Wednesday, March 20, 2013

সামবেদ-সংহিতা, তৃতীয় অধ্যায়, ঐন্দ্র কান্ডঃ ইন্দ্রস্তুতি



প্রথম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতা ইন্দ্র (৯ম ঋকের দেবতা মরুদ্‌গণ)।। ছন্দ বৃহতী।। ঋষিঃ ১।৬।৯ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ২ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য (ঋগ্বেদে শংযু বার্হস্পত্য, ৩ প্রস্কণ্ব কাণ্ব (বালখিল্য সুক্তমন্ত্র), ৪ নোধা গৌতম, ৫ কলি প্রাগাথ, ৭ মেধাতিথি কাণ্ব, ৮ ভর্গ প্রাগাথ, ১০ প্রাগাথ ঘৌর কাণ্ব।।

মন্ত্রঃ (২৩৩) অভি ত্বা শূর নোনুমোহদুগ্ধা ইব ধেনবঃ। ঈশানমস্য জগতঃ স্বর্দৃশমীশানমিন্দ্র তস্থুষঃ।।১।। (২৩৪) ত্বামিদ্ধি হবামহে সাতৌ বাজস্য কারবঃ। ত্বাং বৃত্রেম্বিন্দ্র সৎপতিং নরস্তাং কাষ্ঠাস্বর্বতঃ।। (২৩৫) অভি প্র বঃ সুরাধসমিন্দ্রমর্চ যথা বিদে। যো জরিতৃভ্যো মধবা পুরূবসুঃ সহস্রেণেব শিক্ষতি।।৩।। (২৩৬) তং বো দস্মমৃতীষহং বসোর্মন্দানমন্ধসঃ। অভি বৎসং ন স্বসরেষু ধেনব ইন্দ্রং গীর্ভির্নবামহে।।৪।। (২৩৭) তরোভির্বো বিদদ্বসুমিন্দ্রং সবাধ ঊতয়ে।। বৃহদ্‌ গায়ন্তঃ সুতসোমে অধ্বরে হুবে ভরং ন কারিণম্‌।।৫।। (২৩৮) তরণিরিৎ সিষাসতি বাজ পুরন্ধ্যা আ ব ইন্দ্রয় পুরুহূতং নমে গিরা নেমিং তষ্টেব সুদ্রুবম্‌।।৬।। (২৩৯) পিবা সুতস্য রসিনো মৎস্বা ন ইন্দ্র গোমতঃ। আপির্নো বোধি সধমাদ্যে বৃধেতহস্মাঁ অবন্তু তে ধিয়ঃ।।৭।। (২৪০) ত্বং হ্যেহি চেরবে বিদা ভগং বসুত্তয়ে। উদ্‌বাবৃযস্বমধবন গবিষ্টয় উদিন্দ্রাশ্বমিষ্টয়ে।।৮।। (২৪১) ন হি বশ্চরমং চ ন বসিষ্ঠঃ পরিমংসতে। অস্মাকমদ্য মরুতঃ মরুতঃ সুতে সচা বিশ্বে পিবন্তু কামিনঃ।।৯।। (২৪২) মা চিদন্যদ্‌ বি শংসত সখায়ো মা রিষণ্যত। ইন্দ্রমিৎ স্তোতা বৃষণং সচা সুতে মুহুরুক্‌থা চ শংসত।।১০।।

অনুবাদঃ (২৩৩) দোহন করা হয় নি এমন পয়স্বিনীদের মত আমরা স্তুতিভারে অবনত হয়ে, হে শূর, তোমার কাছে এসেছি। হে ইন্দ্র, তুমি জঙ্গমের ঈশ্বর, তুমি স্থাবরের ঈশ্বর, তুমি সর্বদর্শী।। (২৩৪) আমরা স্তোতারা তোমাকেই ডাকি অন্নবল লাভের আশায়, হে ইন্দ্র, যে তুমি মেঘপুঞ্জে অবস্থিত জলরাশির মধ্যে অশ্বরশ্মিরূপে অবস্থান করে মেঘবিদারণের দ্বারা সৎকর্মসাধক হও, নরগণ সেই তোমাকেই ডাকে।। (২৩৫) আমি যেমন করি তোমরাও তোমাদের মঙ্গলের জন্য শোভন সর্বসিদ্ধিকর ধনবিশিষ্ট ইন্দ্রের কাছে সেইভাবে প্রার্থনা কর, তিনি মহানদাতা বহুধনযুক্ত এবং স্তোতাকে সহস্র প্রকারে দান করে থাকেন।। (২৩৬) তোমাদের জন্য সেই দর্শনীয় জগৎনিয়ামক, সোমে বাসকারী, অন্নের দ্বারা হৃষ্ট ইন্দ্রকে মন্ত্ররূপ শব্দের দ্বারা স্তুতি করি যেমন গোষ্ঠে ধেনুগণ বাছুরকে (সন্তানকে) ডাকে।। (২৩৭) তোমাদের সব কিছু রক্ষার জন্য ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ও আন্তরিকতার সঙ্গে, অহিংসিত সোমযজ্ঞে, বৃহৎ সামগানে, সেই ইন্দ্রকে আহ্বান করি যিনি প্রচুর লাভে হৃষ্ট ব্যক্তির ন্যায় ধনশালী।। (২৩৮) প্রজ্ঞার দ্বারা যুক্ত হয়ে ক্ষিপ্রকারী ব্যক্তিই ধনসেবা করে থাকেন। বহু ব্যক্তির দ্বারা আহুত ইন্দ্রকে স্তুতির দ্বারা নত হয়ে তোমাদের জন্য বেষ্টিত করি, যেমন সূর্য সুগমনের দ্বারা সংবৎসরকে বেষ্টন করেন।। (২৩৯) হে ইন্দ্র, আমাদের দেওয়া উদকযুক্ত এই রসাল সোম পান করে হৃষ্ট হও। তুমি আমাদের বন্ধু বলে মনে কর; সোমপানে হৃষ্ট হয়ে তোমার ধী বৃদ্ধি হোক আমাদের রক্ষার জন্য।। (২৪০) তুমি ভজনীয় একথা জেনে শ্রদ্ধা নিবেদনকারীর কাছে, ধনকামীর কাছে এস; হে উত্তমদাতা ইন্দ্র, ইচ্ছাপূরণের জন্য, মহাগতির জন্য ঊর্ধ্বে অবস্থান করে বারবার বর্ষণ কর।। (২৪১) বসিষ্ঠ তোমাদের কাউকেই অবহেলা করেন না। হে প্রাণরূপী মরুদ্‌গণ, সোম কামনা করে তোমরা সকলে মিলিত হয়ে আজ আমাদের সোমযাগে এস।। (২৪২) হে সখাগণ, তোমার অন্যের পূজা করো না। কাউকে হিংসাও করো না। বর্ষণকারী ইন্দ্রকেই একত্র মিলত হয়ে স্তোত্র ও গানের দ্বারা মুহুর্মুহু স্তব কর।।

দ্বিতীয় খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতা ইন্দ্র ।। ছন্দ বৃহতী ।। ঋষিঃ ১ পুরুহন্মা আঙ্গিরস, ২।৩ মেধাতিথি ও মেধ্যাতিথি কাণ্ব, ৪ গাথি বিশ্বামিত্র, ৫ গোতম রাহুগণ, ৬ নৃমেধ ও পুরুমেধ আঙ্গিরস, ৭।৮।৯। মেধাতিথি বা মেধ্যাতিথি কাণ্ব (ঋগ্বেদে মেধাতিথি), ১০ দেবাতিথি কাণ্ব।।

মন্ত্রঃ (২৪৩) নকিষ্টং কর্মণা নশদ্‌ যশ্চকার সদাবৃধম্‌। ইন্দ্রং ন যজ্ঞৈর্বিশ্বগূর্তমৃন্বসমধৃষ্টং ধৃষ্ণুমোজস্য।।১।। (২৪৪) য ঋতে চিদভিশ্রিষঃ পুরা জক্রুভ্যঃ আতৃদঃ সন্ধাত্য সন্ধিং মধবা পুরূবসুর্নিষ্ক্রর্তা বিহবুতং পুনঃ।।২।। (২৪৫) আ ত্ব সহস্রমা শতং যুক্তা রথে হিরণ্যয়ে। ব্রহ্মযুজ্যে হরয় ইন্দ্র কেশিনো বহস্তু সোমপীতয়ে।।৩।। (২৪৬) আ মন্দৈরিন্দ্র হরিভির্যাহি ময়ূররোমভিঃ। মা ত্বা কে চিন্নি যেমুরিন্ন পশিনোহতি ধন্বেব তাঁ ইহি।।৪।। (২৪৭) ত্বমঙ্গ প্র শংসিষো দেবঃ শবিষ্ঠ মর্ত্যম্‌। ন ত্বদন্যো মঘবন্নস্তি মর্ডিতেন্দ্র ব্রবীমি তে বচঃ।।৫।। (২৪৮) ত্বমিন্দ্র যশা অস্যৃজীষী শবসস্পতিঃ। ত্বং বৃত্রাণি হংস্যপ্রতীন্যেক ইৎ পুর্বনুত্তশ্চর্ষণীধৃতিঃ।।৬।। (২৪৯) ইন্দ্রমিন্দ্‌ দেবতাতয় ইন্দ্রং প্রযত্যধ্বরে। ইন্দ্রং সমীকে বনিনো হবামহ ইন্দ্রং ধনস্য সাতয়ে।।৭।। (২৫০) ইমা উ ত্বা পুরূবসো গরো বর্ধন্তু যা মম। পাবকবর্ণাঃ শুচয়ো বিপশ্চিতোহভিস্তোমৈরনূষত।।৮।। (২৫১) উদু ত্যে মধুমত্তমা গিরঃ স্তোমাস ঈরতে। সত্রাজিতো ধনসা অক্ষিতোতয়ো বাজয়ন্তো রথা ইব।।৯।। (২৫২) যথা গৌরো অপ্রা কৃতম্‌ তৃষ্যন্নেত্যবেরিণম্‌। আপিত্বে নঃ প্রপিত্বে তূয়মা গহি কণ্বেষু সু সচা পিব।।১০।।

অনুবাদঃ (২৪৩) যিনি সদা বৃদ্ধিশীল, যিনি যজ্ঞেয় দ্বারা সর্বস্তুতিযোগ্য, মহান, অপরাজিত ও অতিনিপুণ, সেই ইন্দ্রকে কেহই বলের দ্বারা বা কর্মের দ্বারা জানতে পারে না।। (২৪৪) যিনি পূর্বেই, সংযোগকারী বস্তু ব্যতিরেকেই, বস্তু ব্যতিরেকেই, বিচ্ছিন্ন অস্থিকে জোড়া দেন, যিনি বিচ্ছিন্ন বস্তুকে বারবার সংস্কার করেন, সেই সংস্কারকর্তা, সংযোগকারীই বহুধন অতিদাতা ইন্দ্র।। (২৪৫) হে ইন্দ্র, উদকহরণের জন্য বেগবান, স্তুতিযুক্ত, শতসহশ্র কিরণরাশি তোমাকে সোমপানের জন্য বহন করুক।। (২৪৬) হে ইন্দ্র, ময়ূরপেখমের মত উজ্জ্বল, বিচিত্র রশ্মিযুক্ত হয়ে আনন্দে মত্ত হয়ে এস; ব্যাধ যেমন তার শিকারকে ঘিরে ফেলে সেভাবে তোমার আগমনে যেন কেউ বাধা না দেয়; মরুপ্রান্তর অতিক্রমকারীর মত সকল বাধা দূর করে এস।। (২৪৭) হে অতিবলইন্দ্র, তুমি দীপ্যমান, (তাই) স্তুতিরত মানুষকে অবিলম্বেই প্রশংসিত কর; হে মঘবা, তুমি ভিন্ন আর কেউ সুখদাতা নেই; আমি তোমারই স্তুতি করে থাকি।। (২৪৮) হে ইন্দ্র, তুমি বলপতি, সোমবান ও যশস্বী; তুমি একাই অপ্রতিহতগতিতে বৃত্রহনন কর; তুমিই জনগণপালক।। (২৪৯) একমাত্র ইন্দ্রকেই যজ্ঞের জন্য, ইন্দ্রকে যজ্ঞকালে দান উৎসর্গের জন্য, ইন্দ্রকে সকলে মিলিতভাবে ভজনার জন্য, ইন্দ্রকে ধনলাভের জন্য আমরা আহ্বান করি।। (২৫০) হে বহুধন, আমার এই যা কিছু স্তুতি তোমাকে বর্ধিত করুক, অগ্নির মত তেজোদীপ্ত ও শুচি বিদ্বান্‌গণ তোমাকেই স্তুতি করেন।। (২৫১) আর অতি মধুর বাক্যের মন্ত্রমালা যা শত্রুকে জয় করে, যা ধনদ, যা অক্ষয়রক্ষাকারী ও অথের মত বেগবান্‌ তা ঊর্ধ্বে যাচ্ছে (ইন্দ্রকে পাবে বলে)।। (২৫২) মৃগ তৃষ্ণার্ত হলে যেমন জলপুর্ণ স্থানের অভিমুখে যায়, তুমিও তেমনি, হে ইন্দ্র, তোমার সোমপানের সময় হলে আমাদের কাছে অবশ্যই এস। আমরা কণ্বগণ, আমাদের সঙ্গে একত্র সোমপন কর।।

তৃতীয় খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতা ইন্দ্র; ৩য় দেবতা মিত্রাবরুণ ও আদিত্যগণ।। ছন্দ বৃহতী।। ঋষিঃ ১ ভর্গ প্রাগাথ, ২।৮। রেভ কাশ্যপ, ৩ জমদগ্নি ভার্গব, ৪।৯ মেধাতিথি কান্ব (ঋগ্বেদে মেধ্যাতিথি কান্ব), ৫।৬ নৃমেধ ও পুরুমেধ আঙ্গিরস, ৭ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ১০ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য (ঋগ্বেদে শংবু বার্হস্পত্য)।।

মন্ত্রঃ (২৫৩) শগ্‌ধ্যূতষু শবীপত ইন্দ্র বিশ্বাভিরুতিভিঃ। ভগং ন হি ত্বা যশসং বসুবিদমনু শূর চরামসি।।১।। (২৫৪) যা ইন্দ্র ভুজ আভরঃ স্বর্বাং অসুরেভ্যঃ। স্তোতারমিন্মঘবন্নস্য বর্ধয় যে চ ত্বে বৃক্তবর্হিষঃ।।২।। (২৫৫) প্র মিত্রায় প্রার্যম্‌ণে সচথ্যমৃতাবসো। বর্‌থোতবর্‌ণে ছন্দ্যং বচঃ স্তোত্রং রাজসু গায়ত।।৩।। (২৫৬) অভি ত্বা পূর্বরীতয় ইন্দ্র স্তোমেভিরায়বঃ। সমীচীনাস ঋভবঃ সমস্বরন্‌ রুদ্রা গৃণন্ত পূর্ব্যম্‌।।৪।। (২৫৭) প্র ব ইন্দ্রায় বুহতে মরুতো ব্রহ্মার্চত। বৃত্রং হনতি বৃণহা শশকৃতুর্বজ্রেণ শতপর্বণা।।৫।। (২৫৮) বৃহদিন্দ্রায় গায়ত মরুতো বৃত্রহন্তমম্‌। যেন জ্যোতিরজনয়ন্নৃতাবৃধো দেবং দেবায় জাগৃবি।।৬।। (২৫৯) ইন্দ্র ক্রতুং ন আ ভর পিতা পুত্রেভ্যো যথা। ষিক্ষা ণো অস্মিন্‌ পুরুহূত যামনি জীবা জ্যোতিরশীমহি।।৭।। (২৬০) মা ন ইন্দ্র পরা বৃণগ্‌ ভবা নঃ সধমাদ্যে। ত্বং ন ঊতী ত্বমিন্ন আপ্যং মা ন ইন্দ্র প্রাবৃণক্‌।।৮।। (২৬১) বয়ং ঘ ত্বা সুতাবন্ত আপো ন বৃক্তবর্হিষঃ। পবিত্রসা প্রস্রবণেষু বৃত্রহন্‌ পরি স্তোতার আসতে।।৯।। (২৬২) যদিন্দ্র নাহুষীস্বা অজো বৃম্‌ণং চ কৃষ্টিষু। যদ্‌ বা পঞ্চক্ষিতীনাং দ্যুম্নমা ভর সত্রা বিশ্বানি পৌংস্যা।।১০।।

অনুবাদঃ (২৫৩) সকল বল ও কর্মের অধিপতি হে ইন্দ্র, তুমি সকল বলকর্মে অবস্থিত থেকে সমস্ত প্রকারে আমাদের রক্ষা কর। হে শূর, উদয়কালীন সূর্যের জ্যোতিকে যেমন লোকে ভজনা করে সেরূপ যশস্বী ও ধনপ্রাপক তোমাকে ভজনা করি।। (২৫৪) হে ইন্দ্র, অসুররূপী মেধ হতে (=মেঘ বিদীর্ণ করে) যে প্রাণধন (=বারিরাশি) সকলের ভোগের জন্য আহরণ করেছ তার দ্বারা, হে ধনবান্‌, যারা তোমার স্তবকারী ও যজ্ঞকারী মিত্রদেবের উদ্দেশে, অন্ধকারনাশক দেব অর্যমার উদ্দেশে, আশ্রয়দাতা দেব বরুণের ছন্দে বাক্যে স্তোত্রে গান কর।। (২৫৬) হে ইন্দ্র, তুমিই প্রথমে সোমপান করবে বলে মানুষেরা তোমার উদ্দেশে বারবার গান করছে; আর একত্র মিলিতভাবে অবস্থিত বৈদ্যুতিক জ্যোতিসমূহ ও শব্দায়মান রুদ্রগণ প্রথমাবধি সমস্বরে তোমার আনুকূল্যের জন্য গম্ভীর গর্জন করে চলেছেন। (২৫৭) হে প্রাণবায়ু মরুদ্‌গণ, মহান ইন্দ্রের উদ্দেশে ব্রহ্মসঙ্গীতে উপাসনা কর; শতকর্মা বৃত্রনাশকারী ইন্দ্র শতপর্ববিশিষ্ট বজ্রের দ্বারা বৃত্রমেধকে বধ করেন।। (২৫৮) বৃত্রবিনাশকারী মহান সঙ্গীত শুরু কর, হে মরুদ্‌গণ; সদাদীপ্ত ইন্দ্রকে জাগরুক ভাখবার জন্য সকল দেবরশ্মিগণ যেন জ্যোতিঃ উৎপন্ন করতে পারেন।। (২৫৯) হে ইন্দ্র, পিতা যেমন পুত্রদের জ্ঞানদান করেন তেমনি তুমিও আমাদের জ্ঞান দাও; হে বহুস্তুত দেবতা, আমাদের চলার পথ এমন ভাবে অভ্যস্ত কর যেন আমরা জ্যোতিষ্মান সূর্যকে নিত্যই প্রাপ্ত হই।। (২৬০) হে ইন্দ্র, আমাদের পরিত্যাগ করো না, আমাদের সঙ্গে আনন্দহৃদয়ে মত্ত হও; তুমিই আমাদের রক্ষা, তুমিই বন্ধু; আমাদের ছেড়ে যেও না।। (২৬১) হে বৃত্রহন্তা (=মেঘবিদারণকারী ইন্দ্র), সম্প্রতি তুমি অন্তরিক্ষে বিস্তৃত যে বারিরাশি দান করলে, আমরা সোমবান স্তোতারা সেই পবিত্র প্রস্রবণকে ঘিরে বসেছি। আর আমাদের মনও তোমা অভিমুখে নিম্নগতি বারির মত যাচ্ছে।। (২৬২) হে ইন্দ্র, মনুষ্যসমাজে যে কিছু ধন ও বল আছে, আর যা কিছু অন্নধন আছে পঞ্চভূতে, তুমি তা সকলই অমিতবলে আমাদের জন্য নিয়ে এস।।

চতুর্থ খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।। দেবতা ইন্দ্র।। ছন্দ বৃহতী।। ঋষিঃ ১ মেধাতিথি কাণ্ব (ঋগ্বেদে মেধ্যাতিথি কাণ্ব), ২ রেভ কাশ্যপ, ৩ বৎস (ঋগ্বেদে অশ্বপুত্র বশ), ৪ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য (ঋগ্বেদে শংযু বার্হস্পত্য), ৫ বৃমেধ আঙ্গিরস, ৬ পুরুহন্মা আঙ্গিরস, ৭ বৃমেধ ও পুরুমেধ আঙ্গিরস, ৮ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ৯ মেধাতিথি ও মেধ্যাতিথি কাণ্ব, ১০ কলি প্রাগাথ।।

মন্ত্রঃ (২৬৩) সত্যমিত্থা বৃষেদসি বৃষজুতির্নোহবিতা। বৃষাহ্যুগ্র শৃন্বিষে পরাবতি বৃষো অর্বাবতি শ্রুতঃ।।১।। (২৬৪) যচ্ছক্রাসি পরাবতি যদর্বাবতি বৃত্রহিন্‌। অতস্তা গীর্ভির্দ্যুগদিন্দ্র কেশিভিঃ সুতাবাঁ আ বিবাসতি।।২।। (২৬৫) অভি বো বীরমন্ধসো মদেষে গায় গিরা মহাবিচেতসম্‌। ইন্দ্রং নাম শ্রুত্যং শাকিনং বচো যথা।।৩।। (২৬৬) ইন্দ্র ত্রিধাতু শরণং ত্রিবরূথং স্বস্তয়ে। ছর্দির্যচ্ছ মঘবদ্‌ভ্যশ্চ মহ্যং চ যাবয়া দিদ্যুমেভ্যঃ।।৪।। (২৬৭) শ্রায়ন্ত ইব সূর্যং বিশ্বেদিন্দ্রস্য ভক্ষত। বসূনি জাতো জনিমান্যোজসা প্রতি ভাগং ন দীধিম।।৫।। (২৬৮) ন সীমদেব আপ তদিষং দীর্ঘায়ো মর্ত্যঃ। এতগ্বা চিদ্য এতশো যুযোজত ইন্দ্রো হরী যুযোজতে।।৬।। আ নো বিশ্বাসু হব্যমিন্দ্রং সমৎসু ভূষত। উপ ব্রহ্মাণি সবনানি বৃত্রহন্‌ পরমজ্যা ঋচীষম।।৭।। (২৭০) তবেদিন্দ্রাবমং বসু ত্বং পুষ্যসি মধ্যমম্‌। সত্রা বিশ্বস্য পরমস্য রাজসি নকিষ্ট্বা গোষু বৃন্বতে।।৮।। (২৭১) ক্বেয়থ ক্বেদসি পুরুত্রা চিদ্ধি তে মনঃ। অলর্ষি যুধ্‌ম খজকৃৎ পুরন্দর প্র গায়ত্রা অগাসিষুঃ।।৯।। (২৭২) বয়মেনমিদা হ্যোতপীপেমেহ বজ্রিণম্‌। তস্মা ঊ অদ্য সবনে সুতং ভরা নূনং ভূষত শ্রুতে।।১০।।

অনুবাদঃ (২৬৩) একথা সত্য যে, তুমি ইচ্ছাপূরণকারী এবং উদ্যোগী পুরুষের মত উৎসাহযুক্ত; তুমি আমাদের রক্ষক। হে উগ্রবল, তুমি ইচ্ছাপূরণকারী, এরূপ খ্যাতি তোমার আছে; দূরে এবং কাছে সর্বত্র তোমার খ্যাতি শোনা যায়।। (২৬৪) হে সামর্থ্যযুক্ত ইন্দ্র, তুমি দূরে থাক আর কাছে থাক, সেখান থেকে অশ্বরশ্মিযুক্ত তোমাকে স্তুতির দ্বারা ক্ষিপ্রতার সঙ্গে নিকটে আনছেন তাঁরা যাঁরা সোমবান।। (২৬৫) তোমরা সেই শক্তিমান ইন্দ্রের কাছে নত হয়ে, অন্নলাভে হৃষ্ট হয়ে বিশ্ববিশ্রুত অন্নদাতা ও আনন্দে আত্মহারা মহাচৈতন্য ইন্দ্রের উদ্দেশে, যেরূপ বাক্যে স্ফূর্তি হয় সেরূপ বাক্যে গান মহাসঙ্গীত কর।। (২৬৬) হে ইন্দ্র, আমাদের কল্যাণের জন্য অন্ন-জল-তেজরূপ তিনপ্রকার আশ্রয় থেকে উৎপন্ন তনূত্রাণকারী মন-প্রাণ-বাক্‌ দাও; প্রচুর ধনসম্পদ রক্ষার জন্য গৃহ দাও; আর আমার জন্য আমার তেজস্বী দীপ্তিমান কান্তির জন্য এই সকল একত্র সমবেত কর।। (২৬৭) রশ্মিগণ যেমন সূর্যের সেবা করেন তেমনি, যারা জন্মেছে এবং যারা জন্মাবে তাদের মধ্যে নিজ মাহাত্মবলে রশ্মিগণ ইন্দ্রের সমস্ত ধন ভাগ করে দেবেন বলে ইন্দ্রের সেবা করেন; আর আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ধনের মত সেই ধন গ্রহণ করি।। (২৬৮) হে চিরজীবী ইন্দ্র, মর্ত্যের মানুষ সেই কাম্যধনকে বিচ্ছিন্নভাবে (=স্বার্থপর ব্যক্তির মত একাকী) ভোগ করতে পারে না, কারণ ইন্দ্রই (জীবাত্মা-পরমাত্মা অথবা দেশ-কালরূপ) হরি নামক বিচিত্র দীপ্ত অশ্বরশ্মি দুটিকে সর্বদাই একত্র যুক্ত করে রেখেছেন।। (২৬৯) আমাদের মঙ্গলের জন্য সকল যজ্ঞে আহবানযোগ্য, বৃত্রনাশক (মেঘবিদারণকারী), স্তুতিদ্বারা সম্বোধনযোগ্য ইন্দ্রকে সকল ভক্ষণীয় বস্তু নিবেদনের দ্বারা অলঙ্কৃত কর।। (২৭০) হে ইন্দ্র, অধম ধন তোমারই; মধ্যপ ধনও তুমি পালন কর; বিশ্বের পরমধনে তুমিই বিরাজ কর। রশ্মিসমূহের দ্বারাই তুমি এ সমস্ত কর আর সে বিষয়ে তোমাকে কেঊ বাধা দিতে পারে না।। (২৭১) হে বহুজনের ত্রাতা ইন্দ্র, তুমি কোথায় গিয়েছ? এখন কোথায় আছো? তোমার মন নানাদিকে। হে সংক্ষুব্ধকারী ধর্মযোদ্ধা, হে দেহপুরবিদারক আত্মা, সামগানকারীরা তোমার উদ্দেশে গান করছেন; তুমি এস।। (২৭২) আমরা আজ এবং কাল বজ্রযুক্ত ইন্দ্রকে যজ্ঞে আপ্যায়িত করবো। আজ এই প্রখ্যাত যজ্ঞে তাঁরই উদ্দেশে অভিষুত সোম অবশ্যই আন, তাঁকে ভূষিত কর।।

পঞ্চম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।। দেবতা ইন্দ্র (৩ মন্ত্রের দেবতা ইন্দ্র বা বাস্তোস্পতি; ৪ সূর্য, ৯ ইন্দ্রাগ্নী)।। ছন্দ বৃহতী।। ঋষিঃ ১।৬ পুরুহন্মা আঙ্গিরস, ২ ভর্গ প্রাগাথ, ৩ ইরিম্বিঠি কাণ্ব, ৪ জমদগ্নি ভার্গব, ৫।৭ দেবাতিথি কাণ্ব, ৮ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ৯ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, ১০ মেধ্য কাণ্ব।।

মন্ত্রঃ (২৭৩) যো ভাজা চর্ষণীনাং যাতা রথেবিরধ্রিণ্ডঃ। বিশ্বাসাং তরুতা পূতনানাং জ্যেষ্ঠো যো বৃত্রহা গৃণে।।১।। (২৭৪) যত ইন্দ্র ভয়ামহে ততো নো অভয়ং কৃধি। মঘবঞ্ছগ্ধি তব তন্ন ঊতয়ে বি দ্বিষো বি মৃধো জহি।।২।। (২৭৫) বাস্তোস্পতে ধ্রুবা স্থূণাংসত্রং সোম্যানাম্‌। দ্রন্সঃ পুরাং ভেত্তা শশ্বতীনামিন্দ্রো মুনীনাং সখা।।৩।। (২৭৬) বণ্‌মহাঁ অসি সূর্য বলাদিত্য মহাঁ অসি। মহন্তে সতো মহিমা পনিষ্টম মহ্না দেব মহাঁ অসি।।৪।। (২৭৭) অশ্বী রথী সুরূপ ইদ্‌ গোমান্‌ যদিন্দ্র তে সখা। শ্বাত্রভাজা বয়সা সচতে সদা চন্দ্রৈর্যাতি সভামুপ।।৫।। (২৭৮) যদ্‌ দ্যাব ইন্দ্র তে শতং শতং ভূমীরুত স্যুঃ। ব ত্বা বজ্রিন্‌ৎসহস্রং সূর্যা অনূ ন জাতমষ্ট রোদসী।।৬।। (২৭৯) যদিন্দ্র প্রাগপাণ্ডদংন্যগ্‌বা হূয়সে নূভিঃ। সিমা পুরূ নৃযূতো অস্যানবেহসি প্রশর্ধ তুর্বশে।।৭।। (২৮০) কস্তমিন্দ্র ত্বা বসবা মর্ত্যা দধর্ষতি। শ্রদ্ধা হি তে মঘবন্‌ পার্যে দিবি বাজী বাজং সিষাসতি।।৮।। (২৮১) ইন্দ্রাগ্নী অপাদিয়ং পূর্বাগাৎ পদ্বতীভ্যঃ। হিত্বা শিরো জিহ্বয়া রারপচ্চরৎ ত্রিংশৎ পদা ন্যক্রমীৎ।।৯।। (২৮২) ইন্দ্র নেদীয় এদিহি মিতমেধাভিরূতিভিঃ। আ শন্তম শন্তমাভিরভিষ্টিভিরা স্বাপে স্বাপিভিঃ।।১০।।

অনুবাদঃ (২৭৩) যিনি মানুষের রাজা, রশ্মিসহায়ে অপ্রতিহতগতিযুক্ত ও পুনঃ পুনঃ ভ্রমণকারী, যিনি সকল সংগ্রামে ত্রাণকর্তা সেই শ্রেষ্ঠ ও বৃত্রহননকারী ইন্দ্রকে স্তব করি। (২৭৪) হে ইন্দ্র, যা থেকে আমরা ভয় পাই তা থেকে আমাদের অভয় কর। হে মঘবা, তুমি ক্ষমতাশালী, আমাদের রক্ষার জন্য তোমার সামর্থ্যের দ্বারা হিংসাকারী শত্রুদের বিনাশ কর। (২৭৫) হে গৃহপালক দেবতা, সোমযজ্ঞকারীদের সোমযজ্ঞরূপ স্তম্ভকে দৃঢ় ও অবিচল কর। (পরমাত্মা) ইন্দ্র সকল দেহ ভেদ করে প্রবেশ করে প্রতি জীবদেহে বিন্দুবৎ (আত্মারূপে) অবস্থান করেন, তিনি মুনিগণের সখা।। (২৭৬) হে সূর্য, তুমি সত্যই মহান; হে আদিত্য, তুমি সত্যই মহান; তোমাকে লক্ষ্য করে যে মহাসঙ্গীত তা তোমারই মতই মহান; হে দেব, বৃষ্টি প্রভৃতি দানরূপ মহৎ কর্মের দ্বারা তুমি মহান হয়েছ।। (২৭৭) হে ইন্দ্র, যাঁরা তোমার সখা তাঁরা ব্যাপ্তিযুক্ত, পৌরুষযুক্ত রূপবান ও জ্ঞানবান; তারা সর্বদা পাখীর মত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে গমন করেন এবং সভাস্থলে চন্দ্রের মতন স্নিগ্ধকান্তিযুক্ত হয়ে শোভিত হন।। (২৭৮) হে ইন্দ্র, দ্যুলোক এবং পৃথিবী যদি শতশতও হয় তবু তারা তোমার মহিমা প্রকাশ করতে পারে না। হে বজ্রধারী, সহস্র সূর্যও তোমাকে প্রকাশ করতে পারে না; যারা জন্মেছে তারা, এবং দ্যুলোক ও পৃথিবী কেহই তোমাকে ব্যাপ্ত করতে পারে না।। (২৭৯) হে ইন্দ্র, যখন তুমি পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ সকল দিকের সকল মানুষের দ্বারা আহূত হও তখন উদ্যোগী সেই সকল মানুষের যজ্ঞকর্মের কাছে তাদের প্রীতির জন্য তুমি উপস্থিত থাক।। (২৮০) হে ইন্দ্র, কোন্‌ মানুষ তোমার ধনকে অতিক্রম করতে পারে? হে মঘবা, যাঁরা তোমার প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাঁরাই ঊর্ধ্বে দ্যুলোকস্থিত অন্ন-বল-বাক্‌রূপ ধনকে লাভ করতে পারেন।। (২৮১) হে ইন্দ্র ও অগ্নিদেব, এই সেই ঊষা যিনি পাদরহিত হয়েও পাদযুক্ত প্রাণিবর্গের নিদ্রা ত্যাগ করিয়ে মস্তক উত্তোলন করাচ্ছেন, তারা এখন কথা বলতে আরম্ভ করেছে; আর এইভাবেই ঊষাদেবী প্রতিদিন তিরিশ পা অতিক্রম করেন। (২৮২) হে ইন্দ্র, কাছে এস সকল প্রজ্ঞা ও কল্যাণের সঙ্গে। হে অতি সুখপ্রদ, সকল সুখ ও অভিলষিত বস্তুর সঙ্গে এবং নিদ্রাকালে আত্মার অতীন্দ্রিয় সুখানুভূতির সঙ্গে এস। [স্বাপ=নিদ্রা]। স্বাপেভিঃ স্বাপম্‌=নিদ্রাজনিত আত্মার নির্গুণ অতিন্দ্রিয় সুখ (শ্রীধর ভাগবত ৬।১৬।৫৫)।

ষষ্ঠ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতা ইন্দ্র (৫ মন্ত্রের দেবতা অশ্বিদ্বয়)।। ছন্দ বৃহতী। ঋষিঃ ১ নৃমেঘ আঙ্গিরস, ২।৩ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ৪ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য (ঋগ্বেদে শংযু বার্হস্পত্য), ৫ পরুচ্ছেপ দৈবদাসি, ৬ বামদেব গৌতম, ৭ মেধ্যাতিথি কান্ব, ৮ ভর্গ প্রাগাধ, ৯।১০ মেধাতিথি ও মেধ্যাতিথি কাণ্ব।।

মন্ত্রঃ (২৮৩) ইত ঊতী বো অজরং প্রহেতারমপ্রহিতম্‌। আশুং জেতারং রথীরমমতূর্তং তুগ্রিয়াবৃধম্‌।।১।। (২৮৪) মো যু ত্বা বাঘতশ্চ নারে অস্মন্নি রীরমন্‌। আরাত্তাদ, বা সধমাদ ন আ গহীহ বা সন্নুপ শ্রুধি।।২।। (২৮৫) সুনোত সোমপাব্‌নে সোমমিন্দ্রায় বজ্রিণে। পচতা পক্তীরবসে কৃণুধ্বমিৎ পৃণন্নিৎ পৃণতে ময়ঃ।।৩।। (২৮৬) যঃ সত্রাহা বিচর্ষণিরিন্দ্রং তং হূমহে বয়ম্‌। সহস্রমন্যো তুবিনূম্‌ণ সৎপতে ভবা সমৎসু নো বৃধে।।৪।। (২৮৭) শচীভির্নঃ শচীবসূ দিবা নক্তং দিশস্বতম্‌। মা বাং রাতিরুপ দসৎ কদাচনাস্মদ্রাতিঃ কদাচন।।৫।। (২৮৮) যদা কদা চ মীঢ়ুষে স্তোতা জরেত মর্ত্যঃ। আদিদ্‌ বন্দেত বরুণং বিপা গিরা ধর্তারং বিব্রতানাম্‌।।৬।। (২৮৯) পাহি গা অন্ধসো মদ ইন্দ্রায় মেধ্যাতিথে। যঃ সম্মিশ্লো হর্যোর্যো হিরণ্যয়ঃ।।৭।। (২৯০) উভয়ং শৃণবচ্চ ন ইন্দ্রো অবাগিদং বচঃ। স্ত্রাচ্যা মঘবান্‌ৎ সোমপীতয়ে ধিয়া শবিষ্ঠ আ গমৎ।।৮।। (২৯১) মহে চ ন ত্বাদ্রিবঃ পরা শুল্কায় দীয়সে। ন সহস্রায় নাযুতায় বজ্রিবো ন শতায় শতামঘ।।৯।। (২৯২) বস্যাং ইন্দ্রাসি মে পিতুরুত ভ্রাতুরভুঞ্জতঃ মাতা চ মে ছদয়থঃ সমা বসো বসুত্বনা রাধসে।।১০।।

অনুবাদঃ (২৮৩) তোমাদের মঙ্গলের জন্য তোমরা জরারহিত (অবিনাশী), সংবৎসরচক্রের প্রবর্তক, অপ্রতিহত, ক্ষিপ্রগামী, জয়শীল, যজ্ঞ নির্বাহক, অহিংস, জলবর্ধক ইন্দ্রের পথে চল (=সত্যপথে চল)।। (২৮৪) হে ইন্দ্র, তুমি উদকের দ্বারা সমস্ত হবির প্রভু; আমাদের থেকে দূরে অবস্থিত উদকবহনকারী রশ্মিগণই যেন তোমার সঙ্গে বারবার আনন্দে মত্ত না থাকে। আমাদের সঙ্গে আনন্দে মত্ত হবে বলে, হে ইন্দ্র, তুমি কাছে এস; আমাদের প্রার্থনা শোন।। (২৮৫) যিনি জলরাশি পালনের দ্বারা সকল দ্রব্যকেই সিদ্ধবস্তুতে পরিণত করেন সেই বজ্রধারী সোমরক্ষক ইন্দের উদ্দেশে সোমরস প্রস্তুত কর ও নিবেদন কর; তিনিই প্রীত হয়ে সুখ দান করবেন।। (২৮৬) যিনি বিধ্ননাশক ও সর্বদর্শী সেই ইন্দ্রকে আমরা ডাকি। হে অশেষ ক্ষমতাশালী, অতুলবিত্ত, সৎকর্মা ইন্দ্র, তুমি আমাদের বৃদ্ধির জন্য আমাদের সকল প্রয়াসে থাক।। (২৮৭) হে জ্ঞান-কর্ম-বাক্যরূপ ধনের অধিপতি অশ্বিদ্বয় (=অহোরাত্র অথবা দেশ ও কাল), তোমরা দুজন জ্ঞান-কর্ম-বাক্যের দ্বারা দিবারাত্র আমাদের অনুগ্রহ কর। তোমাদের দুজনের দান যেন কখনও ক্ষয় না হয়, আমাদের দানও যেন কখনও নিঃশেষ না হয়।। (২৮৮) যখন যে সময়ে স্তুতিশীল মানুষ মুক্তহস্তে দানকারী দেবতার উদ্দেশে গান করতে চায় তখনই সে সকল ব্রতকর্মের ধারক বরুণদেবের (=সূর্যের) উদ্দেশে নিবিষ্টচিত্তে গান করুক।। (২৮৯) হে মেধাতিথি যিনি (বৃষ্টিদানের জন্য উদক ও বিদ্যুতের মিশ্রণকর্তা, যিনি হিরণ্যবর্ণ ব্রজধারী সেই হিরণ্যরূপ আনন্দে মত্ত ইন্দ্রের দান অন্ন-ধনকে রক্ষা কর।। (২৯০) ইন্দ্র আমাদের মুখের বাণী ও অন্তরের বাণি শ্রবণ করুন। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অতিদাতা অতিবল ইন্দ্র কর্ম ও প্রজ্ঞাসহায়ে সোমপানের জন্য আসুন।। (২৯১) হে মেঘবিদারণকারী ইন্দ্র, তোমার মহৎ দান শুল্কের (=মূল্যের) বিনিময়ে পাওয়া যায় না, হে বজ্রহস্ত, হে শতধন, শত-সহস্র-অযুত দানের বিনিময়েও নয়।। (২৯২) হে ইন্দ্র, তুমি আমার পিতা ও ভ্রাতা অপেক্ষা অনেক উদার ও ধনসম্পন্ন। হে বসু, তুমি মায়ের মত এবং সংবৎসররূপে আমাকে সর্বসিদ্ধিকর ধনে আচ্ছাদিত কর।।

সপ্তম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।। দেবতা ইন্দ্র (৭ মন্ত্রের দেবতা বহু)।। ছন্দ বৃহতী।। ঋষিঃ ১ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ২।৬।৭। বামদেব গৌতম, ৩ মেধাতিথি ও মেধ্যাতিথি কাণ্ব অথবা বিশ্বামিত্র, ৪ নোধা গৌতম, ৫ মেধাতিথি কাণ্ব (ঋগ্বেদে মেধ্যাতিথি), ৮ শ্রুষ্টিণ্ড কাণ্ব (বালখিল্য); ৯ মেধ্যাতিথি বা মেধাতিথি কাণ্ব, ১০ নৃমেধ আঙ্গিরস।।

মন্ত্রঃ (২৯৩) ইম ইন্দ্রায় সুন্বিরে সোমাসো দধ্যাশিরঃ। তাঁ আ মদায় বজ্রহস্ত পীতয়ে হরিভ্যাং যাহ্যোক আ।।১।। (২৯৪) ইম ইন্দ্র ইন্দ্র মদায় তে সোমাশ্চিকিত্র উক্‌থিনঃ। মধোঃ পপান উপ নো গিরঃ শৃণু রাস্ব স্তোত্রায় গির্বণঃ।।২।। (২৯৫) আ ত্বাতদ্য সবর্দুঘাং হুবে গায়ত্রবেপসম। ইন্দ্রং ধেনুং সুদুঘামন্যামিষমুরুধারামস্কৃতম্‌।।৩।। ন ত্বা বৃহন্তো অদ্রয়ো বরন্ত ইন্দ্র বীডবঃ। যচ্ছিক্ষসি স্তুবতে মাবতে বসু ন কিষ্টদা মিনাতি তে।।৪।। (২৯৭) ক ঈং বেদ সুতে সচা পিবন্তং কদ্‌ বয়ো দধে। অয়ং যঃ পুরো বি ভিনত্যোজসা মন্দানঃ শিপ্র্যন্ধসঃ।।৫।। (২৯৮) যদিন্দ্রো শাসো অব্রতং চ্যাবয়া সদসস্পরি। অস্মাকমংশুং মঘবন্‌ পুরুস্পৃহং বসব্যে অদি বর্হয়।।৬।। (২৯৯) ত্বষ্টা নো দৈব্যং বচঃ পর্জন্যো ব্রহ্মণস্পতিঃ। পুত্রৈর্ভ্রাতৃভি রদিতির্নু পাতু নো দুষ্টরং ত্রামণং বচঃ।।৭।। (৩০০) কদা চন স্তরীরসি নেন্দ্র সশ্চসি দাশুষে। উপোপেনু মঘবন্‌ ভূয় ইন্দু তে দানং দেবস্য পৃচ্যতে।।৮।। (৩০১) যুঙ্‌ক্ষ্বা হি বৃত্রহস্তম হরী ইন্দ্র পরাবতঃ। অর্বাচীনো মঘবন্‌ৎ সোম পীতয় উগ্র ঋম্বেভিরাগহি।।৯।। (৩০২) ত্বামিদা হ্যো নরোহপীপ্যন্‌ বজ্রিন্‌ ভূর্ণয়ঃ। স ইন্দ্র স্তোমবাহস ইহ শ্রুধ্যূপ স্বসরমাগহি।।১০।।

অনুবাদঃ (২৯৩) এই সবল দধিমিশ্রিত সোমরস ইন্দ্রের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। হে বজ্রহস্ত ইন্দ্র, তুমি সেই সোমপানের জন্য আনন্দে মত্ত হয়ে অশ্বরশ্মিগণের সঙ্গে স্বস্থান হতে (অথবা আমাদের গৃহে) এস।। (২৯৪) হে ইন্দ্র, অভিজ্ঞ স্তোতারা তোমার হর্ষের জন্য এই সোমরস প্রস্তুত করেছেন। হে স্তুতিপ্রিয় ইন্দ্র, মধু পান কর, আমাদের স্তোত্র শোন, স্তোতার স্তুতিতে আনন্দশব্দ কর।। (২৯৫) সোমরূপ দুগ্ধের নিষ্কাষণকারী, গায়ত্র-সঙ্গীতে হর্ষান্বিত, ধেনুর মত সুদোহনকারী, বহুধারায় বারিবর্ষণের দ্বারা শোভিত ইন্দ্র তোমাকে আজ আমরা আহ্বান জানাই।। (২৯৬) হে ইন্দ্র, বিশাল ও দৃঢ় পর্বতসকলও তোমাকে বাধা দিতে পারে না; যখন তুমি আমার মত স্তোতাকে ধন দাও তখন কেহ হিংসা করতে পারে না। (২৯৭) অভিষুত সোমপানকারীকে কে-ই বা জানে, কেবা অন্ন ধারণ করে? ইনি সেই (ইন্দ্র পরমাত্মা) যিনি বলসহায়ে দেহপুর ভেদ করে প্রবেশ করেন, যিনি উদকবান ও সোমাখ্য অন্নে পরিতৃপ্ত।। (২৯৮) হে ইন্দ্র তুমি শাসনকর্তা বলে অব্রতকে (=তোমা কর্তৃক প্রবর্তিত কর্মচক্র ব্রতকে যে মানে না) যজ্ঞকর্ম থেকে দূরে নিক্ষেপ করে থাক। হে মঘবা, (আমরা ব্রতধারী) আমাদের বহু কাম্য সোমকে অধিক ধনের জন্য বর্ধিত কর।। (২৯৯) ত্বষ্টা, পর্জন্য এবং ব্রহ্মণপতিদেব আমাদের দিব্যবাণীকে গ্রহণ করুন। আমাদের এই অজেয় রক্ষণীয় স্তোত্রবাক্যের দ্বারা অদীনা অক্ষয়া ঐশীশক্তি মাতা অদিতি আমাদের পুত্র-ভ্রাতাসহ রক্ষা করুন।। (৩০০) হে ইন্দ্র, তুমি ভক্তের প্রতি (=তোমাকে যে হব্যদান করে তার প্রতি) কখনও ক্রুদ্ধ হও না, তুমিও তার সঙ্গে মিলিত হও। হে ধনবান, দেবতা তুমি তোমার ভূরি ভূরি দান ভক্তের কাছে এসে মিলিত হয়।। (৩০১) হে বৃত্রহত্যাকারী ইন্দ্র, তোমার সব হরণকারী অশ্বদুটিকে (=দেশ ও কালকে) একসঙ্গে যুক্ত কর। হে উগ্রবল, হে মঘবা, দূরদেশ থেকে শোভন মরুদ্‌গণের সঙ্গে (=প্রাণবায়ুর সঙ্গে) সোমপানের জন্য আমাদের কাছে এস।। (৩০২) তোমাকে, হে বজ্রধারী ইন্দ্র, কর্মব্যস্ত যজ্ঞনেতারা (অথবা নৃত্যশালী রশ্মিগণ) কাল ও আজ সোমপান করিয়েছেন। সেই ইন্দ্র সামগানকারীদের গান শুনুন তাঁদের গৃহে আসুন।।

অষ্টম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।। দেবতা ১ ঊষা; অশ্বিদ্বয়; ৪-১০ ইন্দ্র (ঋগ্বেদে ৪ মন্ত্রের দেবতা অশ্বিদ্বয়)।। ছন্দ বৃহতী।। ঋষিঃ ১।২।৭।।৮ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ৩ বৈবস্বত অশ্বিদ্বয়, ৪ প্রস্কন্ব কাণ্ব, ৫ মেধাতিথি-মেধ্যাতিথি কাণ্ব, দেবাতিথি কাণ্ব, ৯ নৃমেধ আঙ্গিরস, ১০ নোধা গৌতম।।

মন্ত্রঃ (৩০৩) প্রত্যু আদর্শ্যায়ত্যুতচ্ছন্তী দুহিতা দিবঃ। অপো মহী বৃণুতে চক্ষুষা তমো জ্যোতিস্কৃণোতি সূনরী।।১।। (৩০৪) ইমা ঊ বাং দিবিষ্টয় উস্রা হবন্তে অশ্বিনা। অয়ং হাষ্মহেবহবসে শচীবসু বিশং বিশং হি গচ্ছথঃ।।২।। (৩০৫) কুষ্ঠঃ কো বামশ্বিনা তপানো দেবা মর্ত্যঃ। ঘ্নতা বামশ্ময়া ক্ষপমাণোংশুনেত্থমু আদ্বন্যথা।।৩।। (৩০৬) অয়ং বাং মধুমত্তমঃ সুতঃ সোমো দিবিষ্টিষু। তমশ্বিনা পিবভং তিরো অহ্ন্যং ধত্তং রত্নানি দাশ্বষে।।৪।। (৩০৭) আ ত্বা সোমস্য গল্‌দয়া সদা যাচন্নহং জ্যা। ভূর্ণিং মৃগং ন সবনেষু চুক্রুধং ক ঈশানং ন যাচিষৎ।।৫।। (৩০৮) অধ্বর্যো দ্রাবয়া ত্বং সোমমিন্দ্রঃ পিপাসতি। উপো নূনং যুযুজে বৃষণা হরী আ চ জগামি বৃত্রহা।।৬।। (৩০৯) অভীষতস্তদা ভরেন্দ্র জ্যায়ঃ কনীয়সঃ। পুরূবসুর্হি মঘবন্‌ বভুবিত্থ ভরভরে চ হব্যঃ।।৭।। (৩১০) যদিন্দ্র যাবতস্তুমেতাবদহমীশীয়। স্তোতারমিদ্‌ দধিষে রদাবসো ন পাপত্বায় রংসিষম্‌।।৮।। (৩১১) ত্বমিন্দ্র প্রতূর্তিস্বভি বিশ্বা অসি স্পৃধঃ। অশস্তিহা জনিতা বৃত্রতূরসি ত্বং তূর্য তরুষ্যতঃ।।৯।। প্র যো রিরিক্ষ ওজসা দিবঃ সদ্যেভ্যস্পরি। ন ত্বা বিব্যাচ রজ ইন্দ্র পার্থিবমতি বিশ্বং ববক্ষিথ।।১০।।

অনুবাদঃ (৩০৩) অন্ধকার নাশ করতে করতে দ্যুলোকের দুহিতা আসছেন। তিনি সকলকে দেখা দিলেন। ঊষা জ্ঞানলোকের দ্বারা তমোনাশ করে জ্যোতি বিস্তার করেন; আর বিপুল জলরাশিকে বরণ করেন।। (৩০৪) হে অশ্বিদ্বয়, এই দ্যুলোকগামী রশ্মিগণ তোমাদের দুজনকেই আহ্বান করে। কর্ম, প্রজ্ঞা ও বাক্যরূপ সম্পদের অধিকারী, হে অশ্বিদ্বয় তোমরা প্রতি মানুষের গৃহেই গমন করে থাক; এরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন তোমাদের দুজনকে আমি আমার রক্ষণের জন্য আহ্বান করি। [অশ্বিদ্বয়=দেশ ও কাল। কালই অশ্ব বা রশ্মি যা সব কিছু বহন করে (অথর্ববেদ)। রশ্মিগণ দেশ ও কালের সঙ্গে যুক্ত (-অশ্বিদ্বয়ের সঙ্গে যুক্ত)। এই দেশ ও কালের মধ্যেই কর্ম, প্রজ্ঞা ও বাক্য নিহিত থাকে; ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান দেশ ও কালের অধীন]।। (৩০৫) হে অশ্বিদ্বয়, হে দেবদ্বয়, পৃথিবীতে অবস্থিত কৃচ্ছ্রতাসাধনে রত কোন্‌ মানুষ তোমাদের মত তপস্যাকারী? কৃচ্ছ্রতাসাধক যেমন অভিমত অন্ন ভোজনের দ্বারা তৃপ্ত হন, তোমরাও সেইভাবে রশ্মিদ্বারা তাড়িত হয়ে রশ্মিদ্বারাই ব্যাপ্ত হও (=তৃপ্ত হও)।। (৩০৬) স্বর্গলোক কামনা করে তোমাদের উদ্দেশে এই যে উত্তম মধুময় সোম প্রস্তুত হয়েছে, হে অশ্বিদ্বয়, গতকালের প্রস্তুত (-অশ্বিদ্বয়ের যাগ ভোররাত্রে শেষ হয়, এইজন্য পূর্বদিনে প্রস্তুত সোম অশ্বিদ্বয়ের উদ্দেশে নিবেদিত হয় থাকে) সেই উত্তম সোমকে পান কর আর সোমদানকারীর (=যজমানের) জন্য রমণীয় ধন ধারণ কর।। জয় সম্পাদনকারী সোমরসের ধারা নিবেদন করে সর্বদাই আমি তোমাকে ডাকি। বন্যপশুর মত ভ্রমণশীল প্রচণ্ড সেই ঈশানের কাছে (=সূর্যের কাছে) তিনবেলা (সবনেষু=প্রাতঃ, মধ্যাহ্ন ও সায়াহ্ন তিনবেলার যজ্ঞকর্ম) কে না যাঙ্ঞা করে? (৩০৮) ইন্দ্র সোমপানের ইচ্ছা করছেন; হে অধ্বর্যু (=যিনি যজ্ঞকর্ম সম্পন্ন করান) শীঘ্র কর। বৃত্রহা (=মেঘবিদারণকারী ইন্দ্র) এসেছেন, আর নিজের সঙ্গে যুক্ত করেছেন বর্ষণশীল দুই অশ্বকে (রসহরণকারী রশ্মিকে)।। (৩০৯) হে ইন্দ্র, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ রশ্মিসকলকে আন; সকলদিকে তাদের ব্যাপ্ত কর। হে বহুধন, তুমি চিরদিনই বহু ঐশ্বর্যশালী এবং প্রচুর হব্যেরও ঈশ্বর।। (৩১০) হে ইন্দ্র, তোমার যত ধনসম্পদ আছে যদি তা আমার থাকতো তবে আমি স্তোতাকে (=ঈশ্বরভক্তকে) দান করতাম; আপাত রমণীয় পাপকর্মের জন্য ধন ব্যয় করতাম না।। (৩১১) হে ইন্দ্র, তুমি প্রকৃষ্ট্‌ গতিকে বিশ্বের সকল স্পর্ধমানকে অভিভূত কর; তুমি কোপনস্বভাব ও অজ্ঞানরূপ অন্ধকার নাশ করে থাক; তুমি বিশ্বের উৎপাদয়িতা, ত্রাণকর্তা। [বৃত্র=মেঘের শরীর। তা বিদীর্ণ করলেই জীবের প্রাণধন জল পাওয়া যায় বলে; বৃত্রের সঙ্গে অজ্ঞান অন্ধকারের তুলনা করা হয়ে থাকে]।। (৩১২) হে ইন্দ্র, যে তুমি দ্যুলোকে আকাশের সকল স্তরের ওপরে থেকে জ্যোতির দ্বারা ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছ সেই তোমাকে পার্থিব ধন ব্যাপ্ত করতে পারে না; তুমি বিশ্বকে অতিক্রম করে সকলভার বহন করে চলেছ।।

নবম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতাঃ ইন্দ্র (ঋগ্বেদে ৫ মন্তের দেবতা ইন্দ্রবৈকুণ্ঠ; ৮ মন্ত্রের দেবতা বেন)।। ছন্দ ত্রিষ্টুপ্‌।। ঋষিঃ ১।২।৬। বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ৩ গাতু আত্রেয় অথবা গৃৎসমদ্‌ ৪ পৃথু বৈন্য, ৫ সপ্তগু আঙ্গিরস, গৌরিবীতি শাক্ত্য, ৮ বেন ভার্গব, ৯ বৃহস্পতি বা নকুল, ১০ সুহোত্র ভারদ্বাজ।।

মন্ত্রঃ (৩১৩) অসাবি দেবং গোঋজীকমন্ধো ন্যস্মিন্নিন্দ্রো জনুষেমুবোচ। বোধামসি ত্বা হর্যশ্ব যজ্ঞৈর্বোধা ন স্তোমমন্ধসো মদেষু।।১।। (৩১৪) যোনিষ্ট ইন্দ্র সদনে অকারি তমা নৃভিঃ পুরূহূত প্র যাহি। অসো যথা নোহবিতা বৃধশ্চিদ্‌দদো বসূনি মমদশ্চ সোমৈঃ।।২।। (৩১৫) অদর্দরুৎসমসৃজো বি খানি ত্বমর্ণবান্‌ বদ্ধধানাঁ অরম্‌ণাঃ। মহান্তমিন্দ্র পর্বতং বি যদ্‌ বঃ সৃজদ্‌ধারা অব যদ্‌ দানবান্‌ হন্‌।।৩।। (৩১৬) সুম্বাণাস ইন্দ্র স্তুমসি ত্বা সনিষ্যন্তমিন্দ্র তুবিনৃম্‌ণ বাজম্‌। আ নো ভর সুবিতং যস্য কোনা তনা ত্মনা সহ্যামত্বোতাঃ।।৪।। (৩১৭) জগৃহ্‌মা তে দক্ষিণমিন্দ্র হস্তং বসূয়বো বসুপতে বসূনাম্‌। বিদ্মা হি ত্বা গোপতিং শূর গোনামস্মভ্যং চিত্রং বৃষণং রয়িং দাঃ।।৫।। (৩১৮) ইন্দ্রং নরো নেমধিতা হবন্তে যৎপার্যা যুনজতে ধিয়স্তাঃ।। শূরো নৃষাতা শ্রবসশ্চ কাম আ গোমতি ব্রজে ভজা ত্বং নঃ।।৬।। (৩১৯) বয়ঃ সুপর্ণা উপ সেদুরিন্দ্রং প্রিয়মেধা ঋষয়ো নাধমানাঃপ ধ্বান্তমূর্ণুহি পূর্ধি চক্ষুর্মুমুগ্ধতস্মান্‌ নিধয়েব বদ্ধান্‌।।৭।। (৩২০) নাকে সুপর্ণমুপ যৎ পতন্তং হৃদা বেনন্তো অভ্যচক্ষত ত্বা। হিরণ্যপক্ষং বরুণস্য দূতং যমস্য যোনৌ শকুনং ভুরণ্যুম্‌।।৮।। ব্রহ্ম জজ্ঞানং প্রথমং পুরস্তাদ্‌বি সীমতঃ সুরুচো বেন আবঃ। স বুধ্ন্যা উপমা অস্য বিষ্ঠাঃ সতশ্চ যোনিমসচশ্চ বিবঃ।।৯।। (৩২২) অপূর্ব্যা পুরুতমান্যস্মৈ মহে বীরায় তবসে তুরায়। বিরপ্‌শিনে বজ্রিণে শন্তমানি বচাংস্যস্মৈ স্থবিরায় তক্ষুঃ।।১০।।

অনুবাদঃ (৩১৩) দীপ্ত ঋজু রশ্মির সঙ্গে জল মিশ্রিত হলে তা হতে ইন্দ্র (=বজ্র) উৎপন্ন হন [রশ্মি জল আকর্ষণ করে। তা হতে মেঘের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। বিদ্যুৎ বা বজ্রই ইন্দ্র]। হে হর্যশ্ব (=রসহরণকারী রশ্মির অধিপতি), তোমাকে যজ্ঞের দ্বারা প্রবুদ্ধ করি; সোমরসে মত্ত হয়ে (=বারিরাশি প্রাপ্ত হয়ে) আমাদের স্তোত্র হৃদয়ঙ্গম কর।। (৪১৩) হে ইন্দ্র, তুমি জলের দ্বারা সম্পাদিত হয়ে জলমধ্যে অবস্থান কর; সেই তুমি বহুমানুষের দ্বারা প্রকৃষ্টরূপে আহূত, তুমি এস। যেহেতু তুমি আমাদের রক্ষক ও বর্ধক সুতরাং সোমের দ্বারা মত্ত হয়ে আমাদের ধন দান কর।। (৩১৫) হে ইন্দ্র, তুমি জলের উৎস মেঘকে বিদীর্ণ করেছ, জলের নির্গমন দ্বারসমূহ উদ্‌ঘাটিত করেছ, জলভারে পীড়িত মেঘকে উন্মুক্ত করেছ। তুমি অতীতেও বিপুলাকৃতি মেঘকে উদ্‌ঘাটিত করে জলধারা পাতিত করেছ, জলপ্রদাতা মেঘকে নিহত করেছ।। (৩১৬) প্রচুর অন্ন-বলের ঈশ্বর হে ইন্দ্র, ধনলাভেচ্ছু সোমপ্রস্তুতকারী আমরা তোমাকে বাক্‌-অন্ন বলের জন্য স্তব করি। আমাদের জন্য যে কর্ম তোমার নিজের অভিপ্রেত তা তুমি দাও; তোমার দ্বারা রক্ষিত হয়ে আমরা তা লাভ করে প্রীত হবো।। (৩১৭) বসুরূপ সম্পদের অধিপতি হে ইন্দ্র, বসুরূপ ধন কামনা করে উৎসাহযুক্ত হয়ে তোমার দক্ষিণহস্ত ধারণ করলাম। [দক্ষিণহস্ত=উৎসাহযুক্ত (নিরুক্ত)]। হে শূর, তুমি রশ্মিরূপ গোধনের স্বামী, তোমাকে আমরা জানি। কিরণরাশির সহায়ে বিচিত্র বর্ষণকারী ধনসমূহ তুমি আমাদের জন্য প্রদান কর। [বৃষ্টিধন সকল সম্পদের কারণ]।। (৩১৮) মানুষেরা যখন জীবনসংগ্রামে অন্নের জন্য মনোযোগ সহকারে এবং সাফল্যের সঙ্গে নিজেকে নিযুক্ত করে তখন তারা ইন্দ্রকেই ডাকে। (হে ইন্দ্র) তুমি বীর; মানুষের জন্য উজ্জ্বল ক্ষিপ্রগতিযুক্ত হয়ে বিদ্যুৎপূর্ণ মেঘে অবস্থিত ধনসম্পদকে (=বারিরাশিকে) আমাদের মধ্যে বিভাগ করে দাও।। (৩১৯) গমনশীল, যজ্ঞপ্রিয়, দর্শনকারী আদিত্য রশ্মিসমূহ যাচ্‌ঞাপরায়ণ হয়ে ইন্দ্রের নিকট (=সূর্যের নিকট) উপস্থিত হয়ে পার্থনা করলো হে ইন্দ্র, অন্ধকার দূর কর, জ্ঞান প্রসারিত কর (অথবা চক্ষু আলোকপূর্ণ কর), পাশবদ্ধের মত অবস্থিত আমাদের মুক্ত কর।। (৩২০) হে বেন (=হে ইন্দ্র), যখন তুমি দ্যুলোকে উড়ন্ত পাখীর মত অনস্থান কর তখন তোমাকে সকলে এইরূপেই দর্শন করে হৃষ্ট হয়। তোমার ডানা সুবর্ণময় তুমি বরুণের দূত, দ্যুলোকের সংযোগকারী শক্তির আধার, অতি উচ্চে শকুনের মত অবস্থান করেও জগতের ভরণপোষণকারী।। (৩২১) ব্রহ্ম জাত হয়ে প্রথমে পূর্বদিকের সীমায় সুদীপ্তিশালী বেনকে (=সূর্যকে) ধারণ করলেন। সেই ব্রহ্মের উপমা অন্তরিক্ষ (=ব্রহ্ম আকাশের মতই অনন্ত), এঁর অবস্থান বিবিধপ্রকার, ইনি ব্যক্ত ও অব্যক্ত জগতের কারণস্বরূপ।। (৩২২) যাঁর তুল্য শক্তিমান পূর্বে দেখা যায় নি, যিনি সর্বাপেক্ষা শক্তিমান, সেই শীঘ্রগতিযুক্ত, স্তবার্হ, শব্দকারী, বজ্রযুক্ত, সুখদায়ক স্থিরপ্রজ্ঞ, মহান বীর ইন্দ্রের উদ্দেশে বাক্যের দ্বারা স্তবমালা রচনা করি।।

দশম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ৯।। দেবতা ইন্দ্র।। ছন্দ ১-৫, ৭-৯ ত্রিষ্টুপ্‌, ৬ বিরাট।। ঋষিঃ ১।২।৪ দ্যুতান মারুত (ঋগ্বেদে তিরশ্চী আঙ্গিরস), ৩ বৃহদুক্‌থ, বামদেব্য, ৫ নামদেব গৌতম, ৬।৮ বসিষ্ট মৈত্রাবরুণি, ৭ গাথি বিশ্বামিত্র, ৯ গৌরিবীতি শাক্য।।

মন্ত্রঃ (৩২৩) অব দ্রপ্‌সো অংশুমতীমতিষ্ঠদীয়ানঃ কৃষ্ণো দশভিঃ সহস্রৈঃ। আবত্তমিন্দ্রঃ শচ্যা ধমন্তমপ স্নীহিতিং নৃমণা অধদ্রাঃ।।১।। (৩২৪) বৃত্রস্য ত্বা শ্বসথাদীষমাণা বিশ্বে দেবা অজহুর্ষে সখায়ঃ। মরুদ্ভিরিন্দ্র সখ্যং তে অস্তথেমা বিশ্বাঃ  পৃতনা জয়াসি।।২।। (৩২৫) বিধুং দদ্রাণং সমনে বহূনাং যূবানং সন্তং পলিতো জগার। দেবস্য পশ্য কাব্যং মহিত্বাদ্যা মমার স হ্যঃ সমান।।৩।। (৩২৬) ত্বং হ ত্যৎ সপ্তভ্যো জায়মানো শত্রুরিন্দ্র। গূল্‌হে দ্যাবাপৃথিবী অন্দবিন্দো বিভুমদ্‌ভ্যো ভুবনেভ্যো রণং ধাঃ।।৪।। (৩২৭) মেদিং ন ত্বা বজ্রিণং পুরুধস্মানং বৃষভং স্থিরপস্নুম্‌। করোষ্যর্ষস্তরুষীর্দুবস্যুরিন্দ্র দ্যুক্ষং বৃত্রহণোং গৃণীষে।।৫।। (৩২৮) প্র বো মহে মহে বৃধে ভরধ্বং প্রচেতসে প্র সুমতিং কৃণুধ্বম্‌। বিশঃ পূর্বীঃ প্র চর চর্ষণিপ্রাঃ।।৬।। (৩২৯) শূনং হুবেম মঘবানমিন্দ্রমিস্মিন্‌ ভরে বৃতমং বাজসাতৌ। শৃন্বন্তমুগ্রমূতয়ে সমৎসু ঘ্নন্তং বৃত্রাণি সঞ্জিতং ধনানি।।৭।। (৩৩০) উদু ব্রহ্মাণ্যেরত অবস্যেন্দ্রং সমর্ষে মহয়া বসিষ্ঠ। আ যো বিস্বানি শ্রবসা ততানোপশ্রোতা ম ঈবতো বচাংসি।।৮।। (৩৩১) চক্রং যদস্যাপ্‌স্বা নিষত্তমুতো তদস্মৈ মধ্বিচ্চচ্ছদ্যাৎ। পৃথিব্যামতিষিতং যদুধঃ পয়ো গোম্বদধা ঔষধীষু।।৯।।

অনুবাদঃ (৩২৩) সহস্র সহস্র গমনশীল কৃষ্ণ জলবিন্দু (=কালো মেঘ) অংশুমতী নদীকে ঘিরে (অথবা কিরণরাশিকে ঘিরে) ছিল। ইন্দ্র প্রজ্ঞাযুক্ত বলকর্মের দ্বারা সেই মেঘপুঞ্জ থেকে জলরাশি নির্গমনের ব্যবস্থা করে নিম্নাভিমুখে প্রবাহিত করলেন।। (৩২৪) হে ইন্দ্র, যে বিশ্বদেবগণ (=কিরণরাশি) তোমার সখা ছিলেন তাঁরা বৃত্রের (=মেঘের) নিশ্বাসে ভীত হয়ে তোমাকে ত্যাগ করে চলে গেলেন (অর্থাৎ মেঘের আকাশ ছেয়ে গেল বলে কিরণরাশি আর দেখা গেল না)। তখন মরুদ্‌গণের সঙ্গে (=বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে) তোমার সখ্যতা হোল। আর তাতেই তুমি সমস্ত শত্রু জয় করলে (অর্থাৎ বায়ুর দ্বারা তাড়িত হয় মেঘেরা পরাজিত হোল)।। (৩২৫) বহুর সঙ্গে মিলিতভাবে থেকেও একাকী ভ্রমণশীল আদিত্য সর্বগ্রাস করলেন (=অস্তগমনের দ্বারা অন্ধকার সৃষ্টি করলেন); দেবতার অতিক্রান্ত দর্শনের মাহাত্ম্য লক্ষ্য কর; এখন তিনি মৃত হলেন (=অস্তগমন করলেন), যে কাল অতিক্রান্ত হোল তখন তিনি সমস্ত অধিকার করে ছিলেন।। (৩২৬) হে ইন্দ্র, তুমি জন্মলাভ করে (=বিদ্যুৎরূপে জাত হয়ে) সপ্তলোকে অবস্থিত সকল শত্রুর (=মেঘের বা অন্ধকাররূপ শত্রুর) শত্রু (=শাতয়িতা) হলে; তুমি অন্ধকারাবৃত দ্যাব্যাপৃথিবীকে আলোকে নিয়ে এলে আর বিভুময় সকল ভুবনের জন্য আনন্দকে ধারণ করলে।। (৩২৭) হে ইন্দ্র, গর্জনকারী বজ্রধারী সদাকরণশীল প্রজ্ঞাবান বর্ষণকারী সদা অন্নদাতা দ্যুলোকবাসী বৃত্রহন্তা সকল ইন্দ্রিয়ের ঈশ্বর ত্রাণকর্তা শ্রদ্ধাবান তোমাকে স্তব করি।। (৩২৮) তোমাদের মঙ্গলের জন্য তোমরা মহান ইন্দ্রের উদ্দেশে স্তুতি উচ্চারণ কর, তাঁর বর্ধনের জন্য সোম সম্পাদন কর; প্রকৃষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন কল্যাণবুদ্ধিযুক্ত ইন্দ্রকে সুষ্ঠুরূপে স্তব কর। তিনি চিরকাল মানুষের প্রিয়, তাঁকেই চিন্তা কর।। (৩২৯) অন্নের নিমিত্ত সংগ্রামে আমাদের রক্ষার নিমিত্ত যিনি সকল দিক্‌ থেকে শুনতে পান, যিনি বৃত্রমেঘবধরূপ সংগ্রামে জলরূপ ধন আহরণে সদাজয়শীল, যিনি সদা ক্ষিপ্রগতি, স্বীয় কর্মে উগ্র, নৃশ্রেষ্ঠ ধনবান সেই ইন্দ্রকে আমরা আহ্বান করি।। (৩৩০) হে বসিষ্ঠ, এই যজ্ঞে উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে ইন্দ্রের প্রীতি কামনায় মহান স্তোত্রের দ্বারা ইন্দ্রকে স্তব কর। যিনি বিশ্বের ধনকে ব্যাপ্ত করেন তাঁর প্রতি গমনশীল আমার এই স্তুতিবাক্য তিনি শ্রবণ করুন। (৩৩১) অন্তরিক্ষে জলরাশির মধ্যে এঁর (ইন্দ্রের) যে চক্র নিহিত আছে সেই চক্রের দ্বারাই জলরূপ মধুভাণ্ডার ছেদন হয়, আর সেই জমাটবাঁধা জলরাশিকে ছেদন করে পৃথিবীতে গোদুগ্ধরূপে ওষধীরূপে তিনি ধারণ করেন।

একাদশ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবত্য ১ তার্ক্ষ্য, ২-৬।৮।১০ ইন্দ্র, ৭ পর্বত ও ইন্দ্র, ৯ যম বৈবস্বত।। ছন্দ ত্রিষ্টুপ।। ঋষিঃ ১ অরিষ্টেনেমি তার্ক্ষ্য, ২ ভরদ্বাজ (ঋগ্বেদে গর্গ ভারদ্বাজ), ৩ বিমদ ঐন্দ্র, বসুকৃৎ বা বাসুক (ঋগ্বেদে প্রাজাপত্য), ৪।৫।৯ বামদেব গৌতম (ঋগ্বেদে ৯ যম বৈবস্বত), ৭ গাথি বিশ্বামিত্র, ৮ রেণু বৈশ্বামিত্র, ১০ গোতম রাহুগণ।।

মন্ত্রঃ (৩৩২) ত্যমু ষু বাজিনং দেবজূতং সহোবানংতরুতারংরথানাম্‌। অরিষ্টনেমিং পৃতনাজমাশুং স্বস্তয়ে তার্ক্ষ্যমিহা হুবেম।।১।। (৩৩৩) ত্রাতারমিন্দ্রমবিতারমিন্দ্রং হবেহবে সুহবঃ শুরমিন্দ্রম্‌। হবে নু শত্রুং পুরুহুতমিন্দ্রমিদং হবির্মঘবা  বেত্বিন্দ্রঃ।।২।। (৩৩৪) যজামহ ইন্দ্রং বজ্রদক্ষিণং হরীণাং রথ্যাংতবিব্রতানাম্‌। প্র শ্মশ্রুভির্দোধুবদূর্ধ্বয়া ভূবদ্‌ বি সেনাভির্ভয়মানো বি রাধসা।।৩।। (৩৩৫) সত্রাহণং দাধৃষিং তুম্রমিন্দ্রং মহামপারং বৃষভং সুবজ্রম্‌। হন্তা যো বৃত্রং সনিতোত বাজং দাতা মঘাত্রি মঘবা সূরাধাঃ।।৪।। (৩৩৬) যো নো বনুয্যন্নভিদাতি মর্ত ঊগণা বা মন্যমানস্তুরো বা। ক্ষিধী যুধা শবসা বা তমিন্দ্রাভী ষাম বৃষমণস্তোতাঃ।।৫।। (৩৩৭) যং বৃত্রেষু ক্ষিতয় স্পর্ধমানা যং যুক্তেষু তুরয়ন্তো হবন্তে। যং শূরসাতৌ যমপামুপজ্‌মন্‌ যং বিপ্রাসো বাজয়ন্তে স ইন্দ্রঃ।।৬।। (৩৩৮) ইন্দ্রাপর্বতা বৃহতা রথেন বামীরিষ আবহতং সুবীরাঃ। বীতং হব্যান্যধ্বরেষু দেবা বর্ধেথাং গীর্ভিরিলয়া মদন্তা।।৭।। (৩৩৯) ইন্দ্রায় গিরো অনিশিতসর্গা অপঃ প্রৈরয়ৎ সগরস্য বুধ্নাৎ। যো অক্ষেণেব চক্রিয়ৌ শচীভির্বিষ্বক্তস্তম্ভ পৃথিবীমৃতদ্যাম্‌।।৮।। (৩৪০) আ ত্বা সখায়ঃ সখ্যা ববৃত্যুস্তিরঃ পুরু চিদর্ণবাঁ জগম্যাঃ। পিতুর্নপাতমাদধীত বেধা অস্মিন্‌ ক্ষয়ে প্রতরাং দীধ্যানঃ।।৯।। (৩৪১) কো অদ্য যুঙ্ক্তে ধুরি গা ঋতস্য শিমীবতো ভামিনো দুর্হৃণায়ুন্‌। আসন্নেষামপ্‌সুবাহো ময়োভূন্য এষায় ভৃত্রামৃণধৎস জীবাৎ।।১০।।

অনুবাদঃ (৩৩২) যিনি প্রভূত অন্নবলের অধিকারী, দেবগণের সঙ্গে প্রীতিসম্পন্ন, বলবান্‌, গতিশীল পদার্থসমূহের পরিচালক, অপ্রতিহতবজ্রযুক্ত, সংগ্রামে জয়শীল, শীঘ্রগতিসম্পন্ন সেই অন্তরিক্ষনিবাসী জলপ্রাদানকারী দেবতাকে (=তার্ক্ষ্য=সূর্য) আমাদের কল্যাণের জন্য এই যজ্ঞে আহ্বান করছি। (৩৩৩) যিনি ত্রাণকারী ও অভীষ্টপূরণকারী, যিনি সহজেই প্রতি যজ্ঞকর্মে আহ্বানযোগ্য সেই বীর ইন্দ্রকে আহ্বান করি। বহুজনের দ্বারা আহূত অতিধনদাতা ইন্দ্র দেবতা আমাদের উৎসর্গীকৃত এই হবি গ্রহন করুন। (৩৩৪) বিবিধপ্রকার কর্মের সহিত সম্বন্ধিত সকল বস্তুর হরণকারী রশ্মিসমূহকে যিনি নিজ গমন্‌রথের সহিত যুক্ত করেন, যাঁর রশ্মিসমূহ কম্পমান শ্মশ্রুর মত এবং যিনি সর্বসিদ্ধিকর ধনদানের জন্য নিজবলের দ্বারা বিপক্ষকে ভীতিগ্রস্ত করে ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন, সেই দক্ষিণহস্তে বজ্রধারণকারী ইন্দ্রকে ভজনা করি।। (৩৩৫) শত্রুনাশক, দূরাধর্ষ, মহাবল, সীমাহীন, বর্ষণকারী, সুবজ্র ইন্দ্রকে স্তব করি। এই সেই ইন্দ্র যিনি ধনসম্পদের জন্য বৃত্রকে হনন করেন এবং অন্নবল ও মহাধনের অতিদাতা।। (৩৩৬) যে মানুষ নিজকে বলবান ও ক্ষিপ্রগতিযুক্ত মনে করে, আমাদের হিংসা করবার জন্য আমাদের প্রতি ধাবিত হয়, তাকে হে বলবান, ইন্দ্র, তোমার দ্বারা রক্ষিত হয়ে মনুষ্যবলে যুক্ত হয়ে যেন অভিভূত করতে পারি।। (৩৩৭) শত্রুর দ্বারা বেষ্টিত হয়ে শত্রুকে পরাজিত করার ইচ্ছা করে সতর্ক ক্ষিপ্র মানুষেরা যাঁকে ভজনা করে, জ্ঞানবানেরা যাঁকে বলের জন্য, জলের জন্য এবং অন্নের জন্য ভজনা করেন তিনিই ইন্দ্র।। (৩৩৮) হে ইন্দ্র ও মেঘদেবতা (=পর্বত), তোমরা দুজন মহান্‌ রথে সুবীর অন্ন আন। হে দেবদ্বয়, সকল যজ্ঞে হবি ও স্তুতির দ্বারা পূজিত হয়ে হর্ষ ও আনন্দ লাভ করে বর্ধিত হও। (৩৩৯) ইন্দ্রের উদ্দেশে যে বিরামহীন স্তুতি করা হয়েছে তার ফলে অন্তরিক্ষে অবস্থিত বারিরাশি থেকে ইন্দ্র জল সমূহকে প্রেরণ করলেন। (ইনিই সেই ইন্দ্র যিনি) অক্ষ যেমন চক্রকে ধারন করে, তেমনি কর্মসমূহের দ্বারা পৃথিবী ও দ্যুলোকেরূপ চক্রকে স্তম্ভিত করে রেখেছেন। (৩৪০) সখাগণ তোমাকে সখ্যতা প্রাপ্ত হয়ে আকাশে বিচরণশীল বিস্তীর্ণ মেঘরাশিকেই প্রাপ্ত হলেন; (হে সখাগণ) জেনে রাখ অন্ন হতেই সন্তান (বা বীজ) জাত হয়; এবং এই পৃথিবীতে ভবিষ্যতে এইভাবেই চিন্তা করব। (৩৪১) সত্যের কর্মের ও ঔজ্জ্বল্যের প্রতীক ইন্দ্রের দূরাধর্ষ গোসমূহকে (=উজ্জ্বল) রশ্মিসমূহকে আজ কে জোয়ালে জুড়বে? জলরাশির পরিচালক জীবের সুখ ও পুষ্টিকারক রশ্মিগণের কর্মকে যিনি জানেন তিনি দীর্ঘজীবী হয়ে আত্মগতি লাভ করেন।।

দ্বাদশ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।। দেবতা ইন্দ্র।। ছন্দ অনুষ্টুপ্‌।। ঋষি ১ মধুচ্ছন্দা বৈশ্বামিত্র, ২ জেতা মাধুচ্ছন্দস, ৩।৬। গৌতম রাহূগণ, ৪ অত্রি ভৌম, ৫।৮ তিরশ্চী আঙ্গিরস, ৭ নীপাতিথি কাণ্ব, ৯ বিশ্বামিত্র গাথিন, ১০ শংযু বার্হস্পত্য অথবা তিরশ্চী আঙ্গিরস।।

মন্ত্রঃ (৩৪২) গায়ন্তি ত্বা গায়ত্রিণোহর্চন্ত্যর্কমর্কিণঃ। ব্রহ্মাণস্তা শতক্রতু উদ্‌বংশমিব যেমিরে।।১।। (৩৪৩) ইন্দ্রং বিশ্বা অবীবৃধন্‌ৎসমুদ্রব্যচসং গিরঃ। রথীতমং রথীনাং বাজানাং সৎপতিং পতিম্‌।।২।। (৩৪৪) ইমিমিন্দ্র সুতং পিব জ্যেষ্ঠমমর্ত্যং মদম্‌। শুক্রস্য ত্বাভ্যক্ষরন্‌ ধারা ঋতস্য সাদনে।।৩।। (৩৪৫) যদিন্দ্র চিত্র ম ইহ নাস্তি ত্বাদাতমিদ্রিবঃ। রাধস্তন্নো বিদদ্বস উভয়া হস্ত্যাভর।।৪।। (৩৪৬) শ্রুধী হবং তিরশ্চ্যা ইন্দ্র যস্তা সপর্যতি।। সুবীর্যস্য গোমতো রায়স্পূর্ধি মহাঁ অসি।।৫।। (৩৪৭) অসাবি সোম ইন্দ্র তে শবিষ্ঠ ধৃষ্ণবা গহি। আ ত্বা পৃণক্‌ত্বিন্দ্রিয়ং রজঃ সূর্যো ন রশ্মিভিঃ।।৬।। (৩৪৮) এন্দ্র যাহি হরিভিরুপ কন্বস্য সুষ্টুতিম। দিবো অমুষ্য শাসতো দিবং যয দিবাবসো।।৭।। (৩৪৯) আ ত্বা গিরো রথীরিবাস্থঃ সুতেষে গির্বণঃ। অভি ত্বা সমনূষত গাবো বৎসং ন ধেনবঃ।।৮।। (৩৫০) এতো ন্বিন্দ্রং স্তবাম শুদ্ধং সুদ্ধেন সামনা শুদ্ধৈরুক্‌থৈর্বাবৃধ্বাংসং শুদ্ধৈরাশীর্বাণ্‌ মমত্তু।।৯।। (৩৫১) যো রয়িং বো রয়িন্তমো যো দ্যুম্নৈর্দ্যুম্নবত্তমঃ। সোমঃ সূতঃ স ইন্দ্র তেহস্তি স্বধাপতে মদঃ।।১০।।

অনুবাদঃ (৩৪২) (লোকে যেমন সুকর্মের দ্বারা নিজ বংশকে উন্নত রাখেন সেইরূপ) হে শতক্রতু (=শতকর্মা) ইন্দ্র, সামগানকারীরা তোমার উদ্দেশে গান করেন, হোতারা তোমাকে অর্চনা করেন, ব্রহ্মা প্রভৃতি ঋত্বিক্‌গণ (বেদমন্ত্র পাঠের দ্বারা) বংশের ন্যায় তোমাকে উন্নত করেন।। (৩৪৩) যিনি আকাশের মত সর্বব্যাপী, যিনি রথীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রথী, যিনি অন্ন ও সকল জীবের রক্ষক সেই ইন্দ্রকে সকল স্তবস্তুতি উজ্জ্বলরূপে প্রকাশিত করে। (৩৪৪) হে ইন্দ্র, এই শ্রেষ্ঠ হর্ষজনক অমৃত সোম পান কর; জলের গৃহে (=অন্তরিক্ষে) উজ্জ্বল এই সোমধারা তোমার উদ্দেশেই প্রবাহিত হচ্ছে।। (৩৪৫) হে ইন্দ্র, যে কাম্য পূজনীয় ধন আছে (অথবা যে কাম্য ধন আমার গৃহে নেই) সেই ধন আমাদের দেওয়া তোমার কর্তব্য। হে বজ্রধারী, হে ধনাধিপতি, সেই ধন তোমার দুই হাতে আমাদের দান কর।। (৩৪৬) হে ইন্দ্র, তিরশ্চী ঋষির আহ্বান শোন যে তোমাকে পরিচর্যা করছে। জলযুক্ত বীর্যবান্‌ মহান তুমি আমাকে ধনাদানে পূর্ণ কর।। (৩৪৭) হে ইন্দ্র, এই জলরাশি তোমার কিরণরাশিতে সৃষ্ট হয়েছে। হে শ্রেষ্ঠকর্মা এস। সূর্য যেমন কিরণরাশির দ্বারা আকাশকে পূর্ণ করেন তোমাকেও তেমনি ইন্দ্রিয়সামর্থ্য পূর্ণ করুক। [ইন্দ্রিয়শক্তি আত্মার, এইজন্য এরূপ বলা হোল]।। (৩৪৮) হে ইন্দ্র, সর্ববস্তু হরণকারী তোমার অশ্বরশ্মিগণের সঙ্গে তুমি কন্ব ঋষির এই সুন্দর স্তুতি লক্ষ্য করে এস। এই দ্যুলোকে বাস করেই তুমি দ্যুলোক শাসন কর; হে দ্যুলোকবাসী, তুমি দ্যুলোকেই থাক। (৩৪৯) হে স্তুতিপ্রিয় ইন্দ্র, সকল অভিষুত সোমযোগে তোমার উদ্দেশে উচ্চারিত সকল স্তুতি তোমাকে রথীর মত ঘিরে থাকে। গাভী যেমন তার বৎসকে ডাকে তেমনি এই স্তুতি তোমাকে লক্ষ্য করেই সম্যক্‌রূপে উচ্চারিত।। (৩৫০) শীঘ্র এস, এখনই পবিত্র ইন্দ্রবে স্তব করবো পবিত্র সামগানে। পবিত্র উক্‌থের দ্বারা শুদ্ধ সোমরসের দ্বারা বর্ধিত ইন্দ্র আনন্দিত হোন।। (৩৫১) যিনি অতি ধনশালী, যিনি ধনের দ্বারা দীপ্ত সমুজ্জ্বল; যে ধন তোমাদের জন্য (ইন্দ্র দান করেন) সেই নিষ্কাশিত সোমরূপ ধনসম্পদ, হে ইন্দ্র, হে অন্নপতি, তোমার আনন্দকারক হয়।।