‌ অন্ন তুমি প্রস্তুত করে রাখ। তোমার এই মহান্‌ ব্রত চিরকাল ধরে প্রচলিত আছে। হে ইন্দ্র, উগ্র বচন দূর কর।। (৩৫৪) বহুকর্মা শত্রু পরাজয়কারী বলিষ্ঠ সৎপতি ইন্দ্রকে আমি আমার রক্ষা ও সুখের জন্য সূর্যের মত আবর্তিত করছি।। (৩৫৫) তিনিই পূজ্যগণের মধ্যে প্রথম, তিনিই সর্বলোককান্ত আলোকময় দেবতারূপে (=বেন) কর্মসকলের দ্বারা সকল কিছুই প্রাপ্ত হয়েছিলেন, যাঁকে অবলম্বন করে মনু (আদিত্য) পিতা দেবগণের মধ্যে (=রশ্মিগণের মধ্যে) জ্ঞানকর্ম প্রাপ্ত হয়েছেন।। ((৩৫৬) যখনই ক্ষিপ্রগামী দীপ্ত রশ্মিগণ তোমাকে রথে বহন করে তখনই তাঁরা মদির মধুপান করতে করতে (রশ্মিদ্বারা জলবাস্প আকর্ষণ করতে করতে) অন্নসম্পদ সৃষ্টি করেন। (৩৫৭) তোমাদের মঙ্গলের জন্য সেই উপকারক অন্নবলপতি ইন্দ্রকে স্তব কর, যিনি বিশ্বজয়ী শ্রেষ্ঠবলনায়ক বিশ্বজ্ঞানী।। (৩৫৮) চলনপটু শব্দকারী সর্বজয়ী [রশ্মিগণ জলসৃষ্টির দ্বারা অন্নসৃষ্টিকারী বলে সর্বজয়ী] অশ্বরশ্মির (=দধিক্রার) স্তুতি করি। হর্ষকারক বৃষ্টিরূপ অগ্রসেনাকে আমাদের জন্য প্রেরণ কর, আমাদের আয়ু বৃদ্ধি কর।। (৩৫৯) ইন্দ্র সকল জীবদেহের অন্তরাত্মা (=পুরাম্‌ ভিন্দুঃ); তিনি একই সময়ে অনেক কর্ম করেন (=যুবা) এবং গতির দ্বারা সেই কর্মকে অতিক্রম করেন (=কবি), তিনি অমিতবলরূপে জাত হয়ে বিশ্বের সকল কর্মের ধারক, বজ্রধারী ও বহুস্তুত।।

দ্বিতীয় খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।। দেবতা ১-৭ ইন্দ্র (ঋগ্বেদে ৬ মন্ত্রের দেবতা অগ্নি), ৮ ঊষা, ৯ বিশ্বদেবগণ, ১০ ঋক্‌ ও সাম।। ছন্দ অনুষ্টুপ্‌।। ঋষি ১।৩।৫ প্রিয়মেধ আঙ্গিরস, ২।১০ বামদেব গৌতম, ৮ মধুছন্দা বৈশ্বামিত্র, ৬ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, ৭ অত্রি ভৌম, ৮ প্রস্কণ্ব কাণ্ব, ৯ ত্রিত আপ্ত্য।।

মন্ত্রঃ-
(৩৬০)  প্র প্র বস্ত্রিষ্টুভমিষং বন্দদ্বীরায়েন্দবে।
ধিয়া বো মেধসাতয়ে পুরন্ধ্যা বিবাসতি।।১।।
(৩৬১) কশ্যপস্য স্বর্বিদো যাবাহুঃ সযুজাবিতি।
যযোর্বিশ্বমপি ব্রতং যজ্ঞং ধীরা নিচায্য।।২।।
(২৬২) অর্চত প্রার্চতা নরঃ প্রিয়মেধাসো অর্চত।
অর্চন্তু পুত্রকা উত পুরমিদ্‌ ধৃষ্ণ্বর্চত।।৩।।
(৩৬৩) ঊক্‌থমিন্দ্রায় শংস্যং বর্ধনং পুরুনিষ্‌ষিধে।
শক্রো যথা সুতেষু নো রারণৎ সখ্যেষু চ।।৪।।
(৩৬৪) বিশ্বানরস্য বস্পতিমনানতস্য শবসঃ।
এবৈশ্চ চর্ষণীনামূতী হুবে রথানাম্‌।।৫।।
(৩৬৫) স ঘা যস্তে দিবো নরো ধিয়া মর্তস্য শমতঃ
ঊতী স বহতো দিবো দ্বিষা অংহো ন তরতি।।৬।।
(৩৬৬) বিভোষ্ট ইন্দ্র রাধসো বিভ্বী রাতিঃ শতকৃতো।
অথা নো বিশ্বচর্ষণে দ্যুম্নং সুদত্র মংহয়।।৭।।
(৩৬৭) বয়শ্চিত্তে পতত্রিণো দ্বিপাচ্চতুস্পাদর্জুনি।
ঊষঃ প্রারন্‌নৃতূঁরনু দিবো অন্তেভ্যস্পরি।।৮।।
(৩৬৮) অমী যে দেবা স্থন মধ্য আরোচনে দিবঃ।
কদ্‌ ব ঋতং কদমৃতং কা প্রত্বা ব আহুতিঃ।।৯।।
(৩৬৯) ঋচং সাম যজামহে যাভ্যাং কর্মাণি কৃন্বতে।
বি তে সদসি রাজতো যজ্ঞং দেবেষু বক্ষতঃ।।১০।।

অনুবাদঃ (৩৬০) তোমরা (অন্নপ্রস্তুতের) সামর্থ্যযুক্ত জল কামনা করে অন্নের জন্য ইন্দ্রের স্তুতি কর। ইন্দ্র যজ্ঞসাধনের জন্য কর্মের দ্বারা বহুপ্রজ্ঞার দ্বারা তোমাদের পরিচর্যা করেন। (৩৬১) সূর্যের গতিপথের সন্ধান জানেন ইন্দ্রের যে দুরি যুক্ত অশ্ব (=রশ্মি বা দেশ-কাল বা অহোরাত্র) তাঁরাই সকলই কর্ম ও যজ্ঞকে ধারণ করে আছেন, পণ্ডিতেরা এইরূপ বলে থাকেন। (৩৬২) প্রিয়মেধা ঋষির প্রিয়জনগণ, তোমরা ইন্দ্রের অর্চনা কর, অন্তর দিয়ে অর্চনা কর, তাঁকেই অর্চনা কর। তোমাদের সন্তানেরাও জীবের আত্মা ইন্দ্রকে অর্চনা করুক, অতি অনুরাগে অর্চনা কর।। (৩৬৩) বহু অপশক্তির নিবারক ইন্দ্রের উদ্দেশে আমাদের এই উৎকৃষ্ট সামগান; শক্তিমান ইন্দ্র যেন আমাদের যজ্ঞকর্মে ও সখ্যতায় অত্যন্ত অনুরক্ত হন।। (৩৬৪) বিশ্বের অধিনায়ক, দুর্দমনীয় বলের অধিপতি ইন্দ্রকে তোমাদের এবং জনগণের কাম্যবস্তু লাভের জন্য রশ্মিসমূহের গমন পথে (রথানাম্‌ উতী=কিরণরাশি যে পথে গমন করে সেই পথ) আহ্বান করি।। (৩৬৫) মর্তের যে মানুষ কর্ম ও প্রজ্ঞার দ্বারা তোমার পূজা করে সে দ্যুলোক প্রাপ্ত হয়। দ্যুলোকের মহান পথে গমন করে সে হিংসা দ্বেষকে অতিক্রম করে।। (৩৬৬) হে ইন্দ্র, হে শতযজ্ঞকর্মা, তোমার বিভূতি সর্বসিদ্ধিকরধন ও দানবহ। অতএব হে বিশ্বদ্রষ্টা, হে মঙ্গলদাতা, আমাদের প্রচুর ঐশ্বর্য প্রদান কর।। (৩৬৭) হে শুভ্র আলোকের দেবী ঊষা, তোমার আগমনকালে ঋতুদের অনুসরণ করে দ্বিপদ ও চতুস্পদ যুক্ত পক্ষীরূপা উদকবহনকারী রশ্মিগণ দ্যুলোকের অন্তঃস্থলে অবস্থান করে।। (৩৬৮) এই যে বিশ্বদেবগণ (=সকল রশ্মিগণ) যে তোমরা দ্যুলোকের আলোকময় মধ্যভাগে বাস কর তোমাদের ঋতকর্মই বা কি অনৃতকর্মই বা কি, কিই বা তোমাদের প্রাচীনতা, কিই বা তোমাদের আহুতি? (অর্থাৎ এদের বিষয়ে কিছুই জানা যায় না) (৩৬৯) এই ঋক্‌ সামের দ্বারা দেবগণের পূজা করি, যা থেকে কর্ম সম্পন্ন হয়। এই স্তোত্রমন্ত্রসকলই গৃহে (বা যজ্ঞসভায়) বিরাজ করে এবং যজ্ঞকে দেবগণের কাছে নিয়ে চলে।।

তৃতীয় খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১১।। দেবতা ইন্দ্র, ২ দ্যাবাপৃথিবী।। ছন্দ জগতী, ১ অতি জগতী, ১০ মহাপঙ্‌ক্তি।। ঋষি ১ রেভ কাশ্যপ, ২ সুবেদা শৈরীষি বা শৈলুষি, ৩ বামদেব গৌতম, ৪।৭।৮ সব্য বা সত্য আঙ্গিরস, ৫ বিশ্বামিত্র গাথিন, ৬ কৃষ্ণ বা আঙ্গিরস, ৯ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, ১০ মেধাতিথি কান্ব (ঋগ্বেদে মান্ধাতা যৌবনাশ্ব), ১১ কুৎস আঙ্গিরস।।

মন্ত্রঃ-
(৩৭০) বিশ্বাঃ পৃতনা অভিভূতরং নরঃ সজুস্ততক্ষুরিন্দ্রং জজনুশ্চ রাজসে।
ক্রত্বে বরে স্থেমন্যামুরীমুতোগ্রমোজিষ্ঠং তরসং তরস্বিনম্‌।।১।।
(৩৭১)  শ্রত্তে দধামি প্রথমায় মন্যবেহনন্যদ্দস্যুং নর্যং বিবেরপঃ।
উভে যত্বা রোদসী ধাবতামন্য ভ্যসাতে শুষ্মাৎ পৃথিবী চিদদ্রিবঃ।।২।।
(৩৭২) সমেত বিশ্বা ওজসা পতিং দিবো ষ এক ইদ্‌ ভূরতিথির্জনানাম্‌।
স পূর্ব্যো নূতনমাজিগীষং তং বর্তনীরনুবাবৃত এক ইৎ।।৩।।
(৩৭৩)         ইমে ত ইন্দ্র তে বয়ং পুরুষ্টুত যে ত্বারভ্য চরামসি প্রভূবসো।
নহি ত্বদন্যো গির্বণো গিরঃ সঘৎ ক্ষোণীরিব প্রতি তদ্ধর্য নো বচঃ।।৪।।
(৩৭৪) চর্ষণীধুতং মঘবানমুকথ্যাতমিন্দ্রং গিরো বৃহতীরভ্যনূষত।
বাবৃধানং পুরুহূতং সুবৃক্তিভিরমর্ত্যং জরমাণং দিবেদিবে।।৫।।
(৩৭৫)         অচ্ছা ব ইন্দ্রং মতয়ঃ স্বর্যুবঃ সধ্রীচীর্বিশ্বা উশতীরনূশত পরি
স্বজন্ত জনয়ো যথা পতিং মর্যং ন শুন্ধ্যুং মঘবানমূতয়ে।।৬।।
(৩৭৬) অভি ত্যং মেষং পুরুহূতমৃগ্মিয়মিন্দ্রং গীর্ভির্মদতা বস্বো অর্ণবম্‌।
যস্য দ্যাবো ন বিচরন্তি মানুষং ভুজে মংহিষ্ঠমভিবিপ্রমর্চত।।৭।।
(৩৭৭)         ত্যং সু মেষং মহয়া স্বর্বিদং শতং যস্য সুভুবঃ সাকমীরতে।
অত্যং ন বাজং হবনস্যদং রথমিন্দ্রং ববৃত্যামবসে সুবৃক্তিভিঃ।।৮।।
(৩৭৮) ঘৃতবতী ভুবনানামভিশ্রিয়োর্বী পৃথ্বী মধুদুঘে সুপেশসা।
দ্যাবাপৃথিবী বরুণস্য ধর্মণা বিষ্কভিতে অজরে ভূরিরেতসা।।৯।।
(৩৭৯) উভে যদিন্দ্র রোদসী আপপ্রাথোষা ইব।
মহান্তং ত্বা মহীনাং সম্রাজং চর্ষণীনাম্‌।
দেবী জনিত্র্যজীজনদ্‌ভদ্রা জনিত্র্যজীজনৎ।।১০।।
(৩৮০) প্র মন্দিনে পিতুমদর্চতা বচো যঃ কৃষ্ণগর্ভা নিরহন্নজিশ্বনা।
অবস্যবো বৃষণং বজ্র বৃষণং বজ্রদক্ষিণং মরুত্বন্তং সখায় হুবেমহি।।১১।।

অনুবাদঃ (৩৭০) বিশ্বের বরগণ প্রীত হয়ে সকল সংগ্রামে ইন্দ্রকেই শত্রুপরাজয়কারীরূপে নিরূপণ করেছেন এবং সং গ্রামে তিনিই অধিস্বামীরূপে বিরাজিত হন। সেই বলিষ্ঠ, উগ্র, অতি মহান প্রবৃদ্ধ ইন্দ্রকে সকল সঙ্কল্পে ও বরণীয় কর্মে তাঁরা কামনা করেন।। (৩৭১) একথা সত্য যে তোমাকে প্রধান বলে মানি; কারণ তুমি জীবের প্রয়োজনে বৃত্রবধ করে বৃষ্টি, কর্ম, জ্ঞান প্রভৃতির সৃষ্টি করেছে; হে মেঘবিদারণকারী ইন্দ্র, দ্যুলোক ও পৃথিবী তোমার বলে ভীত হয়ে দুজনেই নিজ নিজ কর্ম করবার জন্য গতিযুতক হয়েছে। (৩৭২) হে নরগণ, যিনি স্বীয় তেজে দ্যুলোকে এক ও অদ্বিতীয়রূপে বিরাজমান, যিনি সকল জনের কাছে অতিথির মত পূজ্য, সেই চিরপুরাতন অদ্বিতীয় ইন্দ্র বারবার আবর্তনের দ্বারা বিজয়ী ও নব রূপে দেখা দেন।। [ইন্দ্র=সূর্য]।। (৩৭৩) হে ইন্দ্র, হে বহুস্তুত, হে বহুধন, এই যা কিছু সব এবং আমরা যারা কর্মের জন্য বিচরণ করি, এ সবই তোমার। হে স্তুতিপ্রিয়, তুমি ছাড়া আর কেউ নেই আমাদের স্তুতি গ্রহণ করতে, যেমন পৃথিবী ছাড়া আর কেউ নেই আমাদের ধারণ করতে। হে সকল ইচ্ছাপূরক, আমাদের স্তুতি গ্রহণ কর।। (৩৭৪) মানুষের রক্ষক, ধনবান স্তুতিযুক্ত ইন্দ্রকে মহান সঙ্গীতের দ্বারা স্তব কর। তিনি সদা বর্ধমান, বহুর দ্বারা আহূত, দোষবর্জিত সুশোভন কর্মের দ্বারা মরণরহিত এবং প্রতিদিন আয়ুক্ষয়কারী (অথবা প্রতিদিন পূজিত)।। (৩৭৫) তোমাদের বুদ্ধি ও জ্ঞানালোকের জন্য তোমরা সকলে মিলে একাগ্রচিত্তে সকল কামনা পূরণের জন্য ইন্দ্রকে স্তব কর। পত্নী যেমন স্বামীর সেবে করে মানুষেরাও তেমনি সকল রক্ষার জন্য ধনদাতা শুদ্ধজ্ঞান ইন্দ্রকে ঘিরে থাকে।। (৩৭৬) ধনসমুদ্র, বহুর দ্বারা স্তুত, সর্ববস্তুর প্রতি সমদর্শী (=মেঘ), স্তুতির দ্বারা আহ্লাদিত, অর্চনীয় বিদ্যুৎরূপী অগ্নি ইন্দ্রকে স্তব কর। যাঁর কর্ম দ্যুলোকের আলোকরাশির মত মানুষের ভোগের জন্য বিচরণ করে সেই শ্রেষ্ঠ চৈতন্য ইন্দ্রকে অর্চনা কর। (৩৭৭) যিনি সুন্দররূপে সমদর্শী, যিনি নিজ নিজ মাহাত্ম্যে স্বর্লোককে জানিয়ে দেন, যাঁর সুন্দর ভুবনের শতকর্ম একই সঙ্গে চলতে থাকে, বেগবান্‌ অশ্বের মত যিনি সকল যজ্ঞকর্মের প্রতি ধাবিত হন সেই ইন্দ্রকে আমাদের রক্ষার জন্য দোষবর্জিত শোভন কর্মের দ্বারা নিভৃতে আরাধনা করি।। (৩৭৮) হে দ্যু ও পৃথিবী, তোমরা মজনে উদকবর্তী, ভুবনের সকলের আশ্রয়স্বরূপা, বিপুলা, মধুদুঘা, সুরূপা। তোমরা দুজনে বরুণদেবের (=সূর্যদেবের) ধারণকার্যের দ্বারা চিরকাল বিভক্তরূপে বর্তমান থেকে প্রচুর প্রজনন ক্ষমতা যুক্তা (ভূরিরেতসা)।। (৩৭৯) যখন হে ইন্দ্র, তুমি ঊষার মত দ্যুলোক ও পৃথবীকে আলোকে পরিপূর্ণ করি, তখন তুমি মানুষের মধ্যে যে সম্রাট্‌ তার থেকেও মহান সম্রাট্‌রূপে বিরাজিত হও। কল্যাণময়ী অদীনা অক্ষয়া মাতা অদিতি দেবী তোমাকে জন্ম দিয়েছেন, তিনিই তোমাকে জন্ম দিয়েছেন।। (৩৮০) স্তুতির যোগ্য ইন্দ্রের উদ্দেশে অন্নসহযোগে স্তুতি অর্পণ কর, যে ইন্দ্রের বাক্যমাত্রই তাঁর দুইর অশ্ব ঘনকালোমেঘের অন্তর্গত বারিরাশিকে আঘাতের দ্বারা নিঃশেষে নির্গত করলো সকলের রক্ষণেচ্ছায়। বর্ষণকারী, দক্ষিণহস্তে বজ্রধারী মরুদ্‌গণের সখা ইন্দ্রের সঙ্গে সখ্যতার জন্য আমরা ইন্দ্রকে আহ্বান করি।।


চতুর্থ খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।। দেবতা ইন্দ্র।। ছন্দ ঊষ্ণিক্‌।। ঋষি ১ নারদ কাণ্ব, ২৩ গোষুক্তি ও অশ্বসুক্তি কাণ্বায়ন, ৪ পর্বত কাণ্ব, ৫।৬।৭।১০ বিশ্বমনা বৈয়শ্ব ৮ নৃমেধ আঙ্গিরস, ৯ গোতম বাহূগণ।।

মন্ত্রঃ-
(৩৮১) ইন্দ্র সুতেষু সোমেষু ক্রতুং পুনীষ উক্‌থ্যম্‌।
বিদে বৃধস্য দক্ষস্য মহাঁ হি ষঃ।।১।।
(৩৮২) তমু অভি প্র গায়ত পুরুহূতং পুরুষ্টুতম্‌,
ইন্দ্রং গীর্ভিস্তবীষমা বিবাসত।।২।।
(৩৮৩) তং তে মদং গৃণীমসি বৃষণং পৃক্ষু সাসহিম্‌।
ঊ লোককৃৎনুমদ্রিবো হরিশ্রিয়ম্‌।।৩।।
(৩৮৪) যৎ সোমমিন্দ্র বিষ্ণবি সোমমিন্দ্র বিষ্ণবি যদ্‌ বা ঘ ত্রিই আপ্ত্যে।
যদ্‌ বা মরুৎসু মন্দসে সমিন্দুভিঃ।।৪।।
(৩৮৫) এদু মধোর্মদিন্তরং সিঞ্চাধ্বর্যো অন্ধসঃ।
এবা হি বীর স্তবতে সদাবৃধঃ।।৫।।
(৩৮৬) এন্দুমিন্দ্রায় সিঞ্চত পিবাতি সোম্যং মধু।
প্র রাধাংসি চোদয়তে মনিত্বনা।।৬।।
(৩৮৭) এতো ন্বিন্দ্রং স্তবাম সখায়ঃ স্তোম্যং নরম।
কৃষ্টীর্যো বিশ্বা অভ্যস্ত্যেক ইৎ।।৭।।
(৩৮৮) ইন্দ্রায় সাম গায়ত বিপ্রায় বৃহতে বৃহৎ।
ব্রহ্মকৃতে বিপশ্চিতে পনস্যবে।।৮।।
(৩৮৯) য এক ইদ্‌ বদয়তে বসু মর্তায় দাশুষে।
ঈশানো অপ্রতিষ্কুত ইন্দ্রো অঙ্গ।।৯।।
(৩৯০) সখায় আ শিষামহে ব্রহ্মেন্দ্রায় বজ্রিণে।
স্তুষ ঊ ষু বো নৃতমায় ধৃষ্ণবে।।১০।।

অনুবাদঃ (৩৮১) হে ইন্দ্র, অভিষুত সোমযোগে যজ্ঞকর্ম ও স্তুতিকে পবিত্র কর; দক্ষতা ও বৃদ্ধির জন্যই ইন্দ্র মহান।। (৩৮২) বহুজনের দ্বারা আহূত, বহুজনের দ্বারা স্তুত সেই ইন্দ্রের উদ্দেশে উত্তমরূপে গান কর। মহাবল ইন্দ্রকে সঙ্গীতে পরিতুষ্ট কর।। (৩৮৩) হে বজ্রধারী ইন্দ্র, তুমি রশ্মিআশ্রিত ও লোককল্যাণকারী অভীষ্ট বর্ষণকারী, শত্রুপরাভবকারী তোমার উল্লাসের প্রশংসা করি।। (৩৮৪) হে ইন্দ্র, যে সোম বিষ্ণুতে আছে, অথবা যে সোম তোমার সহচর সর্বব্যাপী রশ্মি ত্রিত আপ্তো আছে, অথবা যে সোম মরুৎ বায়ুগণের মধ্যে আছে, তুমি সেই সকল সোমের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দে মত্ত হয়।। [আপ্ত্যগণ সর্বব্যাপী মাধ্যমিক রশ্মি এঁরা সংখ্যায় তিনজন একত, দ্বিত ও ত্রিত। এঁরা ইন্দ্রের সহচরী হয়ে জলপ্রদানে সহায়তা করেন। এই মন্ত্রে সোম=জল]।। (৩৮৫) হে অধ্বর্যু (=যজ্ঞের এক ঋতি্‌ক), সোমরূপ মদকর অন্নের অতি মদির অংশ ইন্দ্রের জন্য সেচন কর। এইভাবেই সদাবৃদ্ধিশীল বীর ইন্দ্র স্তুত হন।। (৩৮৬) ইন্দ্রের উদ্দেশে সোম সিঞ্চন কর। তিনি সোমময় মধু পান করে থাকেন এবং সোমপানের দ্বারা মহান হয়ে সর্বসিদ্ধিকর ধনসম্পদ প্রেরণ করেন।। (৩৮৭) এস হে বন্ধুগণ শীঘ্র এস, এখনি স্তুতিযোগ্য নায়ক ইন্দ্রকে স্তব করবো, যিনি একাই বিশ্বের সকল মানুষের ঈশ্বর।। (৩৮৮) ইন্দ্রের উদ্দেশে সাম গান কর, মহান জ্ঞানীর উদ্দেশে বৃহৎ সাম গান কর। সেই ধনকারী চৈতন্যময় মহিমান্বিতের উদ্দেশে তোমরা গান কর।। (৩৮৯) যিনি একাই মর্তের মানুষের জন্য ও হব্যদাতার জন্য ধন বিভাগ করে দেন তিনিই অপ্রতিহত ক্ষিপ্র জগৎনিয়ামক ঈশ্বর ইন্দ্র।। (৩৯০) হে বন্ধুগণ, বজ্রধারী ধনাদীশ ইন্দ্রকে এখন সুখের জন্য স্তব করবো। তোমরাও উৎসাহী নায়কশ্রেষ্ঠ ইন্দ্রের স্তুতি কর।।

পঞ্চম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ৮।। দেবতা ১।২।৩।৪।৮ ইন্দ্র, ৫।৭ আদিত্যগণ, ৬ অগ্নি।। ছন্দ ঊষ্ণিক্‌, ৮ বিরাট্‌ ঊষ্ণিক্‌।। ঋষি ১ প্রগাথ ঘৌর কাণ্ব, ২ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, ৩ নৃমেধ আঙ্গিরস, ৪ পর্বত কাণ্ব, ৫।৭ ইরিম্বিঠি কাণ্ব, ৬ বিশ্বমনা বৈয়শ্ব, ৮ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি।।

মন্ত্রঃ-
(৩৯১)  গৃনে তদিন্দ্র তে শব উপমাং দেবতাতয়ে!
যদ্ধংসি বৃত্রমোজসা শচীপতে।।১।।
(৩৯২) যস্য ত্যচ্ছম্বরং মদে দিবোদাসায় রন্ধয়ণ্‌
অয়ং স সোম ইন্দ্র তে সুতঃ পিব।।২।।
(৩৯৩) এন্দ্র নো গধি প্রিয় সত্রাজিদগোহ্য।
গিরির্ন বিশ্বতঃ পৃথুঃ পতির্দিবঃ।।৩।।
(৩৯৪) য ইন্দ্র সোমপাতমো মদঃ শবিষ্ঠ চেততি।
যেনা হংসি ন্যাতত্রিণং তমীমহে।।৪।।
(৩৯৫) তুচে তুনায় তৎ সু নো দ্রাঘীয় আযুজী বসে।
আদিত্যাসঃ সুমহসঃ কৃণোতন।।৫।।
(৩৯৬) বেত্থা হি নিঋর্তীনাং বগ্রহস্ত পরিবৃজম্‌।
অহরহঃ শুন্ধ্যু পরিপদামিব।।৬।।
(৩৯৭) অপামীবামপ স্রিধমপ সেধত দুর্মতিম্‌।
আদিত্যাসো যুষোতনা নো অংহসঃ।।৭।।
(৩৯৮) পিবা সোমমিন্দ্র মন্দতু ত্বা যৎ তে সুষাব হর্ষশ্বাদ্রিঃ।
সোতুর্বাহুভ্যাং সুষতো নার্বা।।৮।।

অনুবাদঃ (৩৯১) হে ইন্দ্র, তোমার বলই তোমার উপমা; সুকর্মলাভের জন্য সেই বলকে স্তব করি, যে বলের দ্বারা হে বলপতি, তুমি মেঘরূপ বৃত্র শত্রুকে হনন করেছ।। (৩৯২) হে ইন্দ্র, সোমপানে মত্ত হয়ে দিবোবাস ঋষির কামনা পূরণের জন্য শম্বর হত্যা করেছিলে; এই সেই সোম তোমার জন্য প্রস্তুত হয়েছে; তুমি তা পান কর।। (৩৯৩) হে ইন্দ্র, তুমি সকলের প্রিয়, সকল যজ্ঞজয়কারী, তুমি অগোপনীয় [ইন্দ্র=সূর্য বা বিদ্যুৎ যাকেকেউ গোপন করতে পারে না]; তুমি আমাদের জন্য সকলভাবকে মিশ্রিত কর। তুমি গিরিপর্বতের মত সর্বত্র বিপুল হয়ে বিস্তৃত রয়েছ; তুমি দ্যুলোকের পতি।। (৩৯৪) যে ইন্দ্র সোমের (=জলের) রক্ষক, হর্ষান্বিত, শ্রেষ্ঠবল তিনি সকল কিছু জানেন। তুমি যে শক্তিতে নিঃশেষে শত্রু ধ্বংস কর তোমার সেই বল আমরা যাচ্‌ঞা করি। (৩৯৫) হে সুমহান আদিত্যগণ (বিভিন্ন ঋতুতে সূর্য আদিত্যের বিভিন্নরূপ-আদিত্যগণ), আমাদের সন্তান-সন্তুতিদের প্রিয়ত্বে মিলিতভাবে রাখ, তাদের জীবন দীর্ঘ কর। (৩৯৬) অগ্নি (বা সূর্য=শুন্ধ্যুঃ) যেমন সর্বক্ষণ পাপকে জানেন ও শুদ্ধ করেন (=অগ্নির পবিত্রতা কারকের মত) সেইরূপ হে বজ্রহস্ত ইন্দ্র, তুমিও পাপসমূহের পরিবর্জনীয় অংশকে জান (=তোমার বজ্রের দ্বারা পরিশুদ্ধ কর)।। (৩৯৭) হে আদিত্যগণ, রোগ দূর কর, বিঘ্ন দূর কর, দূর্মতি দূর কর; আমাদের সকল পাপ নাশ কর।। (৩৯৮) হে ইন্দ্র, সোম পান কর; সেই সোম তোমাকে আনন্দিত করুক। অশ্বরশ্মির দ্বারা সকল বস্তুর অভিভবকারী হে, ইন্দ্র, সুন্দরভাবে প্রস্তুত এই সোমকে সংযতস্বভাবযুক্ত মানুষেরা তাঁদের দুই বাহুবলে পেষণের দ্বারা প্রস্তুত করেছেন।।

ষষ্ঠ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতা ইন্দ্র (৩।৬ মরুদ্‌গণ)।। ছন্দ ককুপ।। ঋষি ১-৬, ৯, ১০ সৌভরি কাণ্ব; ৭।৮ নৃমেধ আজিরস।।

মন্ত্রঃ-
(৩৯৯) অভ্রাতৃব্যো অন্য ত্বমনাপিরিন্দ্র জনুষা সনাদসি।
যুধেদাপিত্বমিচ্ছসে।।১।।
(৪০০) যো ন ইদমিদং পুরা প্র বস্য আনিনায় তমু বঃ স্তষে।
সখায় ইন্দ্রমৃতয়ে।।২।।
(৪০১) আ গস্তা মা রিষণ্যত প্রস্থাবানো মাপ স্থাত সমন্যবঃ।
দৃঢ়া চিদ্‌যময়িষ্ণবঃ।।৩।।
(৪০২) আ যাহ্যয়মিন্দবেহ্রশ্বপতে গোপত ঊর্বরাপতে
সোমং সোমপতে পিব।।৪।।
(৪০৩) ত্বয়া হ স্বিদ্‌ যুজা বয়ং প্রতি শ্বসন্তং বৃষভ ব্রুবীমহি।
সংস্থে জনস্য গোমতঃ।।৫।।
(৪০৪) গাবশ্চিদ্‌ ঘা সমন্যবঃ সজাত্যেন মরুতঃ সবন্ধবঃ।
রিহতে ককুভো মিথঃ।।৬।।
(৪০৫) ত্বং ন ইন্দ্রা ভর ওজো বৃম্‌ণং শতক্রতো বিচর্ষণে!
আ বীরং পৃতনাসহম্‌।।৭।।
(৪০৬) অধা হীন্দ্র গির্বণ উপ ত্বা কাম ঈমহে সসৃগ্মহে।
উদেব গ্মন্ত উদ্ধভিঃ।।৮।।
(৪০৭) সীদন্তস্তে বয়ো যথা গোশ্রীতে মধৌ মদিরে বিবক্ষণে।
অভি ত্বামিন্দ্র নোনুমঃ।।৯।।
(৪০৮) বয়মু ত্বামপূর্ব্য স্থূরং ন কচ্চিদ্‌ ভরন্তোহবস্যবঃ।
বজ্রিং চিত্রং হবামহে।।১০।।

অনুবাদঃ (৩৯৯) হে ইন্দ্র, বাস্তবিক তুমি শত্রুহীন, আর জন্মবধি তুমি বন্ধুহীন। তুমি কেবল যুদ্ধের দ্বারাই বন্ধুত্ব লাভ করতে ইচ্ছা কর। (৪০০) যিনি এই সমস্ত ধন পুরাকাল থেকে আমাদের জন্য এনে দিয়েছেন, হে সখাগণ, সেই ইন্দ্রকে তোমাদের মঙ্গলকামনায় স্তব করি।। (৪০১) হে মরুদ্‌গণ, তোমরা এস, আমাদের হিংসা কোরো না। তোমরা ক্ষিপ্রগামী, পরিমিত দীপ্তিশালী এবং সকলেই একই সময়ে উৎপন্ন; তোমরা দৃঢ় হলেও নমনীয়।। (৪০২) হে অশ্বপতি, হে গোপতি, হে ঊর্বরাপতি, হে সোমপতি, তোমার জন্য প্রস্তুত সোমকে পান করার জন্য এস।। (৪০৩) হে কামবর্ষিতা, তোমার দ্বারা তোমার সাথে মুক্ত হলে পরে আমরা বিদ্বান ব্যক্তির সমাবেশে প্রতিজনের কাছে তোমার কথাই বলি।। (৪০৪) হে মরুৎগণ, রশ্মিগণও তোমার স্বজাতি বলে একই সময়ে উৎপন্ন এবং তোমরা সমানবন্ধু হয়ে আকাশে মিলিত হয়ে পরস্পর পরস্পরকে লেহন কর।। (৪০৫) হে শতকর্মা বিশ্বদ্রষ্টা ইন্দ্র, আমাদের জন্য ধন ও বল আন। আর আন শত্রুজিৎ বীরদের।। (৪০৬) হে ইন্দ্র, হে স্তুতিপ্রিয়, জল যেমন জলে গিয়ে মেশে তেমনি তোমার কাছে যে কাম্যবস্তু যাচ্‌ঞা করি তাই আবার তোমাকে উৎসর্গ করি।। (৪০৭) তোমার কিরণরাশি যখন অতি বিস্তৃত দুগ্ধমিশ্রিত মদির সোম মধুপানে মত্ত থাকে (=জলরাশি সৃষ্টিতে ব্যাপৃত থাকে) আমরাও সেরূপ হে ইন্দ্র, বারবার তোমা অভিমুখে নত হয়ে আসি।। (৪০৮) হে অপূর্ব্য (=যার পূর্বে কেউ জন্মে নি) ইন্দ্র, আমরা তোমাকে বিপুল মনে করে আমাদের রক্ষার জন্য তোমার কাছে নত হয়ে আসি নি। আমরা তোমাকে বজ্রধারী ও বিচিত্রলীলাকারীরূপে পূজা করি।

সপ্তম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতা ১-৮ ইন্দ্র, ৯ বিশ্বদেবগণ, ১০ অশ্বিদ্বয়।। ছন্দ পঙ্‌ক্তি।। ঋষি ১-৮ গোতম (বা সম্মদ) রাহূগণ, ৯ ত্রিত আপ্ত্য অথবা কুৎস আঙ্গিরস, ১০ আত্রেয়।।

মন্ত্রঃ-
(৪০৯) স্বাদোরিত্থা বিষূবতো মধোঃ পিবন্তি গৌর্যঃ।
যা ইন্দ্রেণ সয়াবরীর্বৃষ্ণা মদন্তি শোভথা বস্বীরনু স্বরাজ্যম্‌।।১।।
(৪১০)  ইত্থা হি সোম ইন্মদো ব্রহ্ম চকার বর্ধনম্‌।
শবিষ্ঠ বজ্রিন্নোজসা পথিব্যা নিঃ শশা অহিমর্চন্ননু স্বরাজ্যম্‌।।২।।
(৪১১)  ইন্দ্রো মদায় বাবৃধে শবসে বৃত্রহা নৃভিঃ।
তমিন্মমহৎস্বাজিষূতিমর্ভে হবামহে স বাজেষু প্র নোহবিষৎ।।৩।।
(৪১২)  ইন্দ্র তুভ্যমিদদ্রিবোহনুত্তং বজ্রিন্‌ বীর্যম্‌ যদ্ধ ত্যং মায়িনং
মৃগং তব ত্যন্মায়য়া বধীরর্চন্ননু স্বরাজ্যম্‌।।৪।।
(৪১৩)  প্রেহ্যভীহি ধৃষ্ণুহি ন তে বজ্র নি যংসতে।
ইন্দ্র নৃমণং হি তে শবো হনো বৃত্রং জয়া অপোর্চন্ননু স্বরাজ্যম্‌।।৫।।
(৪১৪) যদুদীরত আজয়ো ধৃষ্ণবে ধীয়তে ধীয়তে ধনম্‌।
যুঙ্‌ ক্ষ্মা মদচ্যুতা হরী কং হনঃ কং বসৌ দধোহস্মাঁ ইন্দ্র বসৌ দধঃ।।৬।।
(৪১৫) অক্ষন্নমীমদন্ত হ্যব প্রিয়া অধুষত।
অস্তোষত স্বভানবো বিপ্রা নবিষ্ঠয়া মতী যোজা ন্বিন্দ্র তে হরী।।৭।।
(৪১৬) উপো ষু শৃণুহী গিরো মঘবন্‌ মা তথা ইব।
কদা নঃ সূনৃতাবতঃ কর ইদর্থয়াস ইদ্‌ যোজা ন্বিন্দ্র তে হরী।।৮।।
(৪১৭) চন্দ্রমা অপ্‌স্বাংন্তরা সুপর্ণো ধাবতে দিবি।
ন বো হিরণ্যনেময়ঃ পদং নিন্দন্তি বিদ্যুতো বিত্তং মে অস্য রোদসী।।৯।।
(৪১৮) প্রতি প্রিয়তমং রথং বৃষণং বসুবাহনম্‌।
স্তোতা বামশ্বিনাবৃষিঃ স্তোমেভির্ভূষতি প্রতি মাধ্বী মম শ্রুতং হবম্‌।।১০।।

অনুবাদঃ (৪০৯) হলুদবরণ কিরণরাশি এই বিষুববিন্দুতে মধুর জলের স্বাদ আস্বাদন করেন; সেই বর্ষণশীলা কিরণরাশি ইন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে বর্ষণকর্মে মত্ত হন আর ইন্দ্রের অনুগমন করে তাঁর রাজ্যকে শোভিত করেন। (৪১০) তোমার বৃদ্ধি কামনা করে স্তুতিকার এই সোম এই মদকর সোম প্রস্তুত করেছেন। হে বলিষ্ঠ, হে বজ্রী, তুমি বলের দ্বারা পৃথিবী থেকে মেঘকে নিঃশেষে বিদারিত করলে, তারপর স্বরাজ্যে দীপ্তি লাভ করে বিরাজিত হলে।। (৪১১) মেঘহননকারী ইন্দ্র নরগণের দ্বারা আনন্দের জন্য বৃদ্ধির জন্য ও বলের জন্য স্তুত হন। তাঁকেই আমরা ক্ষুদ্র মহৎ সকল সংগ্রামেই ডাকি, তিনিই সংগ্রামে আমাদের সুন্দরভাবে রক্ষা করেন। (৪১২) হে ইন্দ্র, হে মেঘবিদারণকারী, হে বজ্রী, তোমার জন্যই অভেদ্য বীর্য, যার দ্বারা সেই মৃগরূপী মেঘমায়াকে তুমি তোমার প্রজ্ঞারূপে মায়ার দ্বারা বধ করলে, আর তারপর নিজ রাজ্যে দীপ্তি লাভ করে বিরাজিত হলে।। (৪১৩) এস, এখানে এস, প্রগলভের মত, কারণ তোমার বজ্র বৃষ্টি প্রদান করে। হে ইন্দ্র, তোমার সেনাবলই (=রশ্মিগণই) এবং তোমার বল বৃত্রমেঘকে হনন করে বারিরাশিকে জয় করেছে, তারপর তুমি তোমার স্বরাজ্যকে দীপ্তি দিতে থাকলে।। (৪১৪) সাহসের সঙ্গে এগিয়ে গেলেই সংগ্রামে (=জীবনসংগ্রামে) ধনলাভ হয়। হে ইন্দ্র, সোমপানে মত্ত তোমার অশ্ব দুটির (=দেশ ও কাল) সহযোগিতায় কাউকে বধ কর, কাউকে ধন দান কর। হে ইন্দ্র, তুমি আমাদের ধনসম্পদে রাখ।। (৪১৫) ব্যাপ্তিকে লক্ষ্য করেই তোমার প্রিয় দুই অশ্বরশ্মিকে দীপ্তিকারক হন। হে ইন্দ্র, স্বীয় দীপ্তিতে উজ্জ্বল বিদ্বানগণ নবতম স্তোত্রে তোমার স্তুতি করেছেন; অতএব এখনই তুমি তোমার বুদ্ধিদীপ্ত দুই অশ্বকে যুক্ত কর (=বর্ষণ কর্মে নিযুক্ত কর)।। (৪১৬) হে মঘবা ইন্দ্র, নিকটে এস, আমার স্তুতি শোন, যেমন শুনেছিলে আগে সেইভাবে শোন। কবে আবার তুমি আমাদের অন্ন ও বাক্যযুক্ত করবে? তাই যাচ্‌ঞা করছি এখনই তোমার দুই অশ্বকে যুক্ত কর।। (৪১৭) স্নিগ্ধ উজ্জ্বল রশ্মিযুক্ত চন্দ্রমা মেঘের মধ্য দিয়ে আকাশে ধেয়ে চলেছেন। হে সুবর্ণ-বজ্রগণ, বিদ্যুৎ হতে উৎপন্ন তোমাদের স্থান মানুষেরা জানতে পারে না। হে দ্যু ও পৃথিবী, আমার স্তোত্র শোন।। (৪১৮) হে অশ্বিদ্বয়, বৃষ্টিকামী স্তোতা তোমাদের দুজনের ধনবাহন বর্ষণকারী প্রিয়তম রথকে (=সূর্যকে) স্তোমের দ্বারা (=সামগানে) ভূষিত করছে। হে মধুবিদ্যাবিশারদ অশ্বিদ্বয়, তোমরা আমার আহবান শোন।

অষ্টম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ৮।। দেবতা ১।২।৭ অগ্নি, ৩ ঊষা, ৪ সোম, ৫।৬ ইন্দ্র, ৮ বিশ্বদেবগণ।। ছন্দ ১-৭ পঙ্‌ক্তি, ৮ উপরিষ্টাদ্‌ বৃহতী।। ঋষি ১।৭ বসুশ্রুত আত্রেয়, ২।৪ বিমদ ঐন্দ্র, বা প্রাজাপত্য বা বাসুক বসুকৃৎ, ৩ সত্যশ্রবা আত্রেয়, ৫।৬ গোতম রাহ্‌গণ ৮ অঙ্ঘোমুক বামদেব্য বা কুল্মল শৈলুষি।।

মন্ত্রঃ-
(৪১৯) আ তে অগ্ন ইধীমহি দ্যুমন্তং দেবাজরম্‌। যদ্ধ স্যা তে পনীয়সী।
সমিদ্‌দীদয়তি দ্যবীষং স্তোতৃভ্য আ ভর।।১।।
(৪২০) আগ্নিং ন স্ববৃক্তিভির্হোতারং ত্বা বৃণীমহে।
শীরং পাবকশোচিষং বি বো মদে যজ্ঞেষু স্তীর্ণবর্হিষং বিবক্ষসে।।২।।
(৪২১) মহে নো অদ্য বোধযোষো রেয়ে দিবিৎমতী।
যথা চিন্নো অবোধয়ঃ সত্যশ্রবসি বায্যে সুজাতে অশ্বসূনুতে।।৩।।
(৪২২) ভদ্রং নো অপি বাতয় মনো দক্ষমুত ক্রতুম্‌।
অথা তে সখ্যে সন্ধসো বি বো মদে রণা গাবো ন যবসে বিবক্ষসে।।৪।।
(৪২৩) ক্রত্বা মহাঁ অনুষ্বধং ভীম আ বাবৃতে শবঃ।
শ্রিয় ঋষ্ব উপাকযোর্নি শিপ্রী হরিবান্‌ দধে হস্তয়োর্বজ্রমায়সম্‌।।৫।।
(৪২৪) স ঘা তং বৃষণং রথমধি তিষ্ঠাতি গোবিদম্‌।
যো পাত্রং হারিযোজনং পূর্ণমিন্দ্রা চিকেততি যোজা ন্বিন্দ্র তে হরী।।৬।।
(৪২৫) অগ্নিং তং মন্যে যো বসুরন্তং যং যন্তি ধেনবঃ।
অস্তমর্বন্ত আশাবোহস্তং নিত্যাসো বাজিন ইষং স্তোতৃভ্য আ ভর।।৭।।
(৪২৬) ন অমংহো ন দুরিতং দেবাসো অষ্ট মর্ত্যম্‌।
সজোষসো যমর্যমা মিত্রো নয়তি বরুণো অতি দ্বিষঃ।।৮।।

অনুবাদঃ (৪১৯) হে দেব অগ্নি, তোমার দীপ্ত অজর রূপকে সন্দীপ্ত করি। তোমার সেই অর্চনীয় সম্যক্‌দীপ্তরূপ দ্যুলোকে অনুক্ষণ জ্বলে; তুমি স্তুতিকারীর জন্য অন্ন আন। (৪২) হে অগ্নি, অগ্নির ন্যায় উজ্জ্বল স্বরচিত স্তোত্রের দ্বারা দেবগণের আহবানকর্তা তোমাকে বরণ করি। বিস্তীর্ণ নক্ষত্রখচিত আকাশে জগতের মস্তক শুদ্ধপাবকরূপে তোমার যে রূপ প্রকাশিত তা আহ্লাদকর সকল যজ্ঞকর্মে প্রসারিত কর। (৪২১) হে দ্যুলোকবাসিনী ঊষা, হে সুজাতা, হে ঋজুগমনের দ্বারা সৎকর্মের ব্যাপ্তিকারিণী দেবী, যেমন তুমি নিত্যই সৎকর্মের দ্বারা অন্নসংগ্রহের জন্য ও বন্ধুত্বে বাস করার জন্য আমাদের জাগরিত কর, সেরূপ আজও প্রচুর ধনলাভের জন্য আমাদের জাগ্রত কর। (৪২২) হে সোমদেবতা, আমাদের মন বা ইন্দ্রিয়কে ভদ্র, দক্ষ ও কর্মের উপযুক্ত করে পরিচালিত কর। তুমি যখন তোমার রূপ প্রকাশিত কর তখন আমরা অন্নের জন্য তোমার সখ্যতা লাভ করে হৃষ্ট হই যেমন গবাদিপশু তৃণাদি ভক্ষণে আনন্দিত হয়। (৪২৩) ইন্দ্র যজ্ঞকর্মের দ্বারা নিজের ইচ্ছামত বিপুল আকার ধারণ করে ভয়ঙ্কর বলশক্তিকে বরণ করেন। উদকবান রশ্মিযুক্ত ইন্দ্র দুই হাতে লৌহবজ্রকে ধারণ করে সুন্দর মনোজ্ঞ জল আমাদের কাছে আনেন। (৪২৪) যে ইন্দ্র রশ্মিযুক্ত পাত্রকে পূর্ণ বলে জানেন (- রশ্মির দ্বারা আকৃষ্ট জলবাস্পে আকাশ পূর্ণ) তিনিই তাঁর গমনপথে জলবর্ষণকারী জল আকর্ষণকারী রশ্মিকে স্থাপনা করেন। হে ইন্দ্র, এখনই তোমার অশ্বরশ্মি দুইটিকে যুক্ত কর (=বর্ষণকার্যে নিযুক্ত কর)। (৪২৫) আমি সেই অগ্নিকে জানি যিনি রশ্মিধন (=যাতে সকলরশ্মি বাস করে), যাঁকে আশ্রয় (বা গৃহ) মনে করে বাক্‌সমূহ যাঁর প্রতি গমন করে। তিনি আকাশে বিচরণকারী ব্যাপ্ত রশ্মিদের আশ্রয়; তিনিই আশ্রয় চিরন্তন রশ্মিগণের। হে অগ্নি, স্তোতাদের জন্য অন্নধন আন (যা স্তোতাদের ইচ্ছা পূরণ কর)। (৪২৬) পরস্পর প্রীতিসম্পন্ন অন্ধকারনাশক (-অর্যমা), মৃত্যু থেকে ত্রাণকারী (-মিত্র) ও বর্ষনকারী (বরুণ)[সূর্য] যে মানুষকে হিংসা অতিক্রম করে নিয়ে যান সেই মানুষকে কোন পাপ কোন দুস্কর্ম স্পর্শ করতে পারে না; দেবগণ তাঁকে ব্যাপ্ত করেন।

মন্ত্রঃ-
(৪২৭) পরি প্র ধন্বেন্দ্রায় সোম স্বাদুর্মিত্রায় পুষ্ণে ভগায়।।১।।
(৪২৮) পর্যু যু প্র ধন্ব বাজসাতয়ে পরি বৃত্রাণি সক্ষণিঃ।
দ্বিষস্তরধ্যা ঋণয়া ন ঈরসে।।২।।
(৪২৯) পরস্ব সাম মহান্‌ৎসমুদ্রঃ পিতা দেবানাং বিশ্বাভি ধাম।।৩।।
(৪৩০) পবস্ব সোম মহে দক্ষায়াশ্বো ন নিক্তো বাজী ধনায়।।৪।।
(৪৩১) ইন্দুঃ পবিষ্ট চারুর্মদায়াপামুপস্থে কবির্ভগায়।।৫।।
(৪৩২) অনু হি ত্বা সুতং সোম মদামসি মহে সমর্যরাজ্যে।
বাজাঁ অভি পবমান প্র গাহসে।।৬।।
(৪৩৩) ক ঈং ব্যক্তা নরঃ সনীডা রুদ্রস্য মর্যা অথা স্বশ্বাঃ।।৭।।
(৪৩৪) অগ্নে তমদ্যাশ্বং ন স্তোমৈঃ ক্রতুঃ ন ভদ্র হৃদিস্পৃশম্‌।
ঋধ্যামা ত ওহৈঃ।।৮।।
(৪৩৫) আবির্মর্য্যা আ বাজং বাজিনো অগ্মন্‌ দেবস্য সবিতুঃ সবম্‌।
স্বর্গাং অর্বন্তো জয়ত।।৯।।
(৪৩৬) পবস্ব সোম দ্যুম্নী দুধারো মহাঁ অবীনামনুপূর্ব্যঃ।।১০।।

অনুবাদঃ (৪২৭) হে সোম, তুমি মধুরসযুক্ত হয়ে ইন্দ্র মিত্র পূষা ও ভগ দেবতার উদ্দেশে গমন কর। [এই সকল দেবতা একই সূর্যের বিভিন্নরূপ]। (৪২৮) হে সোম, মেঘের দ্বারা পরিবৃত বারিরাশিকে অন্নধনের জন্য বিজয়ীর মত প্রাপ্ত হও। (অন্নের দ্বারা) আমাদের দ্বেষ ও ঋণ দূর করে আমাদের প্রাপ্ত হও। (৪২৯) হে সোম, তুমি মহান সমুদ্রের মত (বা অন্তরিক্ষের মত) ব্যাপ্ত, সকল দেবগণের পিতা, তুমি সকলস্থানে ক্ষরিত হও। (৪৩০) হে সোম, তুমি রশ্মির মত শুদ্ধ ও গতিশীল; মহান সঙ্কল্পসিদ্ধির জন্য ও ধনের জন্য ক্ষরিত হও। (৪৩১) ইন্দু (=সোম=জল) সর্বাপেক্ষা শুদ্ধিকারক, সুশ্রী, কবি; তিনি বারিরাশির উপস্থানে (=আকাশে অবস্থিত বারিরাশির মধ্যে) ভগদেবতার (=সূর্যের) আনন্দের জন্য বাস করেন। (৪৩২) হে সোম, ঈশ্বরের মহান রাজ্যে (বা লোকাকীর্ণ যজ্ঞস্থানে) সুতসোম তোমাকে অনুসরণ করে (=সোমরস প্রস্তুতকালে) আমরাও হর্ষান্বিত হই। হে পবমান সোম (=বিশুদ্ধরূপে ক্ষরিত সোম), অন্নবলের জন্য উত্তম গতিশীল হও। (৪৩৩) এই ব্যক্ত (=ইন্দ্রিয়বিষয়ীভূত) নেতা সমানস্থানবাসী, সুন্দরগতিবিশিষ্ট রুদ্রের পুত্রগণ (=মরুদ্‌গণ) এঁরা কে? (৪৩৪) হে অগ্নি, যে তুমি সামগানের দ্বারা স্তুত হলে অশ্বের ন্যায় বেগবান এবং যজ্ঞের মত কল্যাণকর ও হৃদয়গ্রাহী হও, সেই তোমাকে আজ উহগানে (=সামগানে) বর্ধিত করবো। (৪৩৫) গতিশীল স্বপ্রকাশিত দেবরশ্মিগণ অন্নসৃষ্টির কারণে সবিতাদেবের (=সূর্যদেবের) ক্ষরিত জল অভিমুখে গমন করলেন এবং আকাশে স্থিত জলকে রশ্মিগণ জয় করলেন। (৪৩৬) হে সোম, তোমার মহান অনুগ্রহের উজ্জ্বল ও সুন্দর ধারা পূর্বের মত পর্যায়ক্রমে ক্ষরিত কর।

দশম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতা ১-৫, ৮-১০ ইন্দ্র, ৬ বিশ্বদেবগণ, ৭ ঊষা।। ছন্দ দ্বিপদা বিরাট্‌ (কোন কোন পুস্তকে ১।৬।৯ পঙ্‌ ক্তি বিরাট্‌ বা গায়ত্রী), ২ দ্বিপদা অনুষ্টুপ্‌, ৩।৪ ত্রিষ্টুপ্‌, ৫ বৃহতী ১০ জগতী বা গায়ত্রী।। ঋষি ৩ ত্রসদস্যু, পৌরকুৎস্য, ৭ সম্পাত (সংবর্ত আঙ্গিরস), অন্য মন্তের ঋষি কোন পুস্তকে বসিষ্ঠ, কোন পুস্তকে বামদেব গৌতম।।

মন্ত্রঃ-
(৪৩৭) বিশ্বতোদাবন্‌ বিশ্বতো ন আ ভর যং ত্বা শবিষ্ঠমীমহে।।১।।
(৪৩৮) এষ ব্রহ্মা য ঋত্বিয় ইন্দ্রো নাম শ্রুতো গুণে।।২।।
(৪৩৯) ব্রহ্মাণ ইন্দ্রং মহয়ন্তো অর্কৌরবর্ধয়ন্নহয়ে হন্তবা উ।।৩।।
(৪৪০) অনবস্তে রথমস্বায় তক্ষুস্তষ্টা বজ্রং পুরুহূতং দ্যুমন্তম্‌।।৪।।
(৪৪১) শং পদং মঘং রয়ীষিণে ন কামমব্রতো হিনোতি ন স্পৃশদ্রয়িম্‌।।৫।।
(৪৪২) সদা গাবঃ শুতয়ো বিশ্বধায়সঃ সদা দেনা অরেপসঃ।।৬।।
(৪৪৩) আ যাহি বনসা সহ গাব; সচন্ত বর্তনিং যদূধভিঃ।।৭।।
(৪৪৪) উপ প্রক্ষে মধুমতি ক্ষিয়ন্তঃ পুষ্যেম রয়িং ধীমহে ইন্দ্র।।৮।।
(৪৪৫) অর্চন্ত্যর্কং মরুতঃ স্বর্কাঃ আ স্তোভতি শ্রুতো যুবা স ইন্দ্রঃ।।৯।।
(৪৪৬) প্র ব ইন্দ্রায় বৃত্রহন্তমায় বিপ্রায় গাথং গায়ত যং জুজোষতে।।১০।।

অনুবাদঃ (৪৩৭) হে সদাদানশীল ইন্দ্র, সকল ধন বল আমাদের জন্য আহরণ কর যে ধন বলিষ্ঠ তোমার কাছে যাচ্‌ঞা করি। (৪৩৮) ইনিই ব্রহ্মা (=শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ-কর্তা) যিনি প্রতি ঋতুতে যথাকালে কর্ম করেন, যিনি ইন্দ্র নামে বিখ্যাত; আমি তাঁকেই স্তব করি। (৪৩৯) মহান যাজ্ঞিকগণ মেঘনহনের জন্য ইন্দ্রকে ঋকের দ্বারা স্তুতি করে ইন্দ্রের বল বর্ধিত করেছেন। (৪৪০) হে ইন্দ্র, অশ্বরশ্মির দ্বারা ব্যাপ্তির জন্য ত্বষ্টা (=সূর্য) তোমার রথ (=গমনপথ) ও বজ্র প্রস্তুত করেছেন; মানুষেরা বহুস্তুত দীপ্তিমান ইন্দ্রকেই স্তব করে। (৪৪১) ধনকামীর জন্যই ধন ও সুখকর স্থান; কর্মহীন ব্যক্তির কামনা পূর্ণ হয় না, সে ধনকে স্পর্শও করতে পারে না। (৪৪২) রশ্মিগণ সর্বদাই শুচি ও সকলকিছুর পোষক, রশ্মিগণ সর্বদাই পাপশূন্য। (৪৪৩) এস হে ঊষা শুভ্রকান্তি রশ্মিগণের সঙ্গে যে রশ্মিগণ রাত্রির সহায়তায় ভ্রমণপথকে ভজনা করেছিলেন (=রাত্রির পথে তোমার আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন)। (৪৪৪) হে ইন্দ্র, তোমার মধুময় প্রবাহের নিকট নিবাস করে আমরা যেন পুষ্টি লাভ করি ও ধন ধারণ করতে পারি। (৪৪৫) সুদীপ্ত মরুদ্‌গণ সূর্যকে অর্চনা করেন এবং সূর্যকেই আর যিনি অর্চনা করেন তিনি প্রখ্যাত যুবা (=সর্বকর্ম-মিশ্রণকারী অনেককর্মা) ইন্দ্র। (৪৪৬) লোকে যাঁকে বারবার সেনা করে সেই মেঘবিদারক দীপ্তকান্তি ইন্দ্রের উদ্দেশে তোমরা সাম গান কর।

একাদশ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতা ১।২ অগ্নি, ৩।৪।৮।১০ ইন্দ্র, ৫ ঊষা, ৬।৭।৯ বিশ্বদেবগণ।। ছন্দ ১।২।৫।৭ দ্বিপদা পঙ্‌ ক্তি ৩।৪ পঞ্চদশাক্ষরা আসুরী গায়ত্রী, ৬।৮।৯ দ্বিপদা, ত্রিষ্টুপ্‌, ১০ একপদা অষ্টাক্ষরা গায়ত্রী।। ঋষি ১ পৃষধ্র কান্ব বা সম্পাত, ২।৩।৪ বন্ধু সুবন্ধু বিপ্রবন্ধু গোপায়ন, ৫ সংবর্ত আঙ্গিরস, ৬ ভৌবন আপ্ত্য, ৭ কবষ ঐলুষ, ৮ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, ৯ আত্রেয়, ১০ বাসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি।।

মন্ত্রঃ-
(৪৪৭) অচেত্যগ্নিশ্চিকিতির্হব্যবাড্‌ ন সমুদ্রথঃ।।১।।
(৪৪৮) অগ্নে ত্বং নো অন্তম উত ত্রাতা শিবো ভূবো বরুথ্যঃ।।২।।
(৪৪৯) ভগো ন চিত্রো অগ্নির্মহোনাং দধাতি রত্নম্‌।।৩।।
(৪৫০) বিশ্বস্য প্র স্তোভ পুরো বা সন্‌ যদি বেহ নূনম্‌।।৪।।
(৪৫১) ঊষা অপ স্বসুষ্টমঃ সং বর্তয়তি বর্তনিং সুজাততা।।৫।।
(৪৫২) ইমা নু কং ভুবনা সীষধেমেন্দ্রশ্চ বিশ্বে চ দেবাঃ।।৬।।
(৪৫৩) বি সুতয়ো যথা পথা ইন্দ্র ত্বদ্যন্তু রাতয়ঃ।।৭।।
(৪৫৪) অয়া বাজং দেবহিতং সনেম মদেম শতহিমাঃ সুবীরাঃ।।৮।।
(৪৫৫) ঊর্জা মিত্রো বরুণঃ পিম্বতেডাঃ পীবরীমিষং কৃণুহী ন ইন্দ্র।।৯।।
(৪৫৬) ইন্দ্রো বিস্বস্য রাজতি।।১০।।

অনুবাদঃ (৪৪৭) গতিযুক্ত দীপ্ত হব্যবাহী অগ্নি আমাদের জন্য স্বয়ং রথযুক্ত। (৪৪৮) হে অগ্নি, তুমি আমাদের সর্বাপেক্ষা নিকটে বাসকারী এবং ত্রাতা; তুমি সুখদায়ক (বা মঙ্গলময়) ও ভূলোকে নিবাসকারী। (৪৪৯) সূর্যের ন্যায় বিচিত্রদীপ্ত ও পূজনীয় অগ্নি রমণীয় ধন ধারণ করেন। (৪৫০) হে ইন্দ্র, যদি তুমি পূর্বে সকলের পূজ্য থেকে থাক তবে এখনও তাই আছ। (৪৫১) সুন্দররূপে জাত ঊষাদেবী ভগিনী রাত্রির অন্ধকার দূর করে (আকাশরূপ) গমনমার্গকে সম্যক্‌রূপে বেষ্টন করলেন। (৪৫২) ইন্দ্র এবং বিশ্বের সকল দেবতা (=সর্বরশ্মিগণ) এই নিখিল ভূবনকে যেন আমাদের জন্য সুখকর করেন। (৪৫৩) হে ইন্দ্র, সকল পথ যেমন রাজপথে গিয়ে মেশে তেমনি সকল ধন তোমাতেই মেশে। (৪৫৪) হে ইন্দ্র, দেবদত্ত এই অন্নবল লাভ করে আমরা যেন সুবীর্যশালী হয়ে শত হেমন্ত আনন্দে ভোগ করতে পারি। (৪৫৫) মিত্র ও বরুণ জলবৃদ্ধিকারক; হে ইন্দ্র, তুমি আমাদের জন্য প্রচুর অন্ন উৎপন্ন কর। ইন্দ্র বিশ্বের রাজা।

দ্বাদশ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। ১।৩।৪।১০ ইন্দ্র, ২ সূর্য ৫ বিশ্বদেবগণ, ৬ মরুদ্‌গণ ৭ পবমান সোম, ৮ সবিতা, ৯ অগ্নি।। ছন্দ ১।৩।৫।৭।৯ অত্যষ্টি (কোন কোন পুস্তকে ১ অষ্টি) ২।৪।৬ অতি জগতী, ৮।১০ অতিশক্করী (কোন কোন পুস্তকে ৮ অত্যষ্টি)।। ঋষি ১।১০ গৃৎসমদ শৌনক, ২ গোউরাঙ্গিরস, ৩।৫।৯ পরুচ্ছেপ দৈবদাসি, ৪ রেভ কাশ্যপ, ৬ এবয়ামরুৎ আত্রেয়, ৭ অনানত পারুচ্ছেপি, ৯ নকুল।।

মন্ত্রঃ-
(৪৫৭)  ত্রিকদ্রুকেষু, মহিষো যবাশিরং তুবিশুষ্মস্তৃম্পং সোমমপিবদ্বিষ্ণুনা সুতং যথাবশম্‌।
        স ঈং মমাদ মহি কর্ম কর্তবে মহামুরুং সৈনং সশ্চদ্‌দেবো দেবং সত্যং ইন্দুঃ সত্যমিন্দ্রম্‌।।১।।
(৪৫৮)  অয়ং সহস্রমানবো দৃশঃ কবীনাং মতির্জ্যোতির্বিধর্ম।
        ব্রধ্নঃ সমীচীরূষসঃ সমৈরয়দরেপসঃ সচেতসঃ স্বসরে মন্যুমন্ত গোঃ।।২।।
(৪৫৯)  এন্দ্র যাহ্যুপ নঃ পরাবতো নায়মচ্ছা বিদথানবি সৎপতিরস্তা রাজেব সৎপতিঃ।
        হবামহে ত্বা প্রযস্বন্তঃ সুতেষ্বা পুত্রাসো ন পিতরং বাজসাতয়ে মংহিষ্ঠং বাজসাতয়ে।।৩।।
(৪৬০)  তমিন্দ্রং জোহবীমি মঘবানমুগ্রং সত্রা দধানমপ্রতিষ্কুতং শ্রবাংসে ভুরি।
        মংহিষ্ঠো গীর্ভিরা চ যজ্ঞিয়ো ববর্ত রায়ে নো বিশ্বা সুপথা কৃণোতু বজ্রী।।৪।।
(৪৬১)  অস্তু শ্রৌষট্‌ পুরো অগ্নিং ধরা দধা আ নু ত্যচ্ছর্ধো দিব্যং বৃণীমহ ইন্দ্রবায়ূ বৃণীমহে।
        যদ্ধ ক্রাণা বিবস্বতে নাভা সন্দায় নব্যসে।
অধ প্র নূনমুপযন্তি ধীতয়ো দেবাঁ অচ্ছ ন ধীতয়ঃ।।৫।।
(৪৬২)  প্র বো মহে মতয়ো যন্তু বিষ্ণবে মরুত্বতে গিরিজা এবয়ামরুৎ।
        প্র শর্ধায় প্র যজ্যবে সুখাদয়ে তবসে ভন্দদিষ্টয়ে ধুনিব্রতায় শবসে।।৬।।
(৪৬৩)  অয়া রুচা হরিণ্যা পুনানো বিশ্বা দ্বাষাংসি ভরতি সয়ুগ্বভিঃ সুরো ন সযুগ্বভিঃ।
        ধারা পৃষ্ঠস্য রোচতে পুনানো অরুষো হরিঃ।
বিশ্বা যদ্‌রূপা পরিয়াস্যৃভির্ঝকৃভিঃ।।৭।।
(৪৬৪)  অভি তং দেবং সবিতারমোন্যোঃ।
কবিক্রতুমর্চামি সত্যসবং রত্নধামভি প্রিয়ং মতিম্‌।
        ঊর্ধ্বা যস্যামতির্ভা অদিদ্যুতৎ সবীমনি হিরণ্যপাণিরমিমীত সুক্রতুঃ কৃপা স্বঃ।।৮।।
(৪৬৫)  অগ্নি হোতারং মন্যে দাস্বন্তং বসোঃ সূনুং সহসো জাতবাদসং বিপ্রং ন জাতবেদসম্‌।
        য ঊর্ধ্বয়া স্বধ্বরো দেবো দেবাচ্য কৃপা।
ঘৃতস্য বিভ্রাষ্টিমনু শুক্রোশোচিষ আজুহ্বনস্য সর্পিষঃ।।৯।।
(৪৬৬)  তব ত্যং নর্ষং নৃতোহপ ইন্দ্র প্রথমং পূর্ব্যং দিবি প্রবাচ্যং কৃতম্‌।
        যো দেবস্য শবস্য প্রারিণা অসু রিণন্নপঃ।
ভুবো বিশ্বমভ্যদেবমোজসা বিদেদূর্জং শতক্রতুর্বিদেদিষম্‌।।১০।।

অনুবাদঃ (৪৫৭) অতিবল মহান ইন্দ্র ইচ্ছানুযায়ী তিন যজ্ঞেই (বা তিন লোকেই) বিষ্ণুর সঙ্গে (=সূর্যের সঙ্গে) অভিষুত সোমপান করে তৃপ্ত হয়েছিলেন। সেই সোমই এই অতিব্যাপ্ত ইন্দ্রকে মহৎ কর্তব্যকর্ম সাধনে হর্ষান্বিত করেছিলেন। দীপ্ত সত্য সোম সত্য ইন্দ্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। (৪৫৮) সহস্রমানবের দর্শনীয়, কবিগণের বুদ্ধি ও জ্যোতিকে বিশেষরূপে ধারণকারী এই সূর্য পাপশূন্যা দীপ্তিমতী ঊষার সঙ্গে দিনের বেলায় সূর্যের সঙ্গে যুক্ত রশ্মিকে প্রেরণ করলেন (=রাত্রি অবসানে দিন আরম্ভে ঊষার সঙ্গে রশ্মিদের আগমন)। (৪৫৯) রাজা যেমন সজ্জনের পালক সেইরূপ ইন্দ্র শত্রুনাশের দ্বারা (=মেঘহননের দ্বারা) সকলজীবের পালনকর্তা; হে ইন্দ্র, তুমি দূর হতে নিজ নিজ কর্মে নিযুক্ত আমাদের কাছে এস; অন্নবান আমরা সকল যজ্ঞকর্মে মহান দাতা তোমাকে ধনদানের জন্য প্রার্থনা করি যেমন পুত্রগণ ধনের জন্য পিতার কাছে যাচ্‌ঞা করে। (৪৬০) সেই ধনবান উগ্রবল যজ্ঞকর্মের ধারক অপ্রতিহতগতি ইন্দ্রকে প্রচুর অন্নধনের জন্য আহবান করি; বজ্রধারী যজ্ঞযোগ্য পূজ্যতম ইন্দ্র আমাদের স্তুতির দ্বারা আবর্তিত হয় ধনদানে আমাদের সকল পথ কল্যাণযুক্ত করুন। (৪৬১) জ্ঞানবৃদ্ধির দ্বারা অগ্নিকে পুরোভাগে ধারণ করেছি; তিনি আমাদের কথা শুনুন; সেই দিব্য শক্তিকে বরণ করি; ইন্দ্র ও বায়ুকে বরণ করি। যেহেতু জগতের নাভিস্বরূপ সূর্যের উদ্দেশে এই নতুন স্তুতি স্বত-প্রণোদিতভাবে উচ্চারিত হচ্ছে সুতরাং দেবগণ (=রশ্মিগণ) যেমন ধারণশক্তির দ্বারা অন্য কর্মকে বহন করেন, তেমনি এই স্তুতিও নিশ্চয়ই ধীশক্তিসম্পন্ন দেবগণের কাছে পৌঁছাবে। (৪৬২) হে মরুদ্‌গণ্‌, বলশালী পূজনীয় সুখদাতা শীঘ্রগামী মেঘসঞ্চালনকারী স্তুতিপ্রিয় তোমাদের উদ্দেশে, মরুদ্‌যুক্ত (=প্রাণবায়ু সমন্বিত) বিষ্ণুর উদ্দেশে এই উত্তম স্তোত্রগান গমন করুক। (৪৬৩) সূর্য যেমন কিরণরাশির সহযোগে অন্ধকার নাশ করেন, সেরূপ এই শুদ্ধা শোভনা হরিৎবর্ণা সোমধারাসকল মিলিত হয়ে সকল হিংসাকে দূর করেছেন। সেই সোমধারার ঊর্ধ্বে দীপ্তিমান পবিত্র সূর্য উজ্জ্বল শোভা ধারণ করেন; তাঁর সেই বিশ্বরূপ সপ্তছন্দের দ্বারা ছন্দায়িত হয়ে তাঁকে বেষ্টন করে ভ্রমণ করে। (৪৩৬) দ্যুলোক ও পৃথিবী উভয়ের মধ্যে বর্তমান সবিতাদেব (=সূর্য); সেই সর্বকর্মে ব্যাপ্ত, সৎকর্মের প্রেরক, রমণীয় রত্ন ধারণকারী, সর্বজন প্রিয়, মননযোগ্য সবিতাদেবকে আমি অর্চনা করি। যার স্বপ্রকাশময়ী দীপ্তি গমনাভিমুখী হয়ে উদ্‌ভাসিত, যার অনুশাসনে জগৎ প্রবর্তিত, তিনি হিরণ্যহস্ত (=স্বর্ণবর্ণ কিরণ-যুক্ত) সুকর্মা, জলনির্মাণকারী আদিত্য সূর্য। (৪৬৫) আমিই সেই অগ্নিকে জানি যিনি দানাদিগুণযুক্ত, সকলের নিবাসের কারণ, বলের পুত্র (=বলের দ্বারা উৎপন্ন), জ্ঞানপ্রজ্ঞান, কৃতবিদ্য বিপ্রের মত প্রজ্ঞাবিশিষ্ট। সেই উজ্জ্বলশিখাযুক্ত ঘৃতযুক্ত অগ্নি গৃতাহূতির দ্বারা বেষ্টিত হয়ে ঊর্ধ্বগতির দ্বারা দেবগণের প্রতি হব্যবহনে সমর্থ হন। (৪৬৬) হে ইন্দ্র, প্রথমেই আকাশে তুমি মানুষের হিতকর যে বীরোচিত কর্ম পূর্ব-কালে সম্পাদন করেছিলে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় কার্য। তুমি প্রাণের কারণে নিরুদ্ধ জলকে দেবশক্তির দ্বারা (=রশ্মির বলের দ্বারা) মুক্ত করেছিলে, বলের দ্বারা পৃথিবী হতে সকল আদেবমায়াকে (অদেব=মেঘ) দূর করে জলপ্রদান করলে; হে শতকর্মা ইন্দ্র, (সেই জলের দ্বারা) অন্নকে প্রাপ্ত হলে।।