Saturday, August 20, 2011

ঋগবেদ-সংহিতা : প্রথম মন্ডল : ৩ সূক্ত

অশ্বিদ্বয় প্রভৃতি দেবতাঃ। বিশ্বামিত্রের পুত্র মধুচ্ছন্দা ঋষি। গায়ত্রী ছন্দ।
সূক্ত - অশ্বিনা যজ্বরীরিষো দ্রবৎপাণী শুভস্পতী। পুরুভুজা চনস্যতম্।।১।।
অনুবাদ : ।।১।। হে ক্ষিপ্রপাণি, শুভকর্মপালক, বিস্তীর্ণ ভুজ বিশিষ্ট অশ্বিদ্বয় (১)! তোমরা যজ্ঞের অন্ন কামনা কর।

সূক্ত - অশ্বিনা পুরুদংসসা নরা শবীরয়া ধিয়া। ধিষ্ণ্যা বনতং গিরঃ।।২।।
অনুবাদ : ।।২।। হে বহুকর্মা, নেতা, ও বিক্রমশালী অশ্বিদ্বয়! অপ্রতিহত বুদ্ধির সঙ্গে আমাদের স্তুতি গ্রহণ কর।

সূক্ত - দস্রা যুবাকরঃ সুতা র্নাসত্যা বৃক্তবর্হিষঃ। আ যাতং রুদ্রবর্তনী।।৩
অনুবাদ : ।।৩।। হে দস্রদ্বয়! হে নাসত্যদ্বয় (২)! হে রুদ্রবর্ত্মন অশ্বিদ্বয়! মিশ্রিত সোমরস অভিষুত হয়েছে, ছিন্ন কুশে স্থাপিত হয়েছে, তোমরা এস।

সূক্ত - ইন্দ্রা যাহি চিত্রভানো সূতা ইমে ত্বায়বঃ। অন্বীভিস্তনা পূতাসঃ।।৪
অনুবাদ : ।।৪।। হে বিচিত্র দীপ্তিবিশিষ্ট ইন্দ্র! আঙুল দিয়ে অভিষুত নিত্যশুদ্ধ এ (সোমরস) তোমাকে কামনা করছে, তুমি এস।

সূক্ত - ইন্দ্রা যাহি ধিয়েষিতো বিপ্রজূতঃ সুতাবতঃ। উপ ব্রহ্মাণি বাঘতঃ।।৫
অনুবাদ : ।।৫।। হে ইন্দ্র! আমাদের ভক্তিদ্বারা আকৃষ্ট হয়ে, মেধাবীদের দ্বারা আহূত হয়ে অভিষবকারী ঋত্বিকের স্তোত্র গ্রহণ করতে এস। 

সূক্ত - ইন্দ্রা যাহি তুতুজান উপ ব্রহ্মাণি হরিবঃ। সুতে দধিষ্ব নশ্চনঃ ।।৬
অনুবাদ : ।।৬।। হে অশ্বযুক্ত ইন্দ্র! তরান্বিত হয়ে স্তোত্র গ্রহণ করতে এস; এ সোমাভিষবযুক্ত যজ্ঞে আমাদের ধারণ কর।

- ওমাসশ্চর্ষণীধৃতো বিশ্বে দেবাস আ গত। দাশ্বাংসো দাশুষঃ সূতম।।৭
অনুবাদ : ।।৭।। হে বিশ্বদেবগণ (৩)! তোমরা রক্ষক, মনুষ্যগণের পালক, তোমরা হব্যদাতা যজমানের অভিষুত সোম গ্রহণ করতে এস; তোমরাই যজ্ঞের ফলদাতা।

সূক্ত - বিশ্বে দেবাসো অপ্তুরঃ সুতমা গন্ত তুর্ণয়ঃ। উস্রা ইব স্বসরাণি।।৮
অনুবাদ : ।।৮।। যেরূপ সূর্যরশ্মি দিনে আসে, বৃষ্টিদাতা বিশ্বদেবগণ ত্বরান্বিত হয়ে সেরূপ অভিষুত সোমরসে আগমন করুন।

- বিশ্বে দেবাসো অস্রিধ এহিমায়াসো অদ্রূহঃ। মেধাং জুষন্ত বহ্নয়ঃ।।৯
অনুবাদ : ।।৯।। বিশ্বদেবগণ ক্ষয়রহিত ও সদা বর্তমান; তাঁরা অকল্যাণরহিত ও ধনবাহক; তাঁরা যেন ও যজ্ঞ সেবন করেন।

- পাবকা নঃ সরস্বতী বাজেভির্বাজিনীবতী। যজ্ঞং বষ্টু ধিয়াবসুঃ।।১০
অনুবাদ : ।।১০।। পবিত্রা, অন্নযুক্তযজ্ঞবিশিষ্টা, ও যজ্ঞফলরূপধনদাত্রী সরস্বতী (৪) আমাদের অন্নবিশিষ্ট যজ্ঞ কামনা করুন।

- চোদয়িত্রী সূনৃতানাং চেতন্তী সুমতীনাং। যজ্ঞং দধে সরস্বতী।।১১
অনুবাদ : ।।১১।। সুনৃত বাক্যের উৎপাদয়িত্রী, সুমতি লোকদের শিক্ষয়িত্রী সরস্বতী আমাদের যজ্ঞ গ্রহণ করেছেন।

- মহো অর্ণঃ সরস্বতী প্রচেতয়তি কেতুনা। ধিয়ো বিশ্বা বিরাজতি।।১২
অনুবাদ : ।।১২।। সরস্বতী প্রবাহিত হয়ে প্রভূত জল সৃজন করেছেন, এবং সকল জ্ঞান উদ্দীপন করেছেন।

টীকাঃ-
১। প্রকৃতির কোন্ দৃশ্যকে অশ্বিদ্বয় নাম দিয়ে প্রাচীন হিন্দুগণ উপাসনা করতেন? যাস্ক নিরুক্ততে সে বিষয়ে লিখেছেন "তৎ কৌ অশ্বিনৌ। দ্যাবা-পৃথিব্যৌ ইতি একে, অহোরাত্রৌ ইতি একে, সূর্যাচন্দ্রমসৌ ইতি একে। রাজানৌ পুণ্যকৃতোঁ ইতি ঐতিহাসিকাঃ।" যাস্কের নিজের মত যতদূর বুঝা যায় বোধ হয় অর্ধরাত্রির পর ও প্রাতঃকালের পূর্বে যে আলোক ও অন্ধকারে বিজড়িত থাকে তাই অশ্বিদ্বয়। ঊষার পূর্বে মিশ্রিত আলোক ও অন্ধকার যদি যমজদেব বলে উপাসিত হন তবে তাঁদের অশ্বী নাম দেওয়া হল কেন? এটি একটি বৈদিক উপমা মাত্র। সূর্যের আলোক আকাশে ধাবমান হয়, ঊষার আলোক আকাশে ধাবমান হয়, সে জন্য সে আলোক বাঁ রশ্মি সমূহকে ঋগ্বেদে সর্বদাই অশ্বি বলে বর্ণনা করা হয়েছে, এবং সূর্য ও ঊষাকে অশ্বযুক্ত বলে সম্বোধন করা হয়েছে। অশ্বিন্ শব্দেরও সেই অর্থ, অশ্বযুক্ত অর্থাৎ আলোকযুক্ত।

২। "দস্রা। শত্রুণামুপক্ষয়িতারৌ যদ্বা দেববৈদ্যত্বেন রোগাণামুপক্ষয়িতারৌ। অশ্বিনৌ বৈ দেবানাং ভীষজৌ ইতি শ্রুতেঃ।" সয়ণ। "নাসত্যা। অসত্যমনৃতভাষণং। তদ্রহিতৌ।" সায়ণ। দস্রা ও নাসত্য এ দুটি শব্দ সর্বদাই অশ্বিদ্বয় সন্বন্ধে প্রয়োগ হয়।

৩। "বিশ্বেদেবাস এতন্নামকা দেববিশেষাঃ!" সায়ণ।

৪। সরঃ অর্থ জল, সরস্বতীর প্রথম অর্থ নদী এতে সন্দেহ নেই; আর্যাবর্তে সরস্বতী নামে যে নদী আছে তাই প্রথমে সরস্বতী দেবী বলে পূজিত হয়েছিলেন। এক্ষণে গঙ্গা যেরূপ হিন্দুদের উপাস্যা দেবী, প্রথম হিন্দুদের পক্ষে সরস্বতী সেরূপ ছিলেন। অচিরে সরস্বতী বাগ্দেবীও হলেন। যাস্ক বলেছেন "তত্র সরস্বতী ইতি এতস্য নদীবদ্বেতাবচ্চ নিগমা ভবন্তি।" মূল ঋগ্বেদেও সরস্বতীর উভয় প্রকার গুণ লক্ষিত হয়। পুরাকালে সরস্বতী নদীতীরে যজ্ঞ সম্পাদন হত এবং মন্ত্র উচ্চারিত হত, ক্রমে সে সরস্বতী নদী সে পবিত্র মন্ত্রের দেবী ও বাগ্দেবী বলে পরিণত হলেন।

No comments:

Post a Comment